তিন ম্যাচের পরেই করিমের গলায় হতাশা
পুণে এফসি-২ (চিকা, আরতা)
মোহনবাগান-২ (ওডাফা-২)
অ্যালেক্স ফার্গুসন এলেও এই টিমকে ট্রফি জেতাতে পারবেন না, করিম বেঞ্চারিফা তো কোন ছার!
কোনও রকমে হার বাঁচাল বটে মোহনবাগান, কিন্তু এ বারও আই লিগটা তাদের হাতছাড়া হওয়ার জোগাড়। ম্যাচ শেষে করিম বলেন, “আমি চাই না আমার কোনও বন্ধু কোচের হাতে এ রকম টিম পড়ুক। চ্যাম্পিয়ন? সে তো অনেক দূরের কথা। এখন দেখি, ইস্টবেঙ্গল ম্যাচে কাদের পাওয়া যায়।”
সোমবার রাতে কলকাতায় আসার কথা টোলগ ওজবের। হয়তো আরও দু’তিন সপ্তাহ পর তিনি মাঠে নামবেন। কিন্তু লাভ কী? দু’কোটি টাকা খরচ করে যে জন্য তাঁকে কর্তারা অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে এনেছিলেন, সেই কাজটাই আর হবে না তাঁকে দিয়ে। দেশের দু’টো বড় টুর্নামেন্ট, ফেড কাপের পর আই লিগ থেকেও যে প্রায় ছিটকে গিয়েছে করিমের বাগান। বাকি যে টুর্নামেন্টগুলো খেলবে, মোহনবাগান সেগুলোর কোনও নম্বর নেই।
ব্যারেটো যা করতেন, এখন সেই কাজটাই করতে হচ্ছে ওডাফাকে। পুরো টিম যখন দিশাহারা, তখন তীব্র চাপের মুখে ডুবে যাওয়া দলকে টেনে তুলছেন। অক্সিজেন জোগাচ্ছেন। একক ক্যারিসমায়। রবিবার নাইজিরিয়ান গোলমেশিনের জন্যই বাগানের মুখ পুরোপুরি পুড়ল না। ০-২ পিছিয়ে থাকা দলকে মাত্র দশ মিনিটের ঝড়ে ২-২ করার পরেও কিং কোবরা-র গলায় আফসোস, “ভেবেছিলাম ফ্রিকিক থেকে গোল হয়ে যাবে। যাই হোক, ইস্টবেঙ্গল ম্যাচের আগে অন্তত হেরে বাড়ি যেতে হচ্ছে না।”
দু’গোল করে এক পয়েন্ট আনলেন।
বালেওয়াড়ির স্টেডিয়ামের গেটের সামনে ছেলের সঙ্গে ওডাফার ছবি তুলে রাখার জন্য ক্যামেরা বা মোবাইল হাতে দাঁড়িয়ে আছেন জনাদশেক মা। যদিও সুযোগটা তাঁরা পেলেন অনেক পরে। ম্যাচ শেষ হতেই যে ওডাফা-মোগায় হাতাহাতি হয়ে গেল। ওডাফাকে আটকাতে পুণে ট্যাকলের পাশাপাশি চোরাগোপ্তা মারধরও করছিল। ম্যাচের পরে দেখা গেল, মোহন অধিনায়কের কোমর থেকে পা পর্যন্ত জমাট বাঁধা রক্ত। রাগ মেটাতে ম্যাচ শেষে খোঁড়াতে খোঁড়াতে হলেও চলে গিয়েছিলেন পুণের রিজার্ভ বেঞ্চে। কথা কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি-ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে গেল। থামাতে দৌড়ে যেতে হল করিমকে। দু’জনেই গজরাতে গজরাতে আলাদা হয়ে গেলেন। ওডাফা যেমন বললেন, “এ ভাবে মারলে সবারই রাগ হবে।” পাল্টা মোগা বললেন, “ও ওডাফা বলে কি মাথা কিনে নিয়েছে?”
জোড়া গোল করে ওডাফা কোনও রকমে মোহনবাগানের মান বাঁচালেন বটে। কিন্তু করিমের ‘শাপমুক্তি’ ঘটল না। বাগানে দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম তিন ম্যাচের একটাতেও জয় নেই মরক্কোন কোচের। কলকাতায় বলে এসেছিলেন, তিন ম্যাচে সাত পয়েন্ট পাওয়া লক্ষ্য। পেলেন মাত্র দুই। লক্ষ্য কেন অপূর্ণ সেটা স্ট্যানলি, ডেনসনদের মতো ফুটবলারদের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে। ওডাফা-টোলগেকে আনতে কর্তারা খরচ করেছেন সাড়ে চার কোটি। ফলে বাজেটে টান পড়ায় স্ট্যানলির মতো তৃতীয় শ্রেণির বিদেশিকে নিয়েছেন তাঁরা। যিনি পাতে দেওয়ার যোগ্যই নন। অনুশীলনে কোচ তাঁকে যা-যা বলেছিলেন, ঠিক তার উল্টো কাজ করে গেলেন স্ট্যানলি। বাঁ পায়ের ডেনসন এত মিস পাস করলেন যে, মাঝমাঠের খেলাটাই ঘেঁটে গেল।
এমনিতে বাগানে চোটের যা অবস্থা তাতে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। এ সবের সঙ্গে যোগ হচ্ছে সব ম্যাচে জঘন্য গোল হজম। প্রথমার্ধে পুণের দু’টো গোলের জন্যই দায়ী সবুজ-মেরুনের পরিকল্পনা এবং নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি। দ্বিতীয় গোলটার সময় তো আবার ইচে চোট নিয়ে বাইরে চলে গিয়েছিলেন। বিরতির আগেই পুণের অন্তত তিন গোলে এগিয়ে যাওয়ার কথা। সেটা হয়নি কিছুটা গোলকিপার শিল্টনের হাত আর কিছুটা মোগা-সুভাষ সিংহদের ব্যর্থতায়। সুভাষ একাই হ্যাটট্রিক করতে পারতেন।
ফুটবল অঙ্কের খেলা। একটা বড় কর্পোরেট কোম্পানির মালিকানাধীন ক্লাব পুণে এফসি তাদের দলে এক জন ভিডিও অ্যানালিস্ট রেখেছে। মুম্বই এবং ডেম্পো ম্যাচ দেখার পর মোহনবাগান সম্পর্কে কোচের হাতে তিনি যে রিপোর্ট তুলে দিয়েছিলেন তাতে চারটে পরামর্শ ছিল। এক) দু’টো উইং ব্যবহার করলে সাফল্য পাওয়া যাবে। দুই) মোগার উচ্চতা এবং সুভাষের গতি বিপক্ষ বক্সে ব্যবহার করলে গোল আসবে। তিন) ওডাফাকে ঘিরে রেখে ওকে হতাশ করে তুলতে হবে। চার) মোহনবাগান মাঝমাঠ ও রক্ষণের মধ্যে যে বড় ফাঁক তৈরি হয় সেখানে বল ফেললে বিপক্ষ রক্ষণ কেঁপে যাবে।
ম্যাচটা কাঁটাছেড়া করলে দেখা যাচ্ছে ডেরেক স্ট্র্যাটেজি তৈরি করেছিলেন ভিডিও অ্যানালিস্টের নিদান মেনেই। নিখুঁত পরিকল্পনা। পুণে কোচের বাড়তি সুবিধে তাঁর দুই স্টপার চিকা আর অ্যানাসের উচ্চতা। তবুও পুণের শেষরক্ষা হল না বাগানের এক বিদেশির জন্য ওডাফা ওকোলি।

মোহনবাগান: শিল্টন, নির্মল, ইচে (রাজীব), আইবর (মেহরাজ), ফেনাই (মণীশ), জুয়েল, রাকেশ, ডেনসন, স্নেহাশিস, স্ট্যানলি, ওডাফা।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.