ভাগীরথীর পাড় থেকে কাটোয়া শহরের সেচ দফতরের বাঁধ মাত্র ১০০ মিটার। প্রতিদিনই ভাঙছে ভাগীরথীর পাড়। ভাঙনের জন্য বেশ কিছু জায়গায় ধস নেমেছে। সেটা যে ‘বিপজ্জনক’, তা স্বীকার করে নিয়েছে সেচ দফতর। ঠিকা সংস্থাকে গত জুলাইয়ে সেই পাড় বাঁধানোর নির্দেশ দেয় সেচ দফতর। চার মাস পরে শুরু হয়েছে সেই কাজ।
কাটোয়া শহরের দেবরাজ ঘাট থেকে শাঁখাই ঘাট পর্যন্ত এরকম ‘বিপজ্জনক’ অবস্থা অনেক জায়গাতেই। তাই ওই জায়গায় ভাঙন রোধ করতে উদ্যোগী হয়েছে সেচ দফতর। দফতর সূত্রে খবর, তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় সেচ দফতরকে চিঠি লিখে জানান, কাটোয়া শহরের ভিতর শাঁখাইঘাট থেকে দেবরাজঘাট পর্যন্ত ভাগীরথীর ভাঙনে বিপর্যস্ত। অপর একটি চিঠিতে তিনি লেখেন, দেবরাজঘাট থেকে মড়িঘাট পর্যন্ত নদীর পাড় ধসের জেরে বিপজ্জনক চেহারা নিয়েছে।এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তৎকালীন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইঞাকে অনুরোধ করেন রবীন্দ্রনাথবাবু।
ওই চিঠি পাওয়ার পর বর্ধমানের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়র অশোক ভট্টাচার্য-সহ জেলার সেচ কর্তারা সরেজমিনে তদন্তে আসেন। রিপোর্টে তাঁরা জানান, ভাগীরথীর তীরে কাটোয়া শহর কাযর্র্ত ঝুলে রয়েছে। ভাগীরথীর পাড়ও দ্রুত ভাঙছে। কাটোয়া শহরকে ভাগীরথীর গ্রাস থেকে রক্ষা করতে ভাঙন রোধ করা দরকার। |
এর পরেই প্রাক্তন সেচমন্ত্রী মানসবাবু বর্ষার সময়ে দেবরাজঘাট থেকে মড়িঘাট পর্যন্ত ৭২০ মিটার পাড় বাঁধানোর জন্য ১ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা ও শাঁখাইঘাট থেকে দেবরাজঘাট পর্যন্ত পাড় বাঁধানোর জন্য ২ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা অনুমোদন করেন। বর্ধমান সেচ দফতর গত জুলাইয়ে কাজ শুরুর জন্য ঠিকাদার গোষ্ঠীকে নির্দেশ দেয়। অথচ কাজ শুরু হল চার মাস পরে। জেলা সেচ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “দেবরাজঘাট থেকে মড়িঘাট পর্যন্ত ভাগীরথীতে বোল্ডার ফেলার কাজ পুজোর আগেই শেষ করা হয়েছে। এখন জল কমতেই ফের কাজ শুরু করা হয়েছে।”
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নয়ের দশকের প্রথম দিক থেকে ধাপে ধাপে কাটোয়া শহরের হরিসভাপাড়ার বল্লভপাড়া ঘাট লাগোয়া ভাগীরথীর পাড় ইট দিয়ে বাঁধানো হয়। ভাঙনের জেরে সেখানে ধস নেমেছে। এখন সেই সব ইট তুলে দিয়ে জিও ফেব্রিক চাদর পাতা হচ্ছে। তার উপর বোল্ডার ফেলে পাড় বাঁধানোর কাজ চলছে। একই সঙ্গে প্রায় ন’টি স্নান ঘাটেরও সংস্কার করা হবে বলে সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
সেচ দফতরের কাটোয়ার সহকারী বাস্তুকার প্রদীপকুমার দাস মঙ্গলবার দেবরাজঘাট থেকে শাঁখাই ঘাট অবধি অঞ্চল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, “শাঁখাইঘাট থেকে সেচ দফতরের দূরত্ব মাত্র ১০০ মিটার। আবার পুরনো পূর্বাচল সিনেমার কাছে পাকা রাস্তাটিও ধসে আক্রান্ত।” তাই সেচ দফতর এই ১০২০ মিটার দীর্ঘ ভাগীরথী পাড়ের কাছে প্রায় ৩ মিটার লম্বা অ্যালুমিনিয়াম তার দিয়ে ক্রেট বানাচ্ছে। এরকম প্রায় ৫৫০০টি ক্রেট বানানো হবে। তারপর পাথর দিয়ে ‘গার্ড ওয়াল’ তৈরি করে জিও ফেব্রিকের উপর বোল্ডার দিয়ে পাড় বাঁধানো হবে। কাটোয়ার সহকারী বাস্তুকার বলেন, “জিও ফেব্রিক চাদর থাকার জন্য মাটিতে ধস নামার সম্ভাবনা অনেক কম থাকবে।” |