সরবরাহে নারাজ হাসপাতাল
প্ল্যাসেন্টা বিক্রি শুরু করেও থমকাল রাজ্য
চুক্তি সই করে রাজ্যের ৩২টি সরকারি হাসপাতাল থেকে এক বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাকে প্ল্যাসেন্টা বিক্রি শুরু করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু দু’মাস পরেই পিছিয়ে এল তারা। কারণ, প্রতিটি প্ল্যাসেন্টা পরীক্ষার মতো পরিকাঠামোই নেই অধিকাংশ হাসপাতালে। চুক্তির সময়ে তা মাথায় না রাখাতেই এই বিপত্তি।
প্ল্যাসেন্টার দাম হিসেবে ওই সংস্থা স্বাস্থ্য দফতরকে বার্ষিক ২ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা দেবে বলে ঠিক হয়েছিল। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য দফতরের নামে ব্যাঙ্কে ১ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা জমাও দিয়েছে তারা। তা হলে আচমকা দফতরের এই পিছিয়ে আসার কারণ কী? স্বাস্থ্যকর্তারা এখন যুক্তি দিচ্ছেন বিক্রি করা প্ল্যাসেন্টা যে পুরোপুরি নিরাপদ, অর্থাৎ তার থেকে যে কোনও রোগ সংক্রমিত হবে না, এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না। তাই দফতর এই ঝুঁকি নেবে না।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে অবশ্য খবর, সমস্যাটা অন্য জায়গায়। মাত্র ২ লক্ষ ৩২ হাজার টাকার জন্য সরকারি হাসপাতালগুলিকে যে পরিমাণ হ্যাপা পোহাতে হবে, তাতেই বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরা। স্বাস্থ্যকর্তাদের তাঁরা জানিয়েছেন, একটা বেসরকারি সংস্থা ব্যবসা করবে, লাভ করবে, তার জন্য হাসপাতালের আর পাঁচটা গুরুদায়িত্ব সামলে কর্তৃপক্ষকে কেন আবার প্ল্যাসেন্টার যাবতীয় পরীক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে? কোনও পরীক্ষায় একটু ফাঁক থাকলে এবং সেই প্ল্যাসেন্টা থেকে রোগ ছড়ালে সরাসরি দায়ী হবে স্বাস্থ্য দফতর। তখন স্বাস্থ্যকর্তারা দায়িত্ব নেবেন তো?
এই সম্মিলিত বিদ্রোহের মুখে পড়েই টনক নড়েছে স্বাস্থ্য দফতরের। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর কথায়, “হাসপাতালগুলির আশঙ্কা অমূলক নয়। ওদের এমনিতেই অন্য অনেক কাজ রয়েছে। তার উপরে কর্মীর অভাব। পরিকাঠামো ঠিক না-করে এই দায়িত্ব নেওয়াটা উচিত হয়নি। আমরা আবার নতুন করে বিষয়টি পর্যালোচনা করে নোটিফিকেশন করব। তত দিন প্ল্যাসেন্টা বিক্রি করা হবে না।” তাঁর কথায়, “চুক্তির নিয়মকানুন ঠিক করেছে স্বাস্থ্য দফতরেরই একটি কমিটি। কিন্তু এখন বোঝা যাচ্ছে, সামান্য ক’টা টাকার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের উপর যে গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তা একেবারেই যথাযথ নয়।”
স্বভাবত প্রশ্ন উঠেছে, এত দেরিতে বোধোদয় কেন? চুক্তি বা প্ল্যাসেন্টা বিক্রি শুরুর আগে কেন এই পরিকাঠামোর অভাব বা সংক্রমণের আশঙ্কার কথা মনে হল না? সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত যত প্ল্যাসেন্টা ইতিমধ্যে ওই সংস্থাকে বিক্রি করা হয়ে গিয়েছে, তার গুণমানের নিশ্চয়তা তা হলে কতটা রইল? যে টাকা ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে সেটা কি ফেরত দেওয়া হবে?” স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর জবাব, “আসলে দফতরের যে কমিটি প্ল্যাসেন্টা বিক্রির নিয়মকানুন ঠিক করেছিল, তারা পরিকাঠামোর ব্যাপারটা মাথায় রাখেনি বলেই সমস্যা। যে সব প্ল্যাসেন্টা ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গিয়েছে, সেগুলো নিয়ে বেশি আতঙ্ক ছড়িয়ে লাভ নেই। টাকার ব্যাপারটা আমরা দেখছি।”
প্ল্যাসেন্টা অর্থাৎ গর্ভের ফুল, যা গর্ভে মায়ের সঙ্গে শিশুকে যুক্ত রাখে এবং শিশু জন্মের পরে আপনাআপনি খসে পড়ে। প্ল্যাসেন্টার মধ্যে থাকা রক্ত ও হরমোনের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা খুব ভাল। তাই এর থেকে বেশ কিছু ওষুধ তৈরি হয়। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রক নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে কয়েকটি ওষুধ নিষিদ্ধ করে। সেই তালিকায় প্ল্যাসেন্টা থেকে ওই বেসরকারি সংস্থার তৈরি দু’টি ওষুধও ছিল। সংস্থাটি এর পর দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। আদালত ওই বছর মে মাসে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয় এবং বলে কমিটির সুপারিশকেই চূড়ান্ত বলে গণ্য করা হবে।
ওই কমিটি তার সুপারিশে প্ল্যাসেন্টা থেকে তৈরি ওষুধকে ছাড়পত্র দেয়। কিন্তু শর্ত ছিল, প্রতিটি প্ল্যাসেন্টার এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি, সি, ই-পরীক্ষার পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট এবং প্ল্যাসেন্টাদাত্রীর পুরো ইতিহাস নির্দিষ্ট কাগজে লিখতে হবে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের কর্মীদের। রোগগ্রস্ত মায়ের প্ল্যাসেন্টা, যমজ শিশু বা অপরিণত শিশুর প্ল্যাসেন্টা, সংক্রমিত প্ল্যাসেন্টা নেওয়া চলবে না। এর পরে রাজ্যের ৩২টি হাসপাতালের (৯টি কলকাতার, ২৩টি জেলার) থেকে প্ল্যাসেন্টা নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে চুক্তি করে ওই সংস্থা।
কিন্তু প্ল্যাসেন্টার ব্যাপারে লিখিত তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক জেনেই একের পর এক হাসপাতাল বেঁকে বসতে থাকে। তারা অভিযোগ জানায়, এমনিতেই নার্স ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর অভাবে হাসপাতালগুলো দিশেহারা। তার উপরে এক-একটা হাসপাতালে, বিশেষত মেডিক্যাল কলেজগুলিতে প্রতিদিন কয়েকশো শিশু জন্মায়। এমন অবস্থায় প্রত্যেকটি প্ল্যাসেন্টার এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি, সি, ই-পরীক্ষা করে রিপোর্ট জানা, তা নির্দিষ্ট ফাইলে নথিভুক্ত করা এবং সেই অনুযায়ী বাছাই করার লোক কোথায়? বিভিন্ন হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের কথায়, “সম্পূর্ণ অবাস্তব পরিকল্পনা।” এর পরেই প্ল্যাসেন্টা বিক্রির উপর স্থগিতাদেশ জারি করে স্বাস্থ্য দফতর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.