হিন্দমোটর সংস্থা একটি অ্যাম্বাসাডর গাড়ি তৈরি করেছিল রবিশঙ্করের জন্য। সেই গাড়ি বিমানে চাপিয়ে দিল্লিতে পাঠানো হয়েছিল রবিশঙ্করের কাছে।
সড়ক পথে এত দূর যেতে পাছে সে গাড়ি কিছু পুরনো দেখায়!
রবিশঙ্করের অনুরোধে ওই অ্যাম্বাসাডর গাড়িটি দিল্লি পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হয়েছিল যাঁকে, সল্টলেকে ডিএল ব্লকের বাড়িতে বসে স্মৃতির ঝাঁপি খুললেন তিনি।
কলকাতায় তিনি রবিশঙ্করের বহু অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ছিলেন এক সময়। বললেন, “১৯৭৬ সালে মার্বেল প্যালেসে মোমবাতির আলোয় সারা রাত ওঁকে সেতার বাজাতে অনুরোধ করি। তবলায় থাকার কথা ছিল কিষেণ মহারাজের। শুনেই উনি প্রশ্ন করলেন, এর আগে কোন কোন শিল্পীর অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন?”
উস্তাদ আলাউদ্দিন খান সাহেব, উস্তাদ আমজাদ আলি খান সাহেব, আলি আকবর খান একের পর এক কৃতীদের নাম নিতে শুরু করলেন রবিন পাল, অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা।
শুনে রবিশঙ্কর বলে উঠলেন, “ও বাবা, এ তো আলুভাইকেও (আলাউদ্দিন খান) শুনিয়ে দিয়েছে কলকাতার লোককে। তবে আর আমি বাদ যাই কেন!”
ওই উদ্যোক্তার কথায়, “নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে। নেতাজি ইন্ডোরে সারা রাত ধরে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত হবে। থাকবেন বিসমিল্লা খান, ভীমসেন যোশী, বিরজু মহারাজ, সামতা প্রসাদ, আল্লারাখা, কিষেণ মহারাজ-সহ বহু গুণীজন। রবিশঙ্কর রাজি হচ্ছেন না। কেন? বিলায়েত খান সাহেবের সঙ্গে তিনি বাজাবেন না। যদিও বা বাজান, তা হলে সবার শেষে। বিলায়েত খান আবার চান, সব শেষে লোকে তাঁর বাজনাই শুনুক। অনেক অনুরোধেও রাজি আর করানো যায় না রবিশঙ্করকে। পরে তাঁকে বোঝানো হয়, রাত দশটার পরে মানুষের শরীর এলিয়ে পড়ে। ভাল করে সুর পৌঁছয় না
কানে। চোখে ঘুম জড়ায়। ঘুম জড়ানো কানে লোকে বিলায়েত খানকেই শুনুক। রবিশঙ্করকে শুনুক টানটান থেকে, খুবই মনোযোগী হয়ে। এই ব্যাখ্যায় শেষ পর্যন্ত ওই অনুষ্ঠানে বাজাতে রাজি হয়ে গেলেন রবিশঙ্কর।” একটু থেমেই তিনি আবার বলতে শুরু করলেন, “ওই দিন বিধানসভায় বাজেট ঘোষণা ছিল। প্রাক্তন রাজ্যপাল, সঙ্গীত-পাগল নুরুল হাসান রাজভবনে উদ্যোক্তাদের ডেকে পাঠিয়ে অনুরোধ করেন, ‘প্রোগ্রাম থোড়া লেট সে শুরু কর না, অ্যাসেম্বলি মে ভাষণ দেনা হ্যায়’। নেতাজি ইন্ডোরে সে দিন অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল প্রায় ৪৫ মিনিট দেরিতে।” |