প্রতিবন্ধকতাকে হেলায় হারিয়ে ধানতলার যুবক নির্মলচন্দ্র সিংহ আজ ক্রীড়াক্ষেত্রে সফল একটি নাম। বছর ছত্রিশের যুবক নির্মলবাবু ৩ বছর বয়সেই চলৎশক্তি হারান। কিন্তু মনের জোর হারাননি। সেই অদম্য ইচ্ছাই তাঁকে চলতি বছরের অগস্ট মাসে হংকংয়ে অনুষ্ঠিত বিশ্ব যোগাসন প্রতিযোগিতায় রুপো এনে দিয়েছে। গত বছর তিনি জেতেন সোনা। রাজ্যস্তরেও জিতেছেন বহু খেতাব।
নির্মলবাবুর সাফল্যের পথটা অবশ্য মোটেও কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। নির্মলবাবূুর মা পুতুলরানিদেবী বলেন, “তিন বছর বয়সে ওর হঠাৎ পেটের অসুখ দেখা দেয়। সেই সঙ্গে জ্বর। ডাক্তার দেখিয়ে কাজ না হওয়ায় কলকাতায় নিয়ে যাই। স্বামী দোরজির কাজ করেন। কোনওরকমে দিন গুজরান হয়। তাই ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারিনি। সেই থেকেই হাঁটার শক্তি হারায় ছেলেটা।” |
তবে শারীরিক অসুবিধা নির্মলবাবুকে দমাতে পারেনি। বরং তাঁর কথায়, “প্রতিবন্ধী হওয়ার জন্যই কিছু একটা করতে চেয়েছিলাম। তাই বই কিনে শুরু করি যোগব্যায়াম। প্রশিক্ষক বলতে কেউ ছিলেন না। মাঝেমধ্যে দূরদর্শনে বিভিন্ন যোগ ব্যায়ামের অনুষ্ঠান দেখতাম।” কার্যত একার চেষ্টায় নির্মলবাবু আজ যোগব্যায়ামে জাতীয় পর্যায়ে এক পরিচিত নাম। যোগব্যায়াম ছাড়া ২০০০ ও ১৯৯২ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় হুইল চেয়ার দৌড়ে পুরস্কারও পান তিনি। এখন তাঁর লক্ষ্য ২০১৬ সালে ব্রাজিলের রিও-তে অনুষ্টিতব্য অলিম্পিকে অংশগ্রহণ। পাশাপাশি চলেছে পড়াশুনাও। ১৯৯৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিকমে প্রথম বিভাগে স্নাতক। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকেও ঝকঝকে রেজাল্ট। রয়েছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণও।
এ হেন সফল ক্রীড়াবিদের অবস্থা নুন আনতে পান্তা ফুরনোর মতো। জোটেনি সরকারি চাকরি। মেলেনি সরকারি সাহায্যও। গৃহশিক্ষকতা ও কয়েকজনকে যোগব্যায়াম শিখিয়ে কোনওরকমে দিন গুজরান করেন তিনি। এ হেন আর্থিক অনটন তাঁর অলিম্পিকে যোগ দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছে। নির্মলবাবুর তিনি বলেন, “জানি না অলিম্পিকে যাওয়ার টাকা কীভাবে জোগাড় করব।”
রানাঘাট-২ এর বিডিও সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “নির্মলবাবু খেলাধুলোর পাশাপাশি লেখাপড়াতেও কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছেন। ওঁর কোনও আর্থিক সাহায্য লাগলে আমরা তা দেব।” |