আজ বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস
বানিওড় থেকে চেন্নাই, লড়াই জারি দুই তরুণীর
ছরভর গ্রামের এঁদো একটা পুকুর। আর অঝোর বর্ষায় ক্যানালের খরস্রোতা জল। দুই আদিবাসী তরুণীর অদম্য লড়াইয়ের এরাই সাক্ষী।
অর্চনা হেমব্রম ও বিবিয়ানা টুডু। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। কিন্তু সেই প্রতিবন্ধকতাকেই ‘চ্যালেঞ্জ’ করে তাঁরা পার করেছে সব বাধা। সঙ্গী কেবল প্রিয় ‘বদরদা’। বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসের ঠিক একদিন আগে রবিবার চেন্নাইয়ের পথে রওনা দিলেন বীরভূমের নলহাটির বানিওড় পঞ্চায়েত এলাকার সেই দুই তরুণী। লক্ষ্য জাতীয় প্যারা অলিম্পিক সাঁতার প্রতিযোগিতা।
বীরভূমের এমন একটি আদিবাসী অধ্যুষিত প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ওই দুই তরুণীর এ ভাবে সামনে আসার লড়াইটা কিন্তু সহজ ছিল না। নলহাটির কুসুমজলি গ্রামের অর্চনার জন্ম থেকেই ডান হাত ও বাঁ পা অকেজো। বছর দশেক আগে বাবার মৃত্যুর পর বাড়িতে কেবল মা। আলাদা সংসার করা দাদার সাহায্যেই কোনওরকমে চলে যায় তাঁদের।
অর্চনা ও বিবিয়ানা। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।
স্থানীয় স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পর অর্চনা বর্তমানে নলহাটি সোফিয়া গার্লস কলেজের বিএ প্রথম বর্ষের পড়ুয়া। অন্য দিকে, অজ্ঞানতার কারণে পালস্ পোলিও টিকা না নেওয়া ডহরনাঙ্গি গ্রামের বিবিয়ানার ডান পা অসাড় হয়ে গিয়েছিল জন্মের কয়েক বছরের মধ্যেই। ছোটবেলাতেই বাবা-মাকে হারিয়ে সে দাদার সংসারেই মানুষ। সিউড়ির স্কুল থেকে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে বিবিয়ানাও বর্তমানে সোফিয়া গার্লস কলেজের বিএ প্রথম বর্ষের পড়ুয়া।
এই দুই আদিবাসী তরুণীকে সামনে নিয়ে আসার পেছনে কৃতিত্ব অবশ্য একজনই দাবি করতেন পারেন, তিনি নলহাটির বাসিন্দা বদরুদ্দোজা শেখ এলাকার ‘বদরদা’। জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী বদরুদ্দোজাবাবু পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনী সংস্থার বীরভূম জেলা সম্পাদক। গ্রামের পুকুরেই দুই তরুণীর অদম্য সাঁতার দেখে তুলে এনেছিলেন নিজের কাছে। তারপরে দীর্ঘ দিন নিজে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের এগিয়ে দিয়েছেন পেশাদার সাঁতারে। ফ্রি স্টাইল, ব্যাকস্ট্রোক, ব্রেস্টস্ট্রোক ও বাটারফ্লাইয়ে দক্ষ হয়ে উঠেছে নলহাটির অজপাড়া গাঁয়ের দুই মেয়ে। ইতিমধ্যে এই দুই তরুণী-সহ বদরদার আরও অনেক শিষ্য রাজ্য ও জাতীয় স্তরের নানা প্রতিবন্ধী প্রতিযোগিতায় ছিনিয়ে এনেছেন সাফল্য।
‘গুরু’ বদরুদ্দোজাবাবু বলেন, “ঠিক মতো উৎসাহ পেলে ওঁদের মতো অনেকেই উঠে আসতে পারে। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা সম্ভব হয় না।” বদরদা তাই নিজের চেষ্টায় গত ২৬ বছর ধরে এমন সব প্রতিভাকে তুলে আনার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। আর কী বলছেন দুই তরুণী? “আমরাও পারি। এটাই প্রমাণ করতে চাই। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সরকারের সাহায্য পাইনি।” বললেন অর্চনা-বিবিয়ানা।
সরকার আর সাধারণ মানুষের কাছ থেকে স্বীকৃতি আদায় করে নেওয়ার লড়াই শুরু করেছেন দুই প্রতিবন্ধী। আগামী ৬-৯ ডিসেম্বরের চেন্নাই, তারপরে আরও অনেক চেন্নাই থেকেই সেই লড়াই চলবে তাঁদের।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.