ডিজিটাল সিগনেচার
নেটের সই
কাগজে-কলমে কাজের সময় হাতেই সইসাবুদ করি আমরা। তা সে ব্যক্তিগত চিঠিতেই হোক বা অফিস-ব্যবসার নথিতে। কারণ, ওই সই-ই নিশ্চিত করে যে, সেই চিঠি বা নথি আমারই পাঠানো। কিংবা সেখানে যা লেখা আছে, তার দায় পুরোপুরি আমার।
কিন্তু এখন তো অনলাইনেই বেশি চিঠি-পত্তর (ই-মেল) পাঠাই আমরা। টেন্ডারের দরপত্রও চাওয়া হয় নেটে। অনলাইনে জমা দিই আয়করের রিটার্ন। আর এই সব ক্ষেত্রেই ডিজিটাল সিগনেচার কেনা থাকলে আধুনিক ব্যবস্থার সঙ্গে আবার কাগজ সই করে সনাতন ডাকে পাঠানোর দায় থাকে না। ঠিক সেই কারণেই ডিজিটাল সিগনেচার সম্পর্কে দু’চার কথা জেনে রাখা জরুরি।

ডিজিটাল সিগনেচার কী?
সহজ করে বললে, আপনার বৈদ্যুতিন সই। তবে খাতায়-কলমে সইয়ের সঙ্গে এর ফারাক বিস্তর। কারণ, সেখানে যেমন আপনি একান্ত নিজস্ব ধাঁচে নাম লিখতে পারেন, এখানে কিন্তু তা নয়। এ ক্ষেত্রে বরং পাঠানো চিঠি বা নথির একটি নির্দিষ্ট জায়গা চিহ্নিত থাকে সইয়ের প্রমাণ হিসেবে। ইন্টারনেট মারফত নথি যাঁর কাছে পৌঁছবে, নির্দিষ্ট জায়গাটিতে ‘ক্লিক’ করলেই তা যে আপনারই পাঠানো তার প্রমাণপত্র পেয়ে যাবেন তিনি । দেখা যাবে কোন সংস্থা থেকে ওই সই কেনা, সইয়ের বিশ্বাসযোগ্যতার (অথেন্টিকেশন) প্রমাণ ইত্যাদি।

সইয়ের ব্যবহার কোথায়?
(১) সব সরকারি দফতরে বৈদ্যুতিন মাধ্যমে দরপত্র দেওয়া, আবেদনপত্র পূরণ করা, বিদেশে ব্যবসা করার আবেদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ডিজিটাল সিগনেচার বাধ্যতামূলক।
(২) ডাক্তার, অ্যাডভোকেট, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ইত্যাদি বিভিন্ন পেশায় যুক্ত যে-সব করদাতার বার্ষিক আয় ১৫ লক্ষ টাকার বেশি এবং যাঁদের আয়কর আইনের ৪৪এবি ধারায় অডিট করাতে হয়, তাঁদের জন্যও এই সই বাধ্যতামূলক। তা ছাড়াও এর আওতায় রয়েছে বছরে ৬০ লক্ষ টাকার বেশি আয় করা সংস্থা।
চাকরিজীবী, পেনশনভোগী এবং সুদ থেকে আয় আছে এমন কেউ ছাড়া বাকি সকলের ক্ষেত্রে করযোগ্য আয় বছরে ১০ লক্ষ টাকার বেশি হলে, অনলাইনে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক। তবে সে ক্ষেত্রে ডিজিটাল সিগনেচার না-থাকলেও চলে। তবে চাইলে যে কোনও আয়ের ক্ষেত্রেই রিটার্ন জমা দিতে এই সই ব্যবহার করতে পারেন আপনি। না-হলে অবশ্য নেটে পাঠানো তথ্য যে আপনারই পাঠানো তা প্রমাণ করতে আপনাকে আবার সব কাগজ সই করে ডাক মারফত পাঠাতে হবে।

খরচের খতিয়ান... বিস্তারিত

(৩) ব্যক্তিগত ই-মেল পাঠানোর সময়েও সুরক্ষার খাতিরে এই সই ব্যবহার করেন অনেকে। তা ছাড়া, বৈদ্যুতিন মাধ্যমে লেনদেন, প্রোগ্রামিং বা কোড লেখার সময়ে নিজের নাম দেওয়া ইত্যাদির জন্যও ডিজিটাল সিগনেচারের ব্যবহার রয়েছে।
(৪) ২০০০ সালের কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি আইন মেনে ধীরে ধীরে বিভিন্ন কাজে ডিজিটাল সিগনেচারের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার কথা ভাবা হচ্ছে। কেন্দ্রের ই-গভর্ন্যান্স প্রকল্পের অংশ হিসেবে কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের এমসিএ২১ আইন মেনে সমস্ত ধরনের বৈদ্যুতিন লেনদেনেই (ই-টেন্ডারের দর দেওয়া, মন্ত্রকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে) এই সই ব্যবহার বাধ্যতামূলক।

কাদের জন্য?
যে কেউই এই সই কেনার আবেদন করতে পারেন। তা সে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হোক বা কোনও ব্যক্তি। ব্যবহার করতে পারেন অফিসের বা ব্যক্তিগত কাজে।

বিনা পয়সায় সই
যাঁদের ব্যবসা থেকে আয় গত আর্থিক বছরে দু’কোটির নীচে ছিল, তাঁদের অবশ্য বিনা পয়সায় ডিজিটাল সিগনেচার দেওয়ার ব্যবস্থা শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গের বাণিজ্য কর দফতর। তা বিলির কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। আপাতত এই সুবিধা এক বছর বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।

এমনিতে পাব কোথায়?
• দেশে মোট সাতটি সংস্থাকে এই ডিজিটাল সিগনেচার দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছে কন্ট্রোলার অফ সার্টিফিকেশন এজেন্সিজ (সিসিএ)। এই সাত সার্টিফায়িং অথরিটি বা সিএ-র অধীনে আবার কাজ করে বিভিন্ন রেজিস্ট্রেশন অথরিটি (আরএ)। তাদের মাধ্যমে ডিজিটাল সিগনেচার পেতে পারেন আপনি। ইচ্ছে হলে সরাসরি যেতে পারেন মূল সাতটি সংস্থার কোনও একটিতেও।
• কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য শুধুমাত্র মূল সংস্থার কাছ থেকেই সই কিনতে পারবেন আপনি। পরে তা নিয়ে আলোচনাও করব আমরা।
• সব ক্ষেত্রেই সই কিনতে হবে টাকা দিয়ে।
• কর্মীদের জন্য আবার নিজেরাই এই পরিষেবা দেয় সেন্ট্রাল এক্সাইজ অ্যান্ড কাস্টমস (শুল্ক) দফতর।
এদের প্রত্যেকের সম্পর্কেই বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যাবে কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের ওয়েবসাইট ()-এ।

তিন রকমের সই
মোট তিন ধরনের সই রয়েছে। নিজের প্রয়োজন বুঝে তার মধ্যে থেকে সঠিকটি বেছে নিতে হবে আপনাকে
• ক্লাস ওয়ান সিগনেচার শুধুমাত্র ই-মেল থাকলেই এই সই পেতে পারেন আপনি। তবে এই সইয়ের আইনি স্বীকৃতি নেই। তাই কোনও সরকারি কাজে এটি ব্যবহার করা যায় না।
• ক্লাস টু সিগনেচার আয়কর রিটার্ন দাখিল-সহ বিভিন্ন কাজে এই সই ব্যবহার করা যাবে। এটি আইন স্বীকৃত। তবে, সরকারি ই-টেন্ডার ভরার সময়ে তা ব্যবহার করা যাবে না। যে কোনও রেজিস্ট্রেশন অথরিটি (আরএ) আপনার জন্য এই সই তৈরি করে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্যান কার্ড এবং অন্যান্য নথি থেকে আপনার পরিচয় মিলিয়ে নেবে তারা। আপনি নিজে হাজির না-থাকলেও তা আটকাবে না।
• ক্লাস থ্রি সিগনেচার এটিই সর্বোচ্চ শ্রেণির ডিজিটাল সিগনেচার। ই-টেন্ডারে দর দিতে এই সই থাকা বাধ্যতামূলক। অন্য সমস্ত কাজেও তা ব্যবহার করা যেতে পারে। রেজিস্ট্রেশন অথরিটিগুলির মাধ্যমে এই সইয়ের জন্য আবেদন করতেই পারেন। কিন্তু আপনাকে তা হাতে তুলে দিতে পারে একমাত্র সরকার স্বীকৃত সাত সংস্থাই। অনেক ক্ষেত্রেই নথি জমা দেওয়ার সময় গ্রাহককে সশরীরে হাজির হতে হয় সংস্থার কাছে।

লাগবে কত দিন?
আবেদন করার পর তিন থেকে সাত দিনের মধ্যেই সংস্থার কাছ থেকে সই হাতে পেয়ে যাবেন আপনি। অনেক ক্ষেত্রে অবশ্য তা পেয়ে যেতে পারেন আরও আগেই।

মেয়াদ কত দিন?
সাধারণত ডিজিটাল সিগনেচার ব্যবহার করা যায় এক থেকে দু’বছর। তার পর তা নবীকরণ করতে হবে।

নিরাপদ সই
• সফটওয়্যার হিসেবে হাতে আসা সই রাখতে পারেন ইউএসবি ক্রিপ্টো টোকেন/স্টিক কিংবা সিডি-তে।
• সিডি-তে আসা সই অবশ্য নকল (কপি) করা সহজ। তাই এ ক্ষেত্রে বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করা ভীষণ ভাবে জরুরি।
• তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ ইউএসবি স্টিক-এ ভরা সই। কারণ, পাসওয়ার্ড দিয়ে খুলে তা ব্যবহার করতে হয়। অনেক সময়ে সঙ্গে থাকে সইয়ের সফটওয়্যার ভরা সিডি-ও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.