সদ্য চালু-হওয়া বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক-শিক্ষকদের সঙ্গে কলেজ-সংলগ্ন হাসপাতালের চিকিৎসকদের বচসা চরমে উঠেছে। তার জেরে ব্যাহত হচ্ছে রোগীর পরিষেবা। অবস্থার এমনই অবনতি ঘটেছে যে আজ, বুধবার, সেখানে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা।
হাসপাতালের চিকিৎসকদের অভিযোগ, রোগীর চাপ সত্ত্বেও মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক-শিক্ষকেরা আউটডোর করছেন না, রোগী দেখছেন না, শুধু পড়াচ্ছেন। কর্তব্যে এই অবহেলা শাস্তিযোগ্য। চিকিৎসক-শিক্ষকদের জবাব, ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর জন্য যত চিকিৎসক-শিক্ষক দরকার তার অর্ধেকও বহরমপুর মেডিক্যালে এখনও যোগ দেননি। অল্প ক’জনের উপর ছাত্র পড়ানোর পুরো চাপ রয়েছে। এর পর হাসপাতালে রোগী দেখা বা আউটডোর করা সম্ভব নয় তাঁদের পক্ষে।
বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজে গত ১ অগস্ট পড়াশোনা চালু হয়। আড়াই মাস না-কাটতেই চিকিৎসকদের নিজেদের মধ্যে এই বিবাদ শুরু হয়েছে। সমস্যা মেটাতে পুজোর আগে স্বাস্থ্যভবন থেকে উচ্চপদস্থ কর্তারা গিয়ে বহরমপুর এক প্রস্থ আলোচনা করেছিলেন। তাতে কাজ হয়নি। আজ স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে স্বাস্থ্যকর্তাদের একটি দল আবার বহরমপুর যাচ্ছেন। সুশান্তবাবু বলেছেন, “বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজে একটা প্রশাসনিক সমস্যা হচ্ছে।”
কী এই ‘প্রশাসনিক সমস্যা’?
স্বাস্থ্য দফতরের খবর, ২০১১ সালের মার্চে বহরমপুর হাসপাতালকে মেডিক্যাল কলেজ ঘোষণার পরেই মুর্শিদাবাদের পাশাপাশি নদিয়া, ঝাড়খণ্ড থেকে সেখানে প্রচুর রোগী ‘রেফার’ করা শুরু হয়। এমনকী বাংলাদেশ থেকেও রোগী আসতে থাকেন। চাপ সামলাতে হিমসিম খেতে থাকেন চিকিৎসকেরা। তখন তাঁদের আশা ছিল যে, মেডিক্যাল কলেজ চালু হওয়ার পরে চিকিৎসক-শিক্ষকেরা এলে তাঁরা রোগী পরিষেবার দায়িত্ব ভাগ করে নেবেন। এতে হাসপাতালের ডাক্তারদের চাপ কিছুটা কমবে।
কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হয়নি। বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার কাজলকৃষ্ণ বণিকের কথায়, “একে চিকিৎসক-শিক্ষক কম। যে ক’জন যোগ দেন তাঁদের অনেককেই আবার ডেপুটেশনে অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ফলে তাঁরা বহরমপুর হাসপাতালে পরিষেবা দিতে পারছেন না। যাঁরা আছেন তাঁরাও আউটডোর, অ্যাডমিশনে আগ্রহী নন। ফলে হাসপাতালের ডাক্তারেরা ক্ষুব্ধ। কারণ শিক্ষকদেরও রোগী দেখাটা বাধ্যতামূলক।”
কাজলকৃষ্ণবাবু আরও বলেন, চিকিৎসক-শিক্ষকদের হাজিরা দিচ্ছেন অধ্যক্ষ আর মাইনে দিচ্ছে হাসপাতাল। তাই কেউ কামাই করলেও দিব্যি মাইনে পেয়ে যাচ্ছেন। এই অনিয়মেও ক্ষুব্ধ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।
অধ্যক্ষ প্রদীপ সাহা-র বক্তব্য, “নতুন কিছু চালু করলে একটু গোলমাল হবেই। রোম একদিনে তৈরি হয়নি। কালীপুজোর পরে সব ঠিক হয়ে যাবে।” |