ফের নিশানায় শাসক দলের নিয়ন্ত্রিত ছাত্র সংগঠন। রাজনীতির প্রশ্রয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা অব্যাহত।
এ বছরের গোড়ায় রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজে অধ্যক্ষ নিগ্রহ দিয়ে যার শুরু, সেই বিশৃঙ্খলার তালিকায় নবতম সংযোজন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ক্যানিংয়ের বঙ্কিম সর্দার কলেজ। অন্য অনেক
কলেজের মতো এখানেও অভিযোগের তির তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) দিকে।
দাবি আদায়ের জন্য টিএমসিপি সমর্থক এক দল ছাত্র শুক্রবারই কলেজের স্টাফরুমে তালা দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে রেখেছিলেন বলে অভিযোগ। শনিবার ওই ছাত্রেরা কলেজের গেটে তালাও ঝুলিয়ে দেন। যার ফলে শিক্ষক, ছাত্র কেউই কলেজে ঢুকতে পারেননি। ফলে এ দিন পড়াশোনাও হয়নি কলেজে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানান, গোলমালের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। মন্ত্রী বলেন, “কোনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে খোঁজ নিয়ে দেখব।”
বিক্ষোভকারী ছাত্রদের দাবি, অবিলম্বে তফসিলি পড়ুয়াদের বৃত্তি দেওয়ার বন্দোবস্ত করতে হবে এবং কলেজে স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ করতে হবে। তবে স্থানীয় সূত্রে খবর, গোটা বিষয়টির নেপথ্যে রয়েছে রাজনৈতিক রেষারেষি। ওই কলেজের উদ্ভিদবিদ্যার শিক্ষক প্রশান্ত সেনকে স্থায়ী অধ্যক্ষের পদে নিয়োগ করার জন্য সুপারিশ করেছে কলেজ সার্ভিস কমিশন। কিন্তু পরিচালন সমিতি তাঁকে ওই পদে নিয়োগ করতে নারাজ। অভিযোগ, প্রশান্তবাবু বাম সমর্থক বলেই তৃণমূল প্রভাবিত পরিচালন সমিতির এই অনীহা। কলেজ কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, দুর্নীতির অভিযোগে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা মামলা করেছেন প্রশান্তবাবুও। এই চাপানউতোরও ছাত্র-বিশৃঙ্খলায় মদত দিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর।
বাম শাসনের তিন দশকে এ রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি পুরোদস্তুর রাজনীতির জালে জড়িয়েছে। আর সেই রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হয়েছে আলিমুদ্দিন থেকে। ক্ষমতায় এসে তৃণমূল নেত্রী জানিয়েছিলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তাঁরা দলতন্ত্র মুক্ত করবেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির একই ভাবে বহাল রয়েছে। কেবল সিপিএমের বদলে নিয়ন্ত্রণ এসেছে তৃণমূলের হাতে। গত দেড় বছরে রাজ্যের বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিংসা ও বিশৃঙ্খলার ঘটনায় অভিযোগের তির তাই টিএমসিপি-র দিকে।
বঙ্কিম সর্দার কলেজে শুক্রবার বেলা ১২টা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তালাবন্ধ করে রাখেন এক দল ছাত্র। শনিবার আবার তাঁরা তালা ঝুলিয়ে দেন কলেজের গেটে। ফলে, কলেজে এসেও ফিরে যেতে হয় ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। পরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা শুভ্রা বিশ্বাস এবং পরিচালন সমিতির কয়েক জন সদস্য বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। বিক্ষোভকারী ছাত্রেরা জানিয়ে দিয়েছেন, দু-এক দিনের মধ্যে দাবিপূরণ না হলে আরও জোরদার আন্দোলনে নামবেন তাঁরা।
কলেজের ছাত্র সংসদ টিএমসিপি-র দখলে। ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক উত্তম মণ্ডল বলেন, “দু’বছর ধরে গরিব ছাত্রছাত্রীরা বৃত্তির টাকা পাচ্ছেন না। স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ হয়নি। আরও নানা বেনিয়ম রয়েছে। এ সবের বিরুদ্ধেই আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি।” ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা শুভ্রা বিশ্বাস জানিয়েছেন, ছাত্রদের অভিযোগ ও দাবিগুলি খতিয়ে দেখা হবে।
কলেজ সূত্রের খবর, সেখানকার উদ্ভিদবিদ্যার প্রাক্তন শিক্ষক প্রশান্তকুমার সেনকে সম্প্রতি ওই কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে মনোনীত করেছে কলেজ সার্ভিস কমিশন। শুভ্রাদেবীর আগে তিনি ছিলেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক। অভিযোগ, ওই পদে থাকাকালীন বেশ কিছু আর্থিক দুর্নীতি করেছেন প্রশান্তবাবু। এই অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছে কলেজের পরিচালন সমিতি। যদিও কলেজের একটি সূত্রের দাবি, বাম মনোভাবাপন্ন বলেই প্রশান্তবাবুকে হেনস্থা করা হচ্ছে। কলেজ সার্ভিস কমিশন জানিয়েছে, ওই কলেজের অধ্যক্ষ পদের জন্য একমাত্র আবেদনকারী ছিলেন প্রশান্তবাবু। তাঁর যোগ্যতা নিয়েও কোনও প্রশ্ন নেই। সেই কারণেই প্রশান্তবাবুকে ওই পদের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে প্রশান্তবাবু বলেন, “কলেজ সার্ভিস কমিশন সুপারিশ করা সত্ত্বেও আমাকে নিয়োগপত্র দেওয়া হচ্ছে না। কেন তা জানি না।” এর জন্য অবশ্য কলেজের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন তিনি। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা নিয়োগপত্র না-দেওয়া নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। তাই মন্তব্য করব না।” |