বাড়ির সামনে রাস্তায় খেলছিল বছর আটেকের ছেলেটি। খেলায় মেতে থাকায় কাছাকাছি চলে আসা ট্রামের ঘণ্টি টের পায়নি সে। বুঝতে পেরে রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার আগে ওই ট্রামেরই চাকায় পিষে মৃত্যু হয় ছেলেটির।
রবিবার সকালে মানিকতলার মুরারিপুকুর রোডে ওই দুর্ঘটনার জেরে ছড়ায় তুমুল উত্তেজনা। ঘটনাস্থলের কাছে বিধাননগর ট্রামডিপোয় কয়েকটি ট্রাম লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছোড়ে জনতা। মৃতদেহ আটকে রেখে শুরু হয় বিক্ষোভ। এর জেরে কয়েক ঘণ্টা যান-চলাচল বন্ধ থাকে ওই রাস্তায়। পরে প্রশাসনিক ব্যবস্থার আশ্বাস পেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
পুলিশ জানায়, মৃত শিশুটির নাম তাপস দলুই। মা, তিন ভাইবোনের সঙ্গে মুরারিপুকুর রোডের হঠাৎপল্লি বস্তিতে থাকত সে। প্রত্যক্ষদর্শী সুজয় সর্দার বলেন, “আশপাশে কোনও খোলা জায়গা, মাঠ নেই। বস্তির শিশুরা তাই রাস্তাতেই খেলাধুলো করে। এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ বিধাননগর-বিবাদী বাগ রুটের একটি ট্রাম ডিপোর দিকে যাচ্ছিল। তখন রাস্তায় খেলছিল তাপস। ট্রামটি ওর খুব কাছে চলে যায়। পালানোর চেষ্টা করেছিল তাপস। কিন্তু
|
তাপস দলুই |
তার আগেই চাকার তলায় চলে যায়।” এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ট্রামের চাকার তলায় পড়ে পুরো পাকিয়ে গিয়েছিল ছেলেটির দেহ। বেগতিক দেখে ট্রামটির চালক পালিয়ে যান।
পুলিশ সূত্রের খবর, দুর্ঘটনার পরে এলাকার প্রায় হাজার খানেক বাসিন্দা রাস্তায় জড়ো হন। দেহ আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। এর জেরে বিধাননগর ট্রাম ডিপোর গেট বন্ধ করে দেন নিরাপত্তারক্ষীরা। পরে পুলিশকর্তারা সেখানে পৌঁছলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
স্থানীয় সূ্ত্রে জানা গিয়েছে, মৃত শিশুটির বাবা বছর তিনেক ধরে নিখোঁজ। মা পূর্ণিমাদেবী পরিচারিকার কাজ করেন। এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, বিধাননগর থেকে ধর্মতলা, বিবাদী বাগ এবং হাওড়া রুটের ট্রাম চলে ওই ডিপো থেকে। সব সময়েই ডিপোয় ঢোকার আগে ট্রামের চালকেরা গতি বাড়িয়ে দেন। জনবহুল এলাকায় এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। স্থানীয় বাসিন্দা শঙ্করী সর্দার বলেন, “বস্তির সামনেই ট্রাম লাইন। সব সময় ভিড় থাকে এখানে। বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও চালকেরা ডিপোয় ঢোকার আগে ট্রামের গতি কম করেন না। প্রাণে বাঁচতে হুড়োহুড়ি করে লাইন থেকে সরতে গিয়ে এর আগেও বস্তির কয়েক জন কমবেশি জখম হয়েছেন।” দুর্ঘটনা রুখতে ট্রামলাইনের পাশের ফুটপাথে রেলিং তৈরি করে দেওয়ার দাবি তুলেছেন মুরারিপুকুর রোড এলাকার বাসিন্দারা। |