ভারতে ডিজেল একটি চিরন্তন সমস্যা। পরিবেশবাদীরা ডিজেল গাড়ি সম্পূর্ণ রদ করিবার পক্ষপাতী। অর্থনীতি বিষয়ে বিন্দুমাত্র কাণ্ডজ্ঞান আছে, এমন মানুষ মাত্রেই বলেন, ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়ির জ্বালানি হিসাবে যে ডিজেল ব্যবহৃত হয়, তাহাতে ভর্তুকি দেওয়া কেবল যুক্তিহীন নহে, একটি বৃহৎ সামাজিক অন্যায়ও বটে। রাজকোষ ঘাটতির বিপদ স্বীকার করিয়াও ডিজেলে যে ভর্তুকি দেওয়া হয়, তাহা নিতান্তই আম আদমির জন্য। যাঁহারা কুড়ি লক্ষ টাকা দিয়া এস ইউ ভি কিনিতে পারেন, তাঁহাদের জন্য সস্তায় জ্বালানি দেওয়ার অর্থ গরিবকে বঞ্চিত করিয়া ধনীর পকেট ভরা। পরিবেশ অথবা অর্থনীতি, যে দিক হইতেই দেখা যাউক, ব্যক্তিগত গাড়িতে ডিজেল ব্যবহার বন্ধ হওয়াই বিধেয়। তাহার একটি সহজ উপায় আছে আইন বাঁধিয়া এই শ্রেণির গাড়ি নির্মাণ, আমদানি এবং বিক্রয় বন্ধ করিয়া দেওয়া হউক। তবে বাজারে হস্তক্ষেপ না করিয়া, বাজারের প্রক্রিয়াকে কাজে লাগাইয়াও ব্যক্তিগত গাড়িতে ডিজেল ব্যবহার কমানো সম্ভব। এস জয়পাল রেড্ডি যখন কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ছিলেন, তিনি প্রস্তাব করিয়াছিলেন ব্যক্তিগত ডিজেল গাড়ির উপর একটি মোটা কর আরোপ করা হউক। এই প্রস্তাবটি লইয়া বেশি দূর অগ্রসর হওয়ার পূর্বেই তিনি পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক হইতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকে বদলি হইয়া যান। তাঁহার উত্তরসূরি বীরাপ্পা মইলি আর এই প্রস্তাব লইয়া মাথা ঘামান নাই।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট জানিতে চাহিল, কেন দিল্লিতে ডিজেলচালিত ব্যক্তিগত গাড়ির উপর তাহার মূল্যের ২৫ শতাংশ ‘পরিবেশ কর’ আরোপ করা যাইবে না? কেন্দ্রীয় সরকার এখনও উত্তর দেয় নাই, তবে এই কর আরোপ না করিবার কোনও কারণ নাই। বস্তুত এই করটি বাজার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডিজেল গাড়ির ব্যবহার কমাইতে সহায়ক হইবে। ডিজেল গাড়ির দাম পেট্রোলচালিত গাড়ির তুলনায় বেশি। তাহার রক্ষণাবেক্ষণের খরচও বেশি। তবুও যাঁহারা ডিজেল গাড়ি কেনেন, চড়েন তাঁহাদের নিকট ডিজেল গাড়িই লাভজনক। কারণ তাঁহারা প্রতি দিন এমনই দূরত্ব গাড়ি চড়েন, যেখানে পেট্রোল এবং ডিজেলের দামের ফারাক ডিজেল গাড়ির বেশি দাম এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচের তুলনায় বেশি হইয়া দাঁড়ায়। এখন যাঁহাদের নিকট ডিজেল গাড়ি লাভজনক, পরিবেশ কর আরোপ করা হইলে তাঁহাদের মধ্যে অনেকের ক্ষেত্রেই ছবিটি বদলাইয়া যাইবে। পেট্রোল গাড়িই লাভজনক হইবে। অতএব, ডিজেল গাড়ি ব্যবহারের প্রবণতা কমিবে। তাহার পরেও যাঁহারা ডিজেল গাড়ি চড়িবেন, নিশ্চিত থাকা যায়, তাঁহাদের প্রায় প্রত্যেকেরই প্রতি দিন দীর্ঘ পথ গাড়ি চড়িতে হয়। অর্থাৎ, ব্যক্তিগত পরিবহণের ডিজেলজাত দূষণের জন্য তাঁহারাই সর্বাধিক দায়ী। তাঁহাদের ব্যক্তিগত ভোগের সিদ্ধান্ত অন্যদের জীবনে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলিতেছে (অর্থনীতির পরিভাষায় যাহাকে নেগেটিভ এক্সটার্নালিটি বলা হয়), বাজার প্রক্রিয়ায় সেই দায় তাঁহারা এত দিন এড়াইয়া যাইতে পারিতেন। পরিবেশ কর আরোপ হইলে তাহা আর সম্ভব হইবে না। এই কর বিষয়ে সরকার যত দ্রুত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত করে, ততই মঙ্গল। |