দু’দেশের মধ্যে আস্থা বাড়াতে বহু ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ২০০৮-এ বাণিজ্য শুরু হয়েছিল নিয়ন্ত্রণরেখা দিয়ে। চার বছরে উৎসাহ মিইয়ে গিয়েছে অনেকটাই। কিছুটা সরকারি নিষেধাজ্ঞায়। কিছুটা দু’দেশের মধ্যে চাহিদা, জোগান ও দামের ওঠা-পড়ায়। নিয়ন্ত্রণরেখার বাণিজ্য দফতর জানাচ্ছে, পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছিল গত এক বছর ধরেই। অবস্থা শোচনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে গত এক মাসে।
নিয়ন্ত্রণরেখার বাণিজ্য দফতরের মুখ্য আধিকারিক হিলাল তুর্কি জানাচ্ছেন, “একটা সময়ে বারামুলার সলমাবাদ ও মুজফ্ফরাবাদের মধ্যে সপ্তাহে প্রায় ২০০-৩০০টি ট্রাক যাওয়া-আসা করত। কিন্তু এখন সেটা ১৫-২০-তে নেমে এসেছে।’’
তাঁর আক্ষেপ, শুরুর দিকে এই বাণিজ্য বহু ব্যবসায়ীকে আকৃষ্ট করেছিল। রাজ্যের অন্তত ৬০০ ব্যবসায়ী নিয়ন্ত্রণরেখা দিয়ে বাণিজ্য করতেন। তাঁদের সংখ্যাটা এখন তলানিতে। মাত্রই ৩০।
সীমান্ত বাণিজ্যে এই অবনতির কারণটা কী?
ওই বাণিজ্য দফতর সূত্রের খবর, সম্প্রতি ব্যাঙ্ক থেকে ব্যবসায়ীরা আর অল্প সুদে ঋণ পাচ্ছেন না। এ ছাড়াও যোগাযোগ ব্যবস্থায় নানা অসুবিধে, রফতানি দ্রব্যের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি ও কিছু ক্ষেত্রে শুল্কের হার বৃদ্ধি এই সব কারণেই ব্যবসায়ীরা এই অঞ্চলে ব্যবসায় লগ্নি করার উৎসাহ পাচ্ছেন না বিশেষ। মূলত ২১ রকম পণ্য আমদানি-রফতানি হত নিয়ন্ত্রণ রেখা দিয়ে। ও দেশে যেত নারকেল, কলা, লাল লঙ্কা, আনারস, নক্সা করা জামার কাপড়। ও দেশ থেকে আসত আপেল, ভেষজ, নানা রকমের বাদাম, পেঁয়াজ, রসুন ও কার্পেট।
২০১১ পর্যন্ত মুজফ্ফরাবাদে প্রায় ১২৫ কোটি টাকার নারকেল রফতানি করা হয়েছে। কিন্তু তার পর কেন্দ্রীয় সরকার নারকেল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় প্রায় ১৫ কোটি টাকার নারকেল গুদামে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। গত বছর পর্যন্তও পাকিস্তানে লাল লঙ্কার বেশ ভাল চাহিদা ছিল। কিন্তু এ বছর পাকিস্তানে লাল লঙ্কার ফলন প্রচুর। তাই ভারত থেকে আমদানির চাহিদা অনেকটাই কমে গিয়েছে। কলা রফতানিও এই অঞ্চলে বেশ লাভজনক। কিন্তু শীত নামতেই ভাটা পড়েছে তাতেও।
বাণিজ্য দফতরের এক অধিকর্তা বলেন “অবাক লাগছে, ভূস্বর্গের আপেল বিশ্ববিখ্যাত। সেখানেই আপেল আসছে মুজফ্ফরাবাদ থেকে! আমদানি করা আপেল মজুত করা হচ্ছে সোপিয়ানে। অথচ সারা উপত্যকার মধ্যে সেরা আপেল হয় এই সোপিয়ানেই।” কাশ্মীরি ওই আধিকারিকের খেদোক্তি, “হয়তো ও দেশের আপেল সস্তা। সলমাবাদেই তো এর দাম মাত্র ৫০ টাকা কেজি।” |