|
|
|
|
হাল ছেড়ো না বন্ধু, অঙ্গীকার আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসে |
যুদ্ধ জয়ের সম্মান প্রদীপকে |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
জন্ম থেকেই পা দুটো অশক্ত প্রদীপ দাসের। চলতে সমস্যা হয়। দারিদ্রের সংসারে এমন প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে চিন্তায় ছিলেন বাবা-মা। পরিচিতদের কেউ কেউ ছেলেকে না পড়িয়ে দোকানে দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু বাবা-মা জানতেন লড়াই না করলে হেরে যেতে হবে ছেলেকে। তাই তাঁরা স্কুলে পাঠান প্রদীপকে। সেই প্রদীপই এখন হাইস্কুলের শিক্ষক। আজ, বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ‘আউটস্ট্যান্ডিং এমপ্লয়ি’-র পুরস্কার নেবেন তিনি রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের হাত থেকে।
প্রদীপ দাস বেলদার জাহালদার পলাশি গ্রামের বাসিন্দা। বাবা বরেন্দ্রনাথ দাস চাষের কাজ করেন আর মা বনবালাদেবী গৃহবধূ। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় প্রদীপ। তিনি আর তাঁর ভাই সন্দীপ দুজনেই এখন নারায়ণগড়ের গোপীনাথপুর হাইস্কুলের শিক্ষক। স্মৃতিচারণে ডুবে বরেন্দ্রবাবু বলেন, “অনেক কষ্টে দুই ছেলের পড়ার খরচ জুগিয়েছি। ওদের মধ্যেও কখনও বিলাসিতা দেখিনি।” মা-ও স্মৃতি হাতড়ে বলেন, “প্রদীপ জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। আমাদের পাশাপাশি ওরও মনের জোর ছিল। তাই ও এতদূর এগিয়েছে।” পুরস্কারের খবরে খুশি প্রদীপবাবু বলেন, “নানা বাধা পেরিয়ে এগোতে হয়েছে। সেই কথা ভাবলেও মন কেমন করে।” সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “এমন পুরস্কার ভাল কাজে উৎসাহিত করবে।” বরেন্দ্রবাবুর কথায়, “পুরস্কারটা বড় কথা নয়, সম্মানটাই বড়।” গোপীনাথপুর হাইস্কুলের শিক্ষাকর্মী সুকুমার মাঝিও বলেন, “ওঁর জন্য আমরা গর্বিত।” |
|
প্রদীপ দাস ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
প্রদীপ জানেন প্রতিবন্ধী হলে কী কী সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তাই পরিকল্পনা করেছেন নিজেই একটি আবাসিক প্রতিবন্ধী স্কুল গড়ার। নিজের জমানো টাকা এবং ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে বেলদার বাঁধপাড়ায় জমিও কিনেছেন। দৃষ্টিহীনদের কী ভাবে লেখাপড়া শেখানো যায়, ব্যারাকপুরে তার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। প্রদীপবাবু বলেন, “প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়াটা আমার ইচ্ছে। সেখানে ওদের রেখে পড়াতে পারব। ওরা প্রতিষ্ঠিত হলে সেটাই প্রাপ্তি। সকলের সহযোগিতা পেলে স্বপ্নপূরণ হবেই।” |
|
|
|
|
|