সরকারি হাসপাতাল
লেবার রুমের বেহাল দশায় উদ্বিগ্ন এমসিআই
চারদিকে ছড়ানো রক্তমাখা তুলো, গজ, কাপড়ের টুকরো। টেবিল থেকে এক প্রসূতি সরতে না সরতেই টেবিল পরিষ্কার না করে সেখানে শুইয়ে দেওয়া হচ্ছে অপর জনকে। এক টেবিলের সঙ্গে অন্য টেবিলের মাঝখানে কোনও পর্দা নেই। নেই ন্যূনতম আব্রুটুকুও। সদ্যোজাতের জন্মের সময়ে জটিলতা দেখা দিলে তা সামলানোর পরিস্থিতিও মজুত নেই বেশির ভাগ জায়গায়। গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র নয়, রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের লেবার রুম সম্পর্কে এই মন্তব্য করেছে মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই)।
সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে ভর্ৎসনা করেছে তারা। অবিলম্বে পরিবেশ না বদলালে সেখানে স্ত্রী রোগ বিভাগের স্নাতকোত্তর পঠনপাঠনের ছাড়পত্রও বাতিল করা হবে বলে সতর্ক করেছে এমসিআই।
কেমন পরিস্থিতি লেবার রুমের ভিতরে? এক এমসিআই পরিদর্শক বলেন, “বেশির ভাগ জায়গাতেই দেখেছি ভিতরটা অসম্ভব নোংরা। সংক্রমণ ছড়ানোর ভয় প্রতি পদে। লেবার বেডে কোনও তোষক নেই। পর পর সার শয্যা, মাঝখানে কোনও পর্দার বালাই নেই। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে দেখেছি, ওয়ার্ডের ভিতরেই ছানাপোনা নিয়ে বেড়ালের সংসার। মা ও সদ্যোজাতের পাশে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা।”
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের অধ্যক্ষ অনুপ রায় বলেন, “লেবার রুমের হাল বদলানো জরুরি তা আমরাও উপলব্ধি করেছি। জায়গার সমস্যাটা মারাত্মক। প্রাইভেসি বজায় রাখতে গেলে জায়গা বাড়াতে হবে। ধাপে ধাপে কাজ শুরু হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি।”
সমস্যা যে রয়েছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন রাজ্যের পরিবার কল্যাণ কমিশনার সঙ্ঘমিত্রা ঘোষও। তিনি বলেন, “লেবার রুম প্রোটোকল ঠিকঠাক করাটা জরুরি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে এখনও অনেকটা রাস্তা বাকি।”
ক্ষমতায় আসার পরেই মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতিকে সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রসূতির সংক্রমণ এবং জন্মের পর পরই শিশুর নানা ধরনের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার মতো ঘটনার পিছনে উঠে এসেছিল লেবার রুমের পরিবেশের কথা। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব বাড়ানোর পাশাপাশি লেবার রুমগুলির হাল ফেরানোও যে জরুরি, তা মেনে নিয়ে বরাদ্দ হয়েছিল মোটা অর্থ। কিন্তু গত দেড় বছরেরও বেশি সময়ে লেবার রুমের হাল এক চুলও বদলায়নি তা মেনে নিয়েছেন চিকিৎসকেরাই। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের এক স্ত্রী রোগ চিকিৎসকের কথায়, “জন্মের পরেই শিশুকে উষ্ণ রাখার যে প্রক্রিয়া, তাকে বলে হাইপোথার্মিয়া ম্যানেজমেন্ট। এটি খুবই জরুরি। কিন্তু সেটাও নেই বহু জায়গাতেই।”
মালদহ মেডিক্যাল কলেজের এক নার্সের কথায়, “বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রসবের সময়ে ডাক্তার হাজির থাকেন না। সাধারণ ভাবে উতরে যায় ঠিকই, কিন্তু জটিলতা তৈরি হলে রোগিণীর প্রাণ সংশয় হতে পারে। আমরা এ নিয়ে বার বার প্রতিবাদ করা সত্ত্বেও ফল হয়নি।
লেবার রুম প্রোটোকল কী?
• প্রসবের সময়ে এবং প্রসবের পরে যে ব্যবস্থাগুলি মজুত থাকার কথা, সেটাই লেবার রুম প্রোটোকল। এ রাজ্যে তেমন কোনও প্রোটোকল মানা হয় না।

কী কী ব্যবস্থা থাকা উচিত?
• দু’টি শয্যার মধ্যে অন্তত তিন ফুট ব্যবধান
• প্রশিক্ষিত চিকিৎসক এবং নার্স
• শিশুদের ওয়ার্মার
• সাকসন অ্যাপারেটাস
• জীবনদায়ী কিছু ওষুধ
• অক্সিজেন, স্যালাইন
এসএসকেএম হাসপাতালের স্ত্রী রোগ বিভাগের প্রাক্তন প্রধান তরুণ ঘোষের অভিজ্ঞতা, “সংক্রমণ কমানোর জন্য যা যা মানা উচিত, অধিকাংশ কর্মীই তা মানেন না। যে সময়ের ব্যবধানে লেবার রুম পরিষ্কার করার কথা, তা হয় না। এক একটি শয্যার মধ্যে ন্যূনতম ব্যবধানের নিয়ম এখানকার প্রায় কোনও হাসপাতালেই মানা হয় না।”
তিনি জানান, লেবার রুমের তিনটি ধাপ থাকা উচিত। অবজারভেশন, মূল লেবার রুম এবং পোস্ট লেবার রুম। এখানে কোথাওই তা নেই।
স্ত্রী রোগ চিকিৎসকদের সংগঠন বেঙ্গল অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গাইনিকলজিকাল সোসাইটির সভাপতি কালীদাস বক্সীর কথায়, “প্রসবের সময়ে ডাক্তারের উপস্থিতি জরুরি। এখানে সেটাই মানা হয় না। শুধু নার্সরাই থাকেন। তা-ও তাঁরা সবাই প্রশিক্ষিত নন। লেবার রুম এমনই ঘিঞ্জি যে সেখানে একটা ট্রলিও ঢোকে না। প্রসবের পরে প্রসূতিকেই হেঁটে ঘর থেকে বেরোতে হয়। এর পর আর কী-ই বা বলার থাকতে পারে?”
কী বলছেন স্বাস্থ্যকর্তারা?
তাঁদের দাবি, বাম আমলে বছরের পর বছর কোনও কাজ হয়নি। এখন প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছে। খানিকটা সময় লাগবে। মা ও শিশুর মৃত্যু হার কমাতে সরকার যে টাস্ক ফোর্স তৈরি করেছিল, তার চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রচুর টাকা বরাদ্দ হয়েছে লেবার রুমের জম্য, বহু জায়গায় তো লেবার টেবিলও নেই। ১০২০টা নতুন টেবিল কেনা হচ্ছে। কলকাতা ও জেলার হাসপাতালে মাস তিনেকের মধ্যেই তা পৌঁছে যাবে। এ ছাড়া বহু জায়গায় লেবার রুমটাই ভেঙে পড়ার জোগাড়। সেখানে মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.