সাংসদের পিওন সেজে প্রতারণার অভিযোগ উঠল সরকারি হাসপাতালে। খাস কলকাতায় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঘটনাটি ঘটেছে। সিটি স্ক্যানের ব্যবস্থা করিয়ে দেওয়ার নাম করে এক রোগীর বাড়ির লোকের কাছ থেকে ১০০০ টাকা নিয়ে এক ব্যক্তি চম্পট দেয় বলে অভিযোগ। আগরপাড়ার ধৃতরাষ্ট্র দত্তের এই অভিযোগের ভিত্তিতে বউবাজার থানায় প্রতারণার একটি মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
পুলিশি সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে। অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজেকে কলকাতা (উত্তর) কেন্দ্রের সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিওন বলে দাবি করে একটি পরিচয়পত্রও দেখান। তাতে তাঁর নাম লেখা ছিল, শুভঙ্কর গুহ, বাড়ি শান্তিপুর। পুলিশি তদন্তে প্রকাশ, পরিচয়পত্র দেখিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি অনায়াসে হাসপাতালের ডেপুটি সুপার মুক্তিসাধন মাইতি এবং দুই অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের ঘরেও যাতায়াত করছিলেন। রোগীকে সিটি স্ক্যানের ছাড়পত্রে ডেপুটি সুপারের সইও ওই ব্যক্তি নিজে গিয়ে করিয়ে আনেন। অর্থাৎ, মেডিক্যালের ঘাঁতঘোত প্রতারকের ভালই জানা।
অভিযোগকারী জানিয়েছেন, সোমবার পেটে যন্ত্রণার জন্য তাঁর বোন অঞ্জলি সাধুকে মেডিক্যালে ভর্তি করান তাঁরা। বুধবার ডাক্তার তাঁদের জানান, রোগীর পেটে সিটি স্ক্যান করতে হবে। হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, খরচ পড়বে ২১০০ টাকা। তবে স্থানীয় কাউন্সিলরের শংসাপত্র থাকলে হাসপাতালের ডেপুটি সুপার ২৫ শতাংশ ছাড়ের ব্যবস্থা করে দেবেন। ধৃতরাষ্ট্রবাবুর দাবি, এর পরের দিন প্রয়োজনীয় শংসাপত্র নিয়ে তিনি ডেপুটি সুপারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে ঘটে বিপত্তি। দেখা করার সময় পেরিয়ে গিয়েছে বলে তাঁকে আটকান নিরাপত্তা রক্ষীরা। এই সময়েই সাংসদের পিওনবেশী ‘বন্ধু’র উদয়। ধৃতরাষ্ট্রবাবু বলেন, “এক যুবক এগিয়ে এসে কার্ড দেখিয়ে আমায় বলেন, আমি সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিওন। এখনই সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।”
ধৃতরাষ্ট্রবাবু জানিয়েছেন, তাঁর হাত থেকে কাগজপত্র ও শংসাপত্রটি নিয়ে ওই যুবক প্রথমে অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার অরুণিমা চক্রবর্তীর ঘরে ঢুকে যান। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে তাঁকে সঙ্গে নিয়েই আর এক অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার কুমার মালের ঘরেও ঢোকেন। নিজের পরিচয়পত্র দেখিয়েই ওই ব্যক্তি সিটি স্ক্যানের ব্যাপারটা জানান। অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার ফোন করে বিষয়টি জানানোর পরে এ বার ডেপুটি সুপার তাঁদের ডেকে পাঠান। অভিযুক্ত যুবক নিজেই ডেপুটি সুপারের ঘরে ঢুকে সই করিয়ে আনেন।
ধৃতরাষ্ট্রবাবুর বক্তব্য, ১০০০ টাকাতেই সিটি স্ক্যান হয়ে যাবে বলে তাঁদের স্ক্যান সেন্টারে নিয়ে যান। সেখানে তখন বেশ ভিড়। ধৃতরাষ্ট্রবাবু বলেন, ওই লোকটা এ বার নিজেই কাগজ, টাকা চেয়ে নিয়ে ওখানে কথা বলে। তার পরে ফের ডেপুটি সুপারের কাছে যাচ্ছে বলে দ্রুত সরে পড়ে। পুলিশের বক্তব্য, সিটি স্ক্যান সেন্টারের সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখে অভিযুক্তকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। সাংসদ সুদীপবাবুকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। |