এক দিকে যখন উচ্ছেদ করতে না পারায় থমকে আছে একের পর এক প্রকল্প, তখনই দখলদারেরা নির্বিবাদে সরে যাওয়ায় গতি এল প্রায় আটকে যেতে বসা পরমা উড়ালপুলের কাজে। পার্ক সার্কাসের ওই এলাকায় বাধা সরাতে গিয়ে কোনও বিক্ষোভ-অবরোধের সম্মুখীন হতে হয়নি। এ বার ওই অংশে অর্থাৎ চার নম্বর ব্রিজের পাশ দিয়ে পরমা-প্রকল্পের সংযোগকারী ৬০০ মিটার দীর্ঘ একটি উড়ালপুল তৈরির বরাত দেওয়া হল একটি নামী নির্মাণ-সংস্থাকে।
উচ্ছেদের জন্যই আটকে আছে বহু উন্নয়ন প্রকল্প। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্বাসও দিয়েছেন যে, উচ্ছেদ হবে না। উচ্ছেদ করতে না-পারায় আটকে গিয়েছে এনএইচ ৩১ (বারাসত-বনগাঁ), এনএইচ ৩৪ (দমদম-বারাসত), এনএইচ ৩৫ (বাগডোগরা-শিলিগুড়ি) এই তিন জাতীয় সড়কের সম্প্রসারণ। হোঁচট খাচ্ছে মেট্রো রেল এবং ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো-র মতো গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ। এই অবস্থায় পার্ক সার্কাস থেকে কী ভাবে এত সহজে দখলদারদের সরানো সম্ভব হল? এলাকার নেতা তথা দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, “দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে। ৩৮৩টি পরিবারকে ১২ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। গায়ের জোর প্রয়োগ করতে হয়নি। ওঁরা চলে গিয়েছেন।” |
ই এম বাইপাস থেকে এ জে সি বসু রোড উড়ালপুলের মাঝে পরমা-প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১০-এর ফেব্রুয়ারি মাসে। গোড়ায় কথা ছিল চলতি বছরের মার্চ মাসে কাজ শেষ হবে। কিন্তু জটিলতার জেরে সমসয়সীমা পিছোনো হয় তিন বার। প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক সংস্থা কেএমডিএ-র চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার বিবেক ভরদ্বাজ জানান, “এখন খুব বড় অঘটন না ঘটলে ২০১৪-র মে মাসে আমরা ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়ালপুলটি চালু করে দিতে পারব।” মূল উড়ালপুলটি ১৭ মিটার চওড়া। এটি চালু হলে তার উপর দিয়ে রোজ এক লক্ষ গাড়ি চলতে পারবে। মূল উড়ালপুলের সঙ্গে সংযোগের জন্য বাইপাসে ধাপার দিকে দু’টি এবং অম্বেদকর সেতুর দিকে একটি শাখা হবে।
শুধু দখলদারি নয়, বিভিন্ন সময়ে পরমা প্রকল্প নিয়ে নানা ধরনের জট তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সহায়তায় জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আর্বান রিনিউয়াল মিশনের (জেএনএনইউআরএম) এই প্রকল্পে গোড়ায় ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩১৭ কোটি টাকা। এখন চার নম্বর ব্রিজের পাশে উড়ালপুলের ৬০০ মিটার করতে খরচ ধরা হচ্ছে ৭০ কোটি টাকা। সবে সেখানকার মাটি পরীক্ষা হয়েছে। পরিমার্জিত নকশা শীঘ্রই পাঠানো হবে রেলকে। কারণ, রেললাইনের উপর ৮০ মিটারের কাজ করবে রেল।
বিবেকবাবু বলেন, “আগের নকশায় এই ৬০০ মিটার উড়ালপুল তৈরির কথা ছিল না। ফলে, এই টাকাটা যুক্ত হবে প্রস্তাবিত ব্যয়ের সঙ্গে।” চার নম্বর ব্রিজ সংলগ্ন এই অঞ্চল ছাড়াও আশপাশে পুরসভার ভূগর্ভস্থ ইটের নালার জন্য প্রকল্পের নকশা একাধিক বার বদল করতে হয়েছে। নগরোন্নয়ন দফতরের এক পদস্থ অফিসার এ কথা জানিয়ে বলেন, “বছর দেড়েক আগে পুরসভা বলেছিল ওই নালা সরিয়ে দেবে। কিন্তু সমীক্ষার পর কিছু দিন আগে ওঁরা জানিয়েছেন ভূগর্ভস্থ নিকাশি-পথ সরানো যাবে না। সব মিলিয়ে বার বার প্রকল্পের ওই অংশের নকশা বদল করতে হয়েছে।”
পার্ক সার্কাসের ওই এলাকার দখলদারদের সরাতে বাম আমলেও নানা স্তরে বৈঠক হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। এ বার উন্নয়নের বাধা নির্বিবাদে সরার পরে স্থানীয় (৬৪ ওয়ার্ড) কাউন্সিলর সিপিআইয়ের ফরজানা চৌধুরী বলেন, “মন্তব্য করব না। এটুকু বলতে চাই, আগে আমরা ওখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে আপসের নানা চেষ্টা করেছিলাম। ওঁদের টাকা দেওয়ার কথাও হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূল রাস্তায় নেমে আমাদের উদ্যোগে সব রকম বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এখন প্রায় চুপিসাড়ে সরকার এই উচ্ছেদ চালাল।”
চার নম্বর ব্রিজ লাগোয়া ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘকালের ঝুপড়িগুলো নেই কিন্তু রেলসেতুর পশ্চিম অংশে রয়ে গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের একটি বড়সড় পার্টি-অফিস। তার ইটের দেওয়াল, অস্থায়ী ছাউনি। বছর চারেক আগে বাম-আমলে ওই অফিসটি তৈরির সময়ে ওখানে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ আটকে যায় বলেও অভিযোগ। জাভেদ খান অবশ্য বলেন, “উড়ালপুলের কাজ শুরু হলে অফিসটি ভেঙে দেওয়া হবে।”
ঝুপড়িবাসীরা গেলেন কোথায়? জাভেদ ও ফরজানা দু’জনেই বলেন, “নির্দিষ্ট কোথাও নয়, আশপাশেই বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছেন ওঁরা।” স্থানীয় সূত্রে খবর, এলাকার দু’টি সংগঠনের কর্তা ও সদস্যেরা ওই বাধা সরাতে ইতিবাচক ভূমিকা নিয়েছেন। |