বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হল এক তরুণীর। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম অদিতি ঘটক (২১)। তিনি প্রয়াত চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের দৌহিত্রী। কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী অদিতি শুক্রবার রাতে একটি গাড়িতে তাঁর তিন বন্ধুর সঙ্গে বেড়াতে বেরিয়েছিলেন। রাতে সেই বন্ধুরাই তাঁকে বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, দুর্ঘটনায় গাড়ি খালে পড়ে যাওয়ায় জলে ডুবে যান অদিতি। রবিবার দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় অদিতির পরিবার খুনের অভিযোগ দায়ের করেছে।
অদিতির মা সংহিতা ঘটক জানিয়েছেন, তাঁদের বাড়ি নিউ আলিপুরে। গত দিন কয়েক তাঁরা চেতলায় অদিতির মামার বাড়িতে রয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁর মেয়ে জ্ঞানজিৎ পটার নামে এক বন্ধুর সঙ্গে গাড়ি চেপে বেরোন। লেক মার্কেটের কাছে একটি রেস্তোরাঁয় খাওয়া-দাওয়া করেন তাঁরা। আলিশা পোদ্দার নামে এক বান্ধবীও অদিতির সঙ্গে বেরিয়েছিলেন। পৌনে ছ’টা নাগাদ আলিশা বাড়ি ফিরে গেলে অদিতি জ্ঞানজিৎ ও তানিয়া নামে দুই বন্ধুর সঙ্গে গাড়িতে ওঠেন। আরও এক তরুণী সেই গাড়িতে ছিলেন। রাত ১১টা নাগাদ রুবি হাসপাতাল থেকে সংহিতাদেবীর কাছে ফোন যায়। জানানো হয়, অদিতিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করানো হয়েছে। এর পরে সংহিতাদেবী তাঁর আত্মীয়দের নিয়ে হাসপাতালে যান। সোনারপুরের বাসিন্দারাই জল থেকে অদিতিকে উদ্ধার করেছিলেন বলে তাঁর দাবি। |
সংহিতাদেবী জানান, অদিতি যে গাড়িতে ছিলেন, সেটি সোনারপুরের কাছে একটি খালে পড়ে গিয়েছিল। হাসপাতাল সূত্রের খবর, শুক্রবার রাতে অদিতির কয়েক জন বন্ধু তাঁকে হাসপাতালে আনেন। তাঁরা জানান, গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে যাওয়ায় অদিতি জলে ডুবে যান। অদিতির সর্বাঙ্গ ভেজা ছিল। শ্বাসকষ্টও হচ্ছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, অদিতিকে সঙ্গে সঙ্গে আইটিইউ-তে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর ফুসফুস থেকে ঘন সবুজ জল (শ্যাওলা-সহ জল) বেরোয়। কিছুক্ষণ তিনি চিকিৎসায় সাড়া দিলেও তার পরে অবনতি হয়। হাসপাতালের তরফে শুভাশিস দত্ত বলেন, “অদিতি চিকিৎসক তাপস রায়ের অধীনে ভর্তি ছিলেন। শনিবারই তাঁর ‘মাল্টি-অরগ্যান ফেলিওর’ হয়। রবিবার বেলা বারোটা নাগাদ ওই তরুণী মারা যান।”
সংহিতাদেবীর অভিযোগ, আপাত ভাবে দুর্ঘটনা মনে হলেও এর পিছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে। গাড়ি দুর্ঘটনায় শুধু অদিতিরই ক্ষতি হল, বাকিরা সুস্থ রইলেন কী করে, সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। তাঁর দাবি, অদিতি ভাল সাঁতারু ছিলেন। সুস্থ অবস্থায় তাঁর জলে ডোবার কথা নয়। অদিতিকে মাদক-জাতীয় কিছু খাওয়ানো হয়েছিল কি না, প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। সংহিতাদেবী বলেন, “জ্ঞানজিৎ নামে ছেলেটি লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালাচ্ছিল বলেও স্বীকার করেছে।” তিনি জানান, দুর্ঘটনার পরে জ্ঞানজিৎ ও তাঁর বাবা হাসপাতালে এলেও বাকি দু’টি মেয়ের কোনও খোঁজ নেই। তাঁরা কারা, জানতে পারেননি তিনি।
সংহিতাদেবী বলেন, “আমার মেয়ের সঙ্গে জ্ঞানজিতের পূর্ব পরিচয় ছিল কি না, জানা নেই।” যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জ্ঞানজিতের বাবা দ্যুতি পটার। তিনি বলেন, “অভিযোগ সত্য নয়। আমার ছেলে ও অদিতি, দু’বছর ধরে পরস্পরকে চিনত। গাড়ি চালানোর সময়ে অদিতি পিছনের সিট থেকে জ্ঞানজিতের জামা টেনে ধরে। তাতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে যায় গাড়ি।” তাঁর দাবি, অদিতি মত্ত অবস্থায় ছিলেন। তাই নিজে বেরোতে পারেননি। ওঁকে উদ্ধার করতেও অসুবিধা হয়েছে।
বিষয়টি জানানো হয়েছে চেতলার বাসিন্দা, রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকেও। তিনি এ দিন বলেন, “অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে সন্দেহ হতেই পারে। পুলিশ তদন্ত করে দেখবে।” |
তবে কী ভাবে অদিতির এই পরিণতি হল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, যে প্রশ্নগুলি উঠেছে, তা হল
• দুর্ঘটনা ঘটল কী করে?
• তিন জন বেরোলেন কী করে?
• তা হলে অদিতি বেরোতে পারলেন না কেন?
• সাঁতার জানলেও অদিতি ডুবলেন কী করে?
• বন্ধুরা বাড়িতে খবর দিলেন না কেন?
• ঘুরতে যাওয়ার কথা অদিতি বাড়িতে জানাননি কেন?
• ঘটনার পরে তাঁর বান্ধবীরা কোথায় চলে গেলেন?
পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার সকালে সোনারপুরের গোয়ালবাটি খাল থেকে দুর্ঘটনাগ্রস্ত মারুতি ওয়াগন-আর গাড়িটি তোলা হয়। ওই রাতেই সংহিতাদেবী তিলজলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। রবিবার সকালে তা সোনারপুর থানায় পাঠানো হয়। জেলার পুলিশ সুপার প্রবীণকুমার ত্রিপাঠী বলেছেন, “দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটির ফরেন্সিক তদন্ত করা হবে। ওই গাড়িটিতে যাঁরা ছিলেন, তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করবেন তদন্তকারীরা।”
|