প্রথমবার উদ্যোগ। আর তাতেই সুযোগ পেল না পুরুলিয়ার বেশ কয়েকটি ব্লকের প্রাথমিক স্কুল।
সর্বশিক্ষা মিশনের উদ্যোগে জেলার প্রতিটি চক্র থেকে একটি প্রাথমিক স্কুলকে নির্মল পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পুরুলিয়া জেলার ৪৫টি চক্রের (সার্কেল) মধ্যে ২৮টি চক্রই ওই পুরস্কার থেকে বঞ্চিত। কেন? তা নিয়ে জেলার তিনটি দফতরের মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। জেলা সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ সোমবার নির্বাচিত স্কুলগুলিকে পুরস্কার দিতে পারেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়ায়, ওই কাজিয়া অন্য মাত্রা নিয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, সর্বশিক্ষা মিশন থেকে স্কুলগুলিতে শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা ও শৃঙ্খলা বাড়ানোর জন্য নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কার দেওয়ার প্রকল্প নেওয়া হয়।
পুরস্কারের জন্য কী ভাবে নির্বাচন হওয়ার কথা? এক আধিকারিক জানান, জেলা স্কুল পরিদর্শকের (প্রাথমিক) প্রতিনিধি, টেকনিক্যাল এক্সপার্ট ও ইউনিসেফের প্রতিনিধিরা যৌথ ভাবে স্কুলগুলি ঘুরে সমীক্ষা করবেন। সেখানে শিক্ষার উপযোগী পরিকাঠামো আছে কি না, পরিচ্ছন্নতা কেমন, পড়ুয়াদের মধ্যে শৃঙ্খলাবোধ আছে কি না, শৌচাগার ব্যবহারের অভ্যাস, পড়ুয়াদের হাতের কাজ, বাগান রয়েছে কি না ইত্যাদি দেখা হয়। জেলায় ওই কমিটি কয়েক মাস ধরে সমীক্ষা চালায়।
তবে বহু এলাকায় সমীক্ষা না করেই পুরস্কারের জন্য অন্য কয়েকটি স্কুলের নাম ঠিক করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ডানপন্থী শিক্ষক সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি রামজীবন মাহাতো বলেন, “বরাবাজার চক্রের কোনও স্কুলেই ওই দল সমীক্ষা করেনি। এ ভাবেই আরও অন্যান্য চক্রকেও বঞ্চিত করা হয়।” বিপিটিএ-র জেলা সম্পাদক অনিল মাহাতোর অভিযোগ, “সর্বশিক্ষা মিশন, জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে ২৮টি চক্র পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হল।” এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার তিনি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে জানান। এ বছর জাতীয় শিক্ষক হিসেবে পুরস্কৃত বরাবাজারের লাকা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক শরৎচন্দ্র পরামানিকের অভিযোগ, “আমাদের স্কুলে সমীক্ষাই হল না। কেন পুরস্কার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হলাম জানি না।” মানবাজারের কিছু শিক্ষকও জানান, বড় ব্যাপার পাশের স্কুলকে পুরস্কৃত করলে অন্য স্কুলগুলির মধ্যেও সুস্থ প্রতিযোগিতার বাতাবরণ তৈরি হত। তা নষ্ট হল।
ভারপ্রাপ্ত জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) রাধারানি মুখোপাধ্যায় বলেন, “স্কুল নির্বাচনের জন্য সর্বশিক্ষা মিশন চক্রগুলির অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকদের নিয়ে কর্মশালা করেছিলেন। সেখানে সব অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক ছিলেন না। ফলে বিষয়টি স্কুলস্তরে ছড়ায়নি। এ জন্য সর্বশিক্ষা মিশনের কাজে ত্রুটি থাকতে পারে।” জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি নীলকমল মাহাতোও বলেন, “সর্বশিক্ষা মিশনের পক্ষ থেকে সব অবর বিদ্যালয় পরিদর্শককে প্রকল্প সম্পর্কে অবহিত করা যায়নি বলে ২৮টি চক্র বাদ পড়েছে।” সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক উদয়ন ভৌমিক বলেন, “নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই প্রকল্পের জন্য যারা আবেদন করেছিলেন, তাদের মধ্যে থেকেই পুরস্কারের জন্য স্কুল নির্বাচন করা হয়েছে। পরে আসা আবেদনগুলি বিবেচনা করা যায়নি।” |