অবরোধ তুলুন, বলতেই মার যুবককে
বরোধ তোলার অনুরোধ করে অবরোধকারীদের হাতেই বেধড়ক মার খেলেন দুই যুবক।
বুধবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়া-ব্যান্ডেল মেন শাখার কোন্নগর স্টেশনে। স্টেশনের হকারদের হস্তক্ষেপে রক্ষা পান ওই দুই যুবক। কোন্নগরের নবগ্রাম হীরালাল পাল কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র তোলাকে কেন্দ্র করে গোলমালের জেরে এ দিন এসএফআই রেল অবরোধ করেছিল।
প্রহৃত সঞ্জিত দাস।
বছর কয়েক আগে উত্তর ২৪ পরগনার বামনগাছিতে অসুস্থ ছেলেকে কোলে নিয়ে লাঠি হাতে রেললাইনে নেমে অবরোধ তুলে দিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। এর পরেও সমবেত জনতার চাপে কয়েকটি জায়গায় অবরোধ উঠে যাওয়ার নজির রয়েছে। কিন্তু বুধবার অন্য চিত্র দেখল হুগলির কোন্নগর।
প্রহৃত এক যুবকের নাম সঞ্জিত দাস। বাড়ি কালনায়। কলকাতায় মিষ্টির দোকানে কাজ করেন তিনি। বুধবার দুপুরে বিশেষ কাজে বাড়ি ফেরার জন্য হাওড়া থেকে আপ ব্যান্ডেল লোকাল ধরেছিলেন। সেখান থেকে কাটোয়া লোকাল ধরে কালনায় যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কোন্নগরে ট্রেনটি দাঁড়ায়। তখনই শুরু হয় অবরোধ। প্ল্যাটফর্মে নেমে কিছু ক্ষণ পরে সঞ্জিত বিক্ষোভকারী বলেন, “এ বার অবরোধ তুলে ফেলুন। আমাদের তো যেতে হবে। আর কত ক্ষণ দাঁড়াব!” তাঁর দেখাদেখি অন্য এক যুবকও একই অনুরোধ নিয়ে এগিয়ে আসেন।
খাতায়-কলমে এসএফআইয়ের অবরোধ হলেও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সিপিএমেরও দলবল ছিল। কয়েক জন স্কুল শিক্ষক এবং শিক্ষিকাও ছিলেন তাঁদের মধ্যে। ওই দুই যুবকের মুখে অবরোধ তোলার কথা শুনে তাঁরা খেপে ওঠেন। কোন্নগরের একটি স্কুলের এক শিক্ষিকাকে বলতে শোনা যায়, শিক্ষাক্ষেত্রে গণতন্ত্র আক্রান্ত। তাই তাঁরা ট্রেন আটকে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এ সবের মধ্যেই অবরোধকারীদের একাংশ ওই দুই যুবকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এলোপাথাড়ি কিল, চড়, ঘুসি মারা হতে থাকে। প্ল্যাটফর্মে পড়ে যান সঞ্জিত। কয়েক জন হকার মারমুখী সিপিএম এবং এসএফআই কর্মীদের হাত থেকে তাঁকে উদ্ধার করেন। ঘটনার সময় পুলিশের দেখা মেলেনি। কিছু ক্ষণের মধ্যেই অবশ্য অবরোধকারীরা ফিরে যান। তার পরে রেল ও জেলা পুলিশ আসে। সঞ্জিত বলেন, “আমি তো কিছুই করিনি। শুধু বলেছিলাম একটু তাড়াতাড়ি ট্রেন ছেড়ে দিতে। আমি কোনও রাজনীতির মধ্যে নেই।”
জেলা এসএফআই নেতা দেবাশিস নন্দী অবশ্য প্রহৃত যুবককে মদ্যপ বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “এক জন মদ্যপ অবস্থায় উস্কানিমূলক কথা বলছিল। ছাত্রীদের কটূক্তি করছিল। আর একটি ছেলেও কটূক্তি করে। আমাদের ছেলেরা নিষেধ করায় তাঁদের সঙ্গে সামান্য ধাক্কাধাক্কি হয়। মারধরের কোনও ঘটনাই ঘটেনি।” অন্য দিকে, জেলা টিএমসিপি সভাপতি শুভজিৎ সাউয়ের প্রতিক্রিয়া, “ওদের মস্তিস্ক বিকৃত হয়েছে। তাই সাধারণ মানুষকেও ছাড়ছে না। নিজেরা কটূক্তিও করছেন।”
কিন্তু এ দিন কেন রেল অবরোধ করতে গেল এসএফআই?
সংগঠনের দাবি, টিএমসিপি-র ছেলেদের হাতে আক্রান্ত হয়ে তারা নবগ্রাম হীরালাল পাল কলেজে মনোনয়নপত্র তুলতে পারেননি। টিএমসিপি-র হামলায় তাঁদের এক ছাত্রী-সহ ৪ সমর্থক জখম হয়েছেন বলেও এসএফআইয়ের দাবি। অন্য স্কুলের এক শিক্ষিকাকেও ধাক্কাধাক্কি করা হয়। তাঁর স্কুটি ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। টিএমসিপি অবশ্য অভিযোগ মানেনি। তাদের পাল্টা দাবি, এসএফআইয়ের লোকজনই এক তৃণমূল নেতাকে মারধর করে। গত বারেও ওই কলেজে মনোনয়নপত্র তুলতে পারেনি এসএফআই। তার আগে অবশ্য দীর্ঘদিন এসএফআইয়ের হাতেই ছিল ছাত্র সংসদের ক্ষমতা। আগামী ২১ ডিসেম্বর সেখানে ২৭টি আসনে ভোট হওয়ার কথা।
এসএফআই নেতা দেবাশিস নন্দী বলেন, “আমাদের ছেলেমেয়েদের কলেজের ভিতরে এবং বাইরে বেধড়ক মারধর করা হয়। পুলিশ ছিল দর্শক। চার জন ছাত্রছাত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। এক জন এখনও ভর্তি।” ওই ঘটনার প্রতিবাদে দুপুর ২টো নাগাদ কোন্নগর স্টেশনে ট্রেন অবরোধ করে এসএফআই। সেখানেও সিপিএমের লোকজন সামিল হন। প্রায় ৪৫ মিনিট অবরোধ চলে।
টিএমসিপি নেতা শুভজিতবাবুর দাবি, “ভুয়ো পরিচয়পত্র দিয়ে কিছু ছেলেমেয়েকে মনোনয়নপত্র তুলতে পাঠিয়েছিল সিপিএম। স্বভাবতই কলেজ কর্তৃপক্ষ তা দেননি। এখন মারধরের মিথ্যা অভিযোগ করছে ওরা। ওরাই বরং কলেজের বাইরে তৃণমূলের স্থানীয় অঞ্চল সভাপতি অপূর্ব মজুমদারকে মারধর করছে। তাঁকে হাসপাতালেও নিয়ে যেতে হয়।” অপূর্ববাবুও এফআইআর দায়ের করেছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.