পরিকাঠামোর অভাব সত্ত্বেও যাত্রীদের দাবি মেনে শেষ পর্যন্ত শিয়ালদহ ডিভিশনে ১২ কামরার ২৯টি ট্রেন চালু করে দিচ্ছে পূর্ব রেল। রেল সূত্রে বলা হয়েছে, আগামী কাল, বৃহস্পতিবার থেকে শিয়ালদহ মেন, বনগাঁ ও হাসনাবাদ শাখায় ২৯টি ১২ কামরার ট্রেন চালানো হবে। তবে এই ট্রেনগুলি কোনওটাই নতুন নয়। যা ট্রেন চলছে সেই রেকগুলিকেই ১২ কামরা বানানো হচ্ছে। এর মধ্যে ১৭টি ১২ কামরার ট্রেন দেওয়া হয়েছে মেন লাইনে আর বাকি ট্রেনগুলি চলবে বনগাঁ ও হাসনাবাদ শাখায়।
শিয়ালদহ স্টেশনের (উত্তর) ১১টি প্ল্যাটফর্মের পাঁচটি দিয়ে লোকাল ট্রেন চলাচল করে। বাকি ছ’টি প্ল্যাটফর্ম দিয়ে চলে মেল-এক্সপ্রেস (তার মধ্যে দু’টি প্ল্যাটফর্ম বরাদ্দ রয়েছে রাজধানী ও দুরন্ত এক্সপ্রেসের মতো বড় ট্রেনের জন্য)। এই প্ল্যাটফর্মে ১২ কামরার ট্রেন চালানো যেতে পারে। কিন্তু রেলকর্তারা বলছেন, এখন মেল-এক্সপ্রেসের সংখ্যাও বেড়েছে। ফলে ওই ছ’টি প্ল্যাটফর্ম থেকে কার্যত অন্য ট্রেন চালানো যায় না।
আবার লোকাল ট্রেনের জন্য নির্দিষ্ট পাঁচটি প্ল্যাটফর্মের মধ্যে কেবল একটি থেকেই ১২ কামরার ট্রেন চালানো সম্ভব। বাকিগুলি এতটা লম্বা নয়। এই চারটিকে কোনও ভাবেই বাড়ানোর পরিকল্পনা করতে পারছেন না রেলের ইঞ্জিনিয়ারেরা। আর তাই শিয়ালদহ ডিভিশনের ওই তিন শাখায় (মেন, বনগাঁ ও হাসনাবাদ) ১২ কামরার ট্রেন অনেক বেশি সংখ্যায় চালানো সম্ভব নয়। আর তা না হলে দুর্ভোগের হাত থেকে যাত্রীদেরও নিস্তার নেই।
শিয়ালদহ ডিভিশনে লোকাল ট্রেনে যাত্রীদের বাদুড়ঝোলা হয়ে যাতায়াত করতে হয়। অবস্থা এমন হয় যে গন্তব্য স্টেশনে নামতে পারেন না যাত্রীদের অনেকেই। চলে যেতে হয় প্রান্তিক স্টেশনে। সেখান থেকে ফের নিজের গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করতে হয়।
শিয়ালদহের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) সুচিত্র দাসও ট্রেনে যাতায়াতের ওই সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর কথায়, “সময়ে ট্রেন চলছে না, এটা ঠিক। তবে যাত্রীদের স্বার্থে ক্ষমতার বাইরে গিয়েও অনেক বেশি ট্রেন চালানো হচ্ছে। তাই সময় নিয়ে সমস্যা একটু বেশি হয়েছে।”
সুচিত্রবাবু জানান, আপাতত ট্রেনের সংখ্যা বাড়বে না, বাড়ানো হবে কামরার সংখ্যা। অর্থাৎ ১২ কামরার ট্রেন চালানো হবে আরও বেশি করে। রেল বোর্ডের প্রাক্তন কর্তা ও শিয়ালদহের প্রাক্তন ডিআরএম সুভাষরঞ্জন ঠাকুরও মনে করেন, শিয়ালদহের লোকাল ট্রেন চলাচলের উন্নতি করতে গেলে ১২ কামরার ট্রেন চালানো এবং দমদমে স্টেশনের উপর দিয়ে সেতুর তৈরির কাজ তাড়াতাড়ি শুরু করা দরকার।
কিন্তু শিয়ালদহে মাত্র একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে মাত্র ২৯টি লোকাল ট্রেন চালিয়ে যাত্রী-বিস্ফোরণ সামাল দেওয়া প্রায় অসম্ভব। অথচ অন্য প্ল্যাটফর্ম লম্বায় বাড়ানো সম্ভব না হলে আরও বেশি সংখ্যায় ১২ কামরার ট্রেন চালানো সম্ভব নয়। কেবল শিয়ালদহই নয়, মেন লাইনে আরও দু’তিনটে স্টেশনে ১২ কামরার জন্য পরিকাঠামো তৈরি করা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। যেমন রয়েছে মেন লাইনের টিটাগড় স্টেশন এলাকায়। ওই স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মটিও আপাতত বাড়ানো যাচ্ছে না। কারণ সেখানে একটি ইয়ার্ড রয়েছে। ইয়ার্ড সরানো গেলে প্ল্যাটফর্ম বাড়ানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন রেলের কর্তারা। যত দিন না পর্যন্ত শিয়ালদহ -সহ অন্য স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে, তত দিন অতিরিক্ত আর ১২ কামরার ট্রেন যে চালানো যাবে না, তা জানিয়ে দিয়েছেন রেল-কর্তারা। |