দূরত্ব প্রায় ১৫৮ কিলোমিটার। গুরুত্বও অনেক। অথচ দীর্ঘ দিন ধরে কাটোয়া-ফরাক্কা লাইন ছিল অবহেলিত। অবশেষে আজ, শনিবার সকাল ১১টায় কাটোয়া স্টেশন লাগোয়া রিক্রিয়েশন ক্লাবের মাঠে পূর্ব রেলের কাটোয়া-ফরাক্কা ডবল লাইনের শিলান্যাস করছেন রেলের প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়া-ফরাক্কা লাইনে প্রথম পর্যায়ে কাটোয়া থেকে বাজারসৌ পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটার ও আজিমগঞ্জ-মনিগ্রাম পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার লাইন পাতা হবে। ইতিমধ্যেই কাটোয়ায় অজয় নদের উপরে সেতু চওড়া করার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। আজ এই অংশেরই শিলান্যাস হওয়ার কথা। দ্বিতীয় পর্যায়ে বাজারসৌ থেকে আজিমগঞ্জ পর্যন্ত ৪২.১৫ কিলোমিটার ও মনিগ্রাম থেকে নিমতিতা পর্যন্ত ৩৪.৩০ কিলোমিটার লাইন পাতার কাজ চলবে। এই শাখায় ডবল লাইন তৈরি হলে সবচেয়ে উপকৃত হবেন মুর্শিদাবাদের মানুষজন। সাগরদিঘি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা নিয়ে যাওয়ার আর একটি রাস্তাও তৈরি হবে। |
কাটোয়া-আজিমগঞ্জ-ফরাক্কা হয়ে যাওয়া এই শাখা উত্তরবঙ্গের ‘করিডর’ বলে পরিচিত। দীর্ঘ উপেক্ষার পরে ২০০৮ সালে টনক নড়ে রেলকর্তাদের। ওই বছরই বীরভূমের নলহাটির কাছে ব্রাহ্মণী নদীর উপরে রেল সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সময়ে উত্তরবঙ্গ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের সব মেল ট্রেন ও এক্সপ্রেসই কাটোয়া-ফরাক্কা লাইন দিয়ে চালানো হত। রেলের পরামর্শদাতা কমিটির এক সদস্যের দাবি, কাটোয়া-ফরাক্কা লাইনটিকে বিকল্প রাস্তা হিসেবে বেছে না নিলে ভবিষ্যতে রেলের ক্ষতি হতে পারে এ কথা বুঝতে পেরেছিলেন আধিকারিকেরা। তা ছাড়া কাটোয়া-ব্যান্ডেল শাখায় ডবল লাইনের কাজ চলছে। এই অবস্থায় কাটোয়া-ফরাক্কা ডবল লাইন হয়ে গেলে রেলের আয়ও বাড়বে।
নিত্যযাত্রী সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়া থেকে আজিমগঞ্জ পর্যন্ত ২০টি স্টেশন রয়েছে। কিন্তু ওই সব এলাকার বাসিন্দাদের কলকাতায় যাওয়ার জন্য সিঙ্গল লাইনের উপরেই ভরসা করতে হয়। কাটোয়া-আজিমগঞ্জ শাখায় প্রতি দিন ৯ জোড়া লোকাল ও দু’টি প্যাসেঞ্জার যাতায়াত করে। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, ওই ৭২ কিলোমিটার রাস্তা পেরোতে সময় লাগার কথা ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট। কিন্তু বেশির ভাগ দিনই অনেক বেশি সময় লেগে যায়। একই অবস্থা আজিমগঞ্জ-ফরাক্কা লাইনের ১৬টি স্টেশনের যাত্রীদেরও। তাঁদের কলকাতায় যাওয়ার জন্য বাসে বহরমপুরে পৌঁছে ট্রেন ধরতে হয়। |
পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের জোনাল রেলওয়ে পরামর্শদাতা কমিটির সদস্য আনোয়ার রুল আলমের দাবি, “কাটোয়া-ফরাক্কা ডবল লাইন হলে ট্রেনের সংখ্যা বাড়বে। ক্রসিংয়ের জন্য সময় নষ্ট হবে না। সঠিক সময়ে ট্রেন যাতায়াতও করবে।” এই রুট দিয়ে কামরুপ, তিস্তা-তোর্সা, পুরী-কামাক্ষা, পাহাড়িয়া-সহ অনেকগুলি এক্সপ্রেসও চলাচল করে। নিত্যযাত্রীদের দাবি, মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকার সব্জি ও দুগ্ধজাত পণ্য অনেক সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছয় না। ব্যবসার ক্ষতি হয়। ডবল লাইন হলে তা সম্ভব হবে। কলকাতায় পৌঁছতে এমনকী রোগীদেরও প্রায় ১০ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। ডবল লাইন হলে সরাসরি ট্রেন পাওয়া যাবে। সময়ও কম লাগবে। নিত্যযাত্রী সংগঠনের দাবি, ওই লাইনে যাত্রী পরিষেবাও বেহাল। তারও উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নিত্যযাত্রী সংগঠনের সম্পাদক তথা মুর্শিদাবাদের তালিবপুর গ্রামের বাসিন্দা সত্যজিৎ ঘোষ বলেন, “ফরাক্কা স্টেশনের উপরে প্রায় দেড় হাজার গ্রাম নির্ভরশীল। ডবল লাইন হলে উপকৃত হবেন তাঁরাও।” আজিমগঞ্জ-ফরাক্কা লাইনে নিমতিতা, ধুলিয়ান, সুজানপাড়া, গণকড় স্টেশন এলাকা সংলগ্ন গ্রামগুলির বেশির ভাগ বাসিন্দাই বিড়ি শিল্প ও মুর্শিদাবাদ সিল্কের উপরে নির্ভরশীল। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে তাঁদেরও আর্থিক উন্নতি হবে বলে মনে করছেন ওই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন। কাটোয়া-আজিমগঞ্জ নিত্যযাত্রী সংগঠনের নেতা চরণ ঘোষ বলেন, “জীবিকা ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কারণে মুর্শিদাবাদ থেকে প্রতি দিন ৪০ হাজার মানুষ কাটোয়া শহরে আসেন। ডবল লাইন হলে কাটোয়া শহরের আর্থিক ব্যবস্থারও উন্নতি ঘটবে।” |