|
|
|
|
সিপিএম-আরএসপি দ্বিমত, ১টি আসন ঘিরে সঙ্কট ফ্রন্টে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আগরতলা |
আসন সমঝোতা নিয়ে বামফ্রন্টের মধ্যে ‘অনৈক্য’ ক্রমশ প্রকট হচ্ছে। ত্রিপুরায় ‘বাম ঐক্য’ তাই বড় প্রশ্নচিহ্নের মুখোমুখি। ফ্রন্টের বড় শরিক সিপিএম, ছোট শরিক আরএসপিকে গত বারের মতো দু’টি আসনও নয়, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে মাত্র একটি আসন ছাড়তে রাজি। অন্য দিকে, আরএসপি নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সিপিএমের প্রস্তাব মানা হবে না। তারা বরাবরের মতো এ বারও দু’টি আসনেই প্রার্থী দিতে চায়। বামফ্রন্টের বৈঠকে তা স্পষ্ট করেই জানিয়ে দেওয়া হবে। দলের প্রার্থীদের নাম কয়েক দিন পরেই জানানো হবে বলে দলের রাজ্য সম্পাদক সুদর্শন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন।
এ দিকে, আরএসপিকে আসন ছাড়া নিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিজন ধরের বক্তব্য অন্য রকম। রাজ্যের বিধানসভাগুলির এলাকা পুনর্বিন্যাসের কারণে পুরনো শালগড়া কেন্দ্রটি মিশে গিয়েছে পাশ্ববর্তী কাকড়াবন কেন্দ্রের সঙ্গে। শালগড়ায় আরএসপি-র প্রভাব রয়েছে, সেটা সিপিএমও স্বীকার করে। তবে বিজনবাবুর বক্তব্য, ‘‘কাকড়াবন সম্পূর্ণ ভাবেই সিপিএমের এলাকা হিসেবে পরিচিত। ফলে সিপিএমের পক্ষে কাকড়াবন কেন্দ্রটি ছাড়ার প্রশ্নই ওঠে না।’’ সে কারণেই আরএসপিকে এ বার বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম একটি আসন কম নেওয়ার জন্য বহু দিন আগেই অনুরোধ করেছে বলে বিজনবাবুর দাবি। আর ফ্রন্টে সঙ্কট? বিজনবাবুর কথায়, সিপিআই বা ফরোয়ার্ড ব্লকের সঙ্গে তো তাদের কোনও সমস্যা নেই। তিনি বলেন, ‘‘সিপিআইকে দু’টি, ফরোয়ার্ড ব্লককে একটি আসন ছাড়া হবে।’’
উল্লেখ্য, ১৯৭৮ সাল থেকে আরএসপি রাজ্যে দু’টি বিধানসভা আসনে প্রার্থী দিয়ে জয়ী হয়ে আসছে। এমনকী ১৯৮৮ সালে কংগ্রেসের জোট সরকারের আমলেও আরএসপি শালগড়া এবং আর কে পুর আসন দু’টি ধরে রাখতে সক্ষম হয়। আরএসপিকে দু’টির বদলে একটি আসন দেওয়ার প্রস্তাব সিপিএম কেন দিয়েছে, সেটা সুদর্শনবাবুর বোধগম্য নয়। আরও এক ধাপ এগিয়ে তিনি বলেন, “এ রাজ্যে বামফ্রন্টের ঐক্য ধরে রাখার দায়িত্ব কেবল আরএসপি-র নয়। এ ক্ষেত্রে বড় দল সিপিএমের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূণর্।”
বামফ্রন্টের ‘ঐক্যের’ প্রসঙ্গে বিজনবাবুদের অবস্থানও পরিষ্কার। তাঁরা ‘রাজনৈতিক বাস্তবতা’-র কথাই বারবার বলছেন। বিজনবাবু মনে করিয়ে দেন, গত বারের নির্বাচনে ফরোয়ার্ড ব্লকের ‘একগুণয়েমি’-র কথা। সে সময়ে ফরোয়ার্ড ব্লকের প্রস্তাব মতো আসন সংখ্যা সিপিএম দিতে অস্বীকার করায়, ফরোয়ার্ড ব্লক ফ্রন্ট ছেড়ে বেরিয়ে যায়। একাই নির্বাচনে লড়ে। একটিও আসন পায়নি। কিন্তু নির্বাচনের পরে ‘বোধদয়’ হয়, আবার ফ্রন্টে ফিরে আসে। বিজনবাবু বলেন, ‘‘এ বার আরএসপি যদি রাজ্যের ‘রাজনৈতিক বাস্তবতা’ না বুঝতে চায়, তবে তারা ফ্রন্টে থাকবে কি না তা আরএসপি নেতৃত্বই ঠিক করবেন।” বামফ্রন্ট বৈঠকে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে অবশ্য বিজনবাবু আশাবাদী। পশ্চিমবঙ্গে, বামফ্রন্টে সিপিএমের ‘দাদাগিরি’-তে অন্য শরিক দলের ‘ক্ষোভ’ বহু পরিচিত ও আলোচিত। ত্রিপুরাতে পরিস্থিতি ততটা জটিল না হলেও নির্বাচনের আগে মতান্তর প্রকাশ্যে চলে আসছে। এটা স্বীকার করেই সুদর্শনবাবু বলেন, ‘‘সিপিএম যদি শালগড়া-কাকড়াবনের পরিবর্তে অন্য কোনও আসন না ছাড়ে, সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি অনুযায়ী আরএসপিকেও ভাবতে হবে।” এই পরিস্থিতিতে, আসন সমঝোতা নিয়ে দু’পক্ষই নিজেদের অবস্থানে ‘অনড়’ থাকলে, ত্রিপুরায় বামফ্রন্টের ‘ঐক্যে’ ভাঙন অবশ্যম্ভাবী। তবে শেষ পর্যন্ত এই ভাঙন এড়াতে ফ্রন্টের দুই শরিকই সক্রিয় হবে বলে বামনেতাদের আশা। |
|
|
|
|
|