ঘরে-বাইরে বেসামাল দিশাহারা বিজেপি
রের কোন্দল তো আছেই। এ বার বাইরেও অসহায় অবস্থা বিজেপি-র।
লোকসভা ভোট আসছে-আসছে রব। কোথায় কংগ্রেসকে ধরাশায়ী করতে হই-হই করে এগোবে দল! দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি থেকে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির প্রশ্নে টুঁটি চেপে ধরবে কংগ্রেসের। তা নয়, এই সব নিয়ে জেরবার কংগ্রেসই বরং নাস্তানাবুদ করছে বিজেপি-কে!
দলকে বেকায়দায় ফেলার কাজে কম যাচ্ছেন না দলের নেতারাও। রাম জেঠমলানী সিবিআই নির্দেশক নিয়োগের প্রশ্নে দলের সমালোচনাকে উড়িয়ে দিয়ে সমর্থন করে বসছেন কংগ্রসকেই। সুষমা স্বরাজ ও অরুণ জেটলির সমালোচনা করে তিনি চিঠিও দিয়েছেন দলের সভাপতিকে। জেঠমলানীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিতেও কাজ হচ্ছে না। যশবন্ত সিন্হা সরব নিতিন গডকড়ীর বিরুদ্ধে। আর শত্রুঘ্ন সিন্হা প্রকাশ্যে সমর্থন জানাচ্ছেন এই দু’জনকে। টুজি প্রশ্নে মুরলীমনোহর জোশী তো এমন ফ্যাসাদে ফেলেছেন যে, দল এখন মুখ বাঁচানোর পথ হাতড়াচ্ছে। জবাব দেওয়ার দায় ঠেলছে জোশীরই ঘাড়ে।
খুচরোয় বিদেশি লগ্নির মতো প্রসঙ্গে যা-ও বা বামেদের সঙ্গে তালমিলের জমি তৈরি হচ্ছিল, তারাও এখন পারলে এড়িয়ে যায়। লোকসভা ভোটের পরে অবশ্য সরকার গড়ার মতো পরিস্থিতি এলে বামেরা কখনওই নয়, তেমন হলে পাশে থাকলেও থাকতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু অনাস্থা প্রস্তাবের পাশে না দাঁড়ানোয় বিজেপি-কে এখন তিনি আর সবার সঙ্গে একগোত্রে ফেলে দুষছেন। নবীন পট্টনায়কের বিজেডি আবার তৃণমূলের সেই একলা চলো অনাস্থা প্রস্তাবের পাশে দাঁড়িয়ে বসে আছে। অথচ এই নবীনকেই ফের এনডিএ ছাতায় ফেরানোর চেষ্টা দীর্ঘদিন ধরেই চালিয়ে যাচ্ছে দল।
আর প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রসে? আচমকাই যেন পাশা উল্টে গিয়েছে তাদের পক্ষে। সিএজি-র অবসরপ্রাপ্ত নিরীক্ষক যেই না বললেন টুজি-তে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির অভিযোগটা আসলে বিজেপি-র চক্রান্ত, ময়দানে নেমে পড়লেন খোদ সনিয়া গাঁধী। এই এক ধাক্কায় অণ্ণা হজারে থেকে বিজেপি-র দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনকে একেবারে অপ্রাসঙ্গিক করে ফেলার মোক্ষম চাল দিল কংগ্রেস। একই সঙ্গে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যান মুরলীমনোহর জোশী থেকে সিএজি-র মতো সাংবিধানিক সংস্থাকেও এক সারিতে এনে রাজনৈতিক রংয়ে রাঙিয়ে দিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতার কথায়, নিতিন গডকড়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর এমনিতেই দুর্নীতি-বিরোধিতার অস্ত্রটা ছাড়তে হয়েছে দলকে। কয়লা থেকে রবার্ট বঢরার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সরব হতে গিয়ে এখন সাত-পাঁচ ভাবতে হচ্ছে দলকে।
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে ভোটাভুটি-সহ বিতর্কের দাবিতে যেভাবে সংসদ অচল থাকছে, তার দায়ও এখন বিজেপি-র ঘাড়ে চাপছে। বামেরা ভোটাভুটি চাইলেও সংসদ অচল করার পক্ষপাতী নয় খুব একটা। তৃণমূলও এখন বিজেপি নেতৃত্বকে বলছে, ভোটাভুটি হয় এমন ধারায় বিতর্কের প্রস্তাব মনমোহন সরকার মানবে না। মুলায়ম-মায়াবতীর মতো দলও বিজেপি-র পাশে থাকবে না। এর চেয়ে তৃণমূলের অনাস্থা প্রস্তাবে সায় দিলে দু’দিন আলোচনা হতে পারত। বিজেপি-কে আবার এ-ও ভাবতে হচ্ছে প্রকাশ কারাট, সীতারাম ইয়েচুরিরা ভোটাভুটির জন্য যে জোরাজুরি করছেন, সেটা কংগ্রেসেরই কোনও ফাঁদ কি না। কারণ ভোটাভুটিতে সরকার জিতে যাওয়ার পরে দুর্নীতির সব অভিযোগই উড়িয়ে দেওয়ার শক্তি পেয়ে যাবে।
এমনিতেই মমতার সঙ্গে সুষমা স্বরাজের কথোপকথনের কথা প্রকাশ্যে বলে ঢোক গিলতে হয়েছে মুরলীমনোহরকে। সিএজি নিয়ে তিনি নিজে বা তাঁর সমর্থনে অন্য কেউ বেফাঁস কিছু বলে বসলে বিপদ বাড়বে, রয়েছে সেই আশঙ্কাও। গত কাল মুরলীমনোহরের বাড়িতে দীপাবলির ভোজসভায় রাজীব প্রতাপ রুডি ও শাহনওয়াজ হুসেনের মতো দুই নেতাকে পাঠানো হয়েছিল। ছিলেন সঙ্ঘ ও বিজেপি-র যোগসূত্রকারী নেতা রামলালও।
বিজেপি নেতৃত্ব এখন ভেবেই পাচ্ছেন না, কোন পথে যাবেন। মোহন ভাগবত এখনও গডকড়ীকেই দ্বিতীয় দফায় সভাপতি পদে রাখতে চান। ফলে নিতিন-বিরোধীরাও এখন ভয়ে রয়েছেন। গুজরাতে ভোটের পরে জাতীয় রাজনীতিতে নরেন্দ্র মোদী কী ভূমিকা নেবেন, তা অনিশ্চিত। সঙ্কট দলের রাজ্য স্তরের রাজনীতিতেও। দক্ষিণে প্রথম দখল করা রাজ্য কর্নাটকে ইয়েদুরাপ্পা দল ছাড়ার ঘোষণা করে বসে রয়েছেন।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতার অসহায় স্বীকারোক্তি, “কোথায় লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসকে কোণঠাসা করে একজোট হয়ে আক্রমণাত্মক হবে বিজেপি, এখন ঘরে যেমন বেসামাল অবস্থা, বাইরেও হোঁচট খেতে হচ্ছে পদে পদে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.