আজ শিশুদিবস
শিশু-সংসদ থেকে উঠে আসছে ছোটদের স্বর
চুপ করে বোসো। ‘পিনড্রপ সাইলেন্স।’ এমনটাই চিরকাল শুনে আসছে ছোটরা। আর কিন্তু তা চলবে না। শিক্ষার অধিকার আইন শিশুদের দিয়েছে কথা বলার অধিকারও।
পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক স্কুলগুলোতে এখন তৈরি হচ্ছে ‘শিশু সংসদ।’ দিল্লির সংসদের মতো প্রাথমিক স্কুলেও থাকছে মন্ত্রীরা। খাদ্য, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, শিক্ষা ও পরিবেশ, স্বাস্থ্য, থাকছে এমন সব জরুরি দফতর, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য নির্বাচন করবেন স্কুলের শিক্ষক। অন্য মন্ত্রী ঠিক করবে শিশুরাই। প্রতিটি দফতরের আওতায় থাকবে স্থায়ী সমিতিও। সর্বশিক্ষা মিশনের এক আধিকারিক জানান, প্রতিটি সমিতিতে মন্ত্রী সদস্য-সহ থাকবে পাঁচজন করে সদস্য। যেহেতু প্রাথমিক স্কুলগুলিতে ছেলে-মেয়েরা এক সঙ্গে পড়াশোনা করে, তাই গোড়া থেকে মেয়েরাও সমান সুযোগ পাবে কথা বলার।
ঝাড়গ্রাম পশ্চিম চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক শুভাশিস মিত্র বলেন, ‘‘মূলত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়াদেরই মন্ত্রী করা হয়। পড়ুয়াদের মধ্যে গণতান্ত্রিক ও নেতৃত্বের বোধ তৈরি করে এই প্রকল্প। শিক্ষকদেরও এর জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।”
এই সংসদ তৈরির উদ্দেশ্য কী? শিক্ষা দফতরের দাবি, পড়ুয়াদের সক্রিয়তা বাড়ানো ও সমবেত কাজ-কর্মের উপর জোর দিতেই এই প্রকল্প। মিড-ডে মিলের রান্নার দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের সাহায্য করা থেকে স্কুলের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, সব কাজে নজর রাখতে হবে তাদেরকেই। যে সব অঞ্চলের মানুষ শৌচাগারে অভ্যস্ত নন, তাঁদের অভ্যাসে পরিবর্তন আনতেও ভরসা এই শিশুরা। নিজের বাড়িতে বা প্রতিবেশীর ঘরে গিয়ে পড়ুয়ারাই শিখিয়ে দেবে পরিচ্ছন্নতার প্রয়োজনীয়তা, জানান ইউনিসেফের প্রতিনিধি এস এন দাভে। এর মধ্যে দিয়ে জনজীবনে ব্যবহারিক পরিবর্তন আসবে।
ঝাড়গ্রাম মহকুমার জোয়ালভাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সঞ্জীব করণের বক্তব্য, “সংসদের ধারণাকে ছাত্রছাত্রীদের স্তরে বোঝানোর জন্য এই প্রকল্প। দায়িত্ব পেলে চূড়ান্ত অমনোযোগী পড়ুয়াও উৎসাহিত বোধ করে। ক্লাসে কে কী করছে, লিখে রাখতে বললে সহজেই তা করে ফেলে পড়ুয়ারা।”ময়ূরেশ্বর চক্রের পুকুরপাড়া প্রাথমিক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র রামচন্দ্র দাসের বক্তব্য, “ক্লাসের ছেলেমেয়েরা ঝামেলা করলে মন্ত্রীরাই তা মেটায়।” স্কুলের ‘প্রধানমন্ত্রী’ চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী শুভশ্রী মণ্ডলের কথায় অবশ্য অনুযোগের সুর, “মাস্টারমশাইদের কাছে স্কুলের ছেলেদের নামে কিছু বললেই, তারা গোলমাল করে।” এই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক অরবিন্দ ভাণ্ডারীর বক্তব্য, “কী রান্না হবে, সেটাও পড়ুয়ারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করে। কিছু দিন আগে গ্রামের নলকূপ খারাপ হয়েছিল। ওরাই দু’চার জন গিয়ে পঞ্চায়েতের লোকদের বলে এসেছে। তাঁরা আশ্বাস দিয়েছেন।”
সর্বশিক্ষা অভিযানের দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রতিনিধি মনোজিৎ দাস জানান, ২৬টি বিষয় বিচার করে স্কুলগুলিকে ‘নির্মল পুরস্কার’ বা ‘শিশুমিত্র পুরস্কার’ দেওয়া হয়। শিশু-সংসদের কাজ-কর্মও বিচারের একটি মাপকাঠি। সে জন্যেও অনেক ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা এই প্রকল্পে উৎসাহ দেখান।
২০১০ সালে শুরু হয় এই প্রকল্প। পুরুলিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর বিভিন্ন জেলায় এই প্রকল্পটি অনেকটা বলবৎ হলেও অনেক জায়গাতেই দু’বছরেও সে ভাবে কাজ হয়নি।
উত্তরবঙ্গে প্রায় ৮৪টি স্কুলে সমীক্ষা করে প্রতীচী ট্রাস্টেরও একই অভিজ্ঞতা। প্রতীচীর সদস্য কুমার রানা অবশ্য বলেন, “যেখানে কাজ হয়েছে, সেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা খুব উৎসাহের সঙ্গেই যোগদান করছে।’’ তবে প্রকল্পটি সার্থক করতে হলে ওপর থেকে চাপিয়ে দিলে চলবে না, অংশগ্রহণ স্বতঃস্ফূর্ত হতে হবে বলেই মত তাঁর।

(সহ-প্রতিবেদন: অনির্বাণ সেন।)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.