প্রদীপের নীচেই যেমন অন্ধকার, পরিবেশ ভবনের নীচে তেমনই নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের রমরমা।
সল্টলেকে বেলেঘাটার মোড়ে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সদর দফতর ‘পরিবেশ ভবন’-এর নীচে রাস্তার ধারে যে চার-পাঁচটি চায়ের দোকান রয়েছে, সেখানে প্লাস্টিকের কাপের দেদার ব্যবহার চলছে। প্লাস্টিকের ফেলে দেওয়া ছোট ছোট কাপ আর ক্যারিব্যাগ ছড়িয়ে রয়েছে যত্রতত্র। কিন্তু যে বাড়ি থেকে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক বন্ধ করার ফরমান জারি হয়, তার নীচেই প্লাস্টিকের নিষিদ্ধ কাপে চা বিক্রি হচ্ছে কী ভাবে? পরিবেশ ভবন থেকে নিষেধ করে না?
স্থানীয় এক দোকানি জানালেন, ওই বাড়ির অনেকেই দোকানগুলিতে চা খেতে যান। কেউ কেউ নিষেধ করেন, ধমকও দেন। সেই ধমকে তেমন ‘জোর’ না থাকায় প্লাস্টিকের কাপ বন্ধ হয় না। তবে ইদানীং কেউ কেউ প্লাস্টিকের কাপে চা খেতে অস্বীকার করেন। তাঁদের জন্য কাগজের কাপের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে কাগজের কাপে চা খেতে এক টাকা বেশি দাম দিতে হয়। |
পরিবেশ ভবনের নাগালের মধ্যে যখন অবস্থা হয়, তখন গোটা শহর বা রাজ্য জুড়ে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহারের যে নিয়ন্ত্রণ নেই, তা বলাই বাহুল্য। কলকাতা শহর জুড়ে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক-ব্যাগের অবাধ ব্যবহার। সুদর্শন ঘোষদস্তিদার পরিবেশমন্ত্রী হওয়ার পরে প্রথম দিকে কলকাতার কয়েকটি বাজারে ধুমধাম করে হানা দিয়েছিলেন। তাতে অবশ্য বিশেষ কাজ হয়নি। কারণ মন্ত্রীর ওই অভিযানের পরে যে কড়া নজরদারি এবং লাগাতার হানা দেওয়ার দরকার হয়, তা করেনি দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের বক্তব্য, “দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক দলগুলির সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। সে কারণেই পুরসভারও সদিচ্ছা এবং উদ্যোগের অভাব।”
এই অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) সঞ্চিতা মণ্ডল। নিষিদ্ধ প্লাস্টিক বন্ধ করতে পুরসভা প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে বলে তাঁর দাবি। কী ভাবে? সঞ্চিতাদেবী বললেন, “আমরা নিয়মিত প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। পুরসভার বাজারগুলিতে নিয়মিত সচেতনতা প্রচার হচ্ছে।” সে প্রচারে যে কাজ হচ্ছে না তা মেনে নিয়ে তিনি বলেন, “জরিমানার মতো কড়া ব্যবস্থা না নিলে নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না।” রাজ্য সরকারের আইন থাকা সত্ত্বেও নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যবহারকারীদের জরিমানা করা হচ্ছে না কেন? তার জবাব অবশ্য ওই পুরকর্তার কাছে নেই।
অথচ ওই একই আইনের সহায়তা নিয়ে এবং ব্যাপক প্রচার চালিয়ে শিলিগুড়ি পুরসভা নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। সঞ্চিতাদেবীর বক্তব্য, শিলিগুড়ির সঙ্গে কলকাতার তুলনা করলে চলবে না। শুধু শিলিগুড়ি নয়, উত্তরপাড়া, বহরমপুর, কল্যাণী, রায়গঞ্জের মতো পুরসভাগুলিও নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বা কাপের ব্যবহার বন্ধ করেছে।
এই রকম কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে কলকাতা ও শহরতলির প্রায় সমস্ত সব্জি বাজার, হকার্স কর্নার, মাছের বাজার, মাংসের দোকান, মিষ্টির দোকান এবং ফলের দোকানে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের যথেচ্ছ ব্যবহার চলছে। সবচেয়ে বেহাল অবস্থা কলকাতা পুর-এলাকার। সেই অঞ্চলে এখনও ভয়ানক বিষাক্ত কালো রঙের প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের অবাধ ব্যবহার চলছে। ৪০ মাইক্রনের চেয়ে পাতলা এবং ন্যূনতম ১২X১৬ ইঞ্চি মাপের প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নিষিদ্ধ করে বহু দিন আগেই আইন করেছে রাজ্য সরকার। একই আইনে চার ইঞ্চির কম উচ্চতা এবং ৪০ মাইক্রনের চেয়ে পাতলা কাপও নিষিদ্ধ। সেই আইন প্রায় কোথাও মানা হচ্ছে না। কেবল চায়ের দোকানে নয়, ট্রেনেও অবাধে চলছে প্লাস্টিক কাপ। ফেলে দেওয়া সেই সব কাপ জড়ো হচ্ছে ট্রেন লাইনে বা স্টেশনের আনাচ-কানাচে।
প্লাস্টিক-বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের যে উদ্যোগ কয়েক বছর আগে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ শুরু করেছিল, তা-ও কার্যত বন্ধ। তা হলে এই কাজে কি পর্ষদের কোনও দায়িত্ব নেই? পর্ষদের এক আধিকারিক জানান, নিষিদ্ধ প্লাস্টিক বন্ধে পর্ষদের ভূমিকা এখন এতই সীমিত যে পর্ষদের সত্যিই তেমন কিছু করার নেই। |