কেউ নিমন্ত্রণ করলে জেনে নিতেন, ইলিশ থাকছে তো
হুট করে না বলেই হাজির হয়ে যেতেন বন্ধু-প্রতিম শিল্পীর বাড়িতে। কখনও আবার বিমানে পাশের আসনে বসা যুবা-শিল্পীকে শিখিয়ে দিতেন কী ভাবে কাঁটা-চামচ ধরতে হয়।
নতুন সেতার বানানোর জন্য যেমন তাঁকে কলকাতা টানতো, টানতো ইলিশও। মাংসের ঝোল খেতেন কব্জি ডুবিয়ে। পণ্ডিত রবিশঙ্করের সঙ্গে যাঁরাই সঙ্গত করেছেন, মঞ্চে এবং মঞ্চের বাইরে তাঁর হৃদয়ের বিশাল ব্যাপ্তির হদিশ পেয়েছেন তাঁরা। বুধবার কলকাতার দুই প্রান্তে বসে এমনই দুই তবলিয়া শঙ্কর ঘোষ এবং অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় স্মৃতিচারণ করলেন রবিশঙ্করের।
শঙ্করবাবু জানান, আমেরিকা থেকে জাপান, সর্বত্র স্থানীয় জনপ্রিয় খাবার এক বার হলেও চেখে দেখতেন রবিশঙ্কর। কিন্তু বাঙালি-খানা ছিল ওঁর প্রথম পছন্দ। ইলিশের পরম ভক্ত ছিলেন। কেউ নিমন্ত্রণ করলে জেনে নিতেন, “ইলিশ থাকছে তো!” শঙ্করবাবুর কথায়, “প্রাচী সিনেমার পাশে জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের বাড়িতে থাকতাম। রবুদা ওই বাড়িতে যেতেন মাঝেমধ্যে। আমার রেওয়াজের শব্দ পৌঁছত তাঁর কানেও।” ১৯৫৫ সালে রবিশঙ্করের সঙ্গে রেওয়াজ শুরু করার ১৪ বছর পরে দু’জনে এক সঙ্গে প্রথম মঞ্চে অনুষ্ঠান করেন।

শঙ্কর ঘোষ

অনিন্দ্য চট্টেপাধ্যায়
বিশ্বের প্রায় সব ক’টি মহাদেশে পাঁচশোরও বেশি অনুষ্ঠানে রবিশঙ্করের সঙ্গে সঙ্গত করেছেন শঙ্করবাবু। স্মৃতি হাতড়ে বলেন, “সেটা ১৯৭১ সাল। বেলজিয়ামে অনুষ্ঠান। সকালে রেওয়াজের সময় এক রকম তালে তবলা বাজিয়েছিলাম। সন্ধ্যায় অডিটোরিয়ামে সবে সেতারে সুর তুলেছে রবুদা। আমি নতুন একটা তাল বাজাতে শুরু করলাম।” অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন রবিশঙ্কর। তার পরে নতুন তালেই চলল বাজনা। শঙ্করবাবুর মতে, এ ভাবেই মঞ্চে নতুন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতেন তাঁরা।
দেশ-বিদেশে সারা বছর ঘুরতেন রবিশঙ্কর। কিন্তু সেতার তৈরি করাতেন কলকাতার কারিগরকে দিয়েই। তন্তুজের খাদির জহরকোটও ছিল পছন্দ। শঙ্করবাবু বলেন, “বছর দশেক আগে আমি তখন স্পেনে। এক দিন সন্ধ্যায় অনুষ্কাকে নিয়ে আমার বেহালার বাড়িতে হাজির রবুদা। দেখা হল না। আমাকে বলেছিল, ফের আসব। তা আর হল না।”
দেশ-বিদেশে তাঁর সঙ্গে প্রায় ৬০ বার মঞ্চে সঙ্গত করেছেন তবলিয়া অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। ৮০ সালে প্রথম দুর্গাপুরে। অনিন্দ্যবাবু বলেন, “আগের দিন কলকাতায় লালা শ্রীধরের বাড়িতে ডেকেছিলেন। সেখানে বাজাতে বললেন। পরের দিন মঞ্চে যখন বাজাতে বসলাম, বেশ নার্ভাস লাগছিল। উনি সেটা বুঝে এমন ভাবে সাহায্য করতে শুরু করলেন, সব টেনশন দূর হয়ে গেল। সে দিন পুরিয়া ধনশ্রী বাজিয়েছিলেন পণ্ডিতজি। কানে আজও সে সুর লেগে রয়েছে।” তারও আগে লন্ডনে টানা তিন ঘণ্টা একেবারে সামনের আসনে বসে তাঁর বাজনা শুনেছিলেন রবিশঙ্কর।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.