মনোজিৎ বিশ্বাস একশো শতাংশ দৃষ্টিহীন। কৃষ্ণনগর সরকারি মহাবিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনার্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মনোজিৎ ২০০৯-এর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ৬৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। সাম্মানিক স্নাতক স্তরের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষাতেও তিনি যথেষ্ট ভাল করেন। কিন্তু প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্দিষ্ট ন্যাশনাল ডিজাবল পেনশন স্কীমের ভাতা পায় না সে। কেন? মনোজিৎ বলেন, “৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধকতা ও বিপিএল তালিকায় নাম থাকলে ওই টাকা পাওয়া যায় না। আমরা দরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও বিপিএল তালিকাভুক্ত নই।” শুধু মনোজিৎ নন, জেলার অনেক প্রতিবন্ধী তাঁদের প্রাপ্য সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
প্রতিবন্ধী শংসাপত্র পেতে গেলেও আজকাল দালাল ধরতে হয়। তাই অনেক দরিদ্র প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেটই পাচ্ছেন না। অনেক আবার টাকা দিয়ে অসাধু উপায়ে সার্টিফিকেট হাতিয়ে নিচ্ছেন। নদিয়া জেলা প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি স্বপন ভৌমিক বলেন, “সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য একটা দালালচক্র গজিয়ে উঠেছে। তাদের দারস্থ না হলে সার্টিফিকেট পাওয়া সম্ভব নয়।” এছাড়াও এনআরইজিএ প্রকল্পে নিয়মানুসারে প্রতিবন্ধীরাও জব কার্ড পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু বাস্তবে তাঁরা তা পাচ্ছেন না। স্বপনবাবুর কথায়, “জেলার ৪০ হাজার প্রতিবন্ধীর সিংহভাগেরই জব কার্ড নেই। যাদের রয়েছে তাঁরা আবার কাজ পান না।” এ ছাড়াও জেলা সমাজকল্যাণ দফতরে বার বার আবেদন করেও প্রতিবন্ধীরা হুইল চেয়ার-সহ অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে মত স্বপনবাবুর।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীরাও সাধারণ স্কুলে পড়াশুনো করবে। কিন্তু তাদের সাহায্যের জন্য নিয়োজিত থাকবেন একজন স্পেশাল এডুকেটর। কিন্তু অভিযোগ জেলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্পেশাল এডুকেটর নেই। ব্লাইন্ড পার্সনস অ্যাসোসিয়েশনের মনোজিৎ বিশ্বাস বলেন, “প্রয়োজনের তুলনায় স্পেসাল এডুকেটরের সংখ্যা নগন্য। তার উপর প্রয়োজনীয় উপকরনের অভাব। তাই প্রকল্পটি চালু রয়েছে খাতায় কলমে।” জেলা শাসক অভিনব চন্দ্রা বলেন, “আমরা জেলা থেকে প্রয়োজনমত স্পেশাল এডুকেটর নিয়োগ করতে পারি না। এই প্রকল্পের নানা অসুবিধার কথা আমরা বিকাশ ভবনকে জানিয়েছি। এখনও পর্যন্ত সেখান থেকে কোনও নির্দেশ পাই নি।” |