বর্ধমানে গিয়ে নিজের সংগঠনের লোকজনের হাতেই নিগৃহীত হলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পন্ডা। যদিও তিনি পুলিশে কোনও অভিযোগ জানাননি। এমনকী পরে নিগ্রহের কথাও অস্বীকার করেন।
বুধবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠনের একটি বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিতে গিয়েছিলেন শঙ্কুদেব। কিন্তু টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি বা ছাত্র সংসদের সভাপতিকে সেখানে ডাকা হয়নি। বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলকাতায় ফেরার পথে বর্ধমানেরই নবাবহাটের কাছে নেতার গাড়ি আটকানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, টিএমসিপি-র কিছু নেতা-কর্মী গাড়িতে ধাক্কাধাক্কি করেন।
রাতে অবশ্য শঙ্কুদেব দাবি করেন, “এমন কিছু ঘটেনি। কেউ বিক্ষোভ দেখাননি। আমি দিব্যি শক্তিগড়ের ল্যাংচা খেয়ে কলকাতা চলে এলাম।” কিন্তু নিগ্রহের কারণ যে ছিল, তা বেশ কিছু ছাত্রনেতার কথায় পরিষ্কার। বর্ধমান শহর টিএমসিপি-র এক পদাধিকারী এবং ছাত্র সংসদের কয়েক জন নেতার অভিযোগ, আগাম খবর না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিতে এসেছিলেন শঙ্কুদেব। তাঁর নিজের গোষ্ঠী ছাড়া অন্যদের ডাকা হয়নি। |
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি অশোক রুদ্রের আক্ষেপ, “এ দিনের কর্মসূচির ব্যাপারে আমায় কিছুই জানানো হয়নি।” শঙ্কুদেবের গাড়ি আটকানো প্রসঙ্গে অবশ্য তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। এ দিন শঙ্কুদেব যে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিতে গিয়েছিলেন, তার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় টিএমসিপি সমর্থক ছাত্রছাত্রীদের খারাপ ফলের প্রতিবাদ জানানো। পরীক্ষা বিভাগের কিছু সিপিএম-সমর্থক কর্মী দুর্নীতি করে এসএফআইয়ের ছেলেমেয়েদের বেশি নম্বর পাইয়ে দিচ্ছেন বলে তাঁদের অভিযোগ। অথচ টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সভাপতি নির্ভীক বন্দ্যোপাধ্যায় ডাক পাননি।
এ দিন রাজবাটি প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ সমাবেশে শঙ্কুদেব দাবি করেন, পরীক্ষা বিভাগের বেশ কিছু কর্মী দুর্নীতিতে জড়িত। এসএফআই সমর্থক বা সিপিএম নেতাদের ছেলেমেয়েদের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ঢালাও নম্বরও দেওয়া হচ্ছে। এক জনের খাতা ‘রিভিউ’ করে ৩৬ নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সিপিএম সমর্থক এক দল পরীক্ষক বেছে-বেছে টিএমসিপি-র ছেলেমেয়েদের কম নম্বর দিচ্ছেন। তাঁদের দাবি, এই ‘ধারাবাহিক দুর্নীতি’র তদন্ত হোক। পরীক্ষায় অন্তঃ ও বহির্বিভাগীয় পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হোক।
পরীক্ষা বিভাগ অবশ্য এই সব অভিযোগে আদৌ আমল দিচ্ছে না। পরীক্ষা নিয়ামক সুকুমার মুখোপাধ্যায় ও উপ-পরীক্ষা নিয়ামক রামবিলাস মহাপাত্রের বক্তব্য, “৩৬ কেন, ৫২ নম্বর পর্যন্ত বাড়ার ঘটনাও আমাদের এখানে ঘটেছে। তবে যে যা-ই বলুন, নিরপেক্ষতা ও গোপনীয়তা রক্ষা করেই সব ফল প্রকাশ করা হচ্ছে।” উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার বলেন, “দুর্নীতি কে বা করা করেছেন, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতারা তা জানাননি। তাঁরা পরীক্ষায় ফল খারাপ হওয়ার অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন। দরকারে সমস্ত কিছুরই তদন্ত করা হবে।”
তবে তার আগে আপাতত ঘর সামলাতে হবে টিএমসিপি-কে। কারণ রাজ্য সভাপতির সমাবেশে ডাক না পেয়ে আজ, বৃহস্পতিবার নতুন করে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে আর এক পক্ষ। ছাত্র সংসদের সভাপতি নির্ভীক বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের খারাপ ফলের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার আমরা বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া ও হুগলির ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বিক্ষোভ দেখাব।” |