শিল্পায়ন ও জমি নীতির দাবিকেই পঞ্চায়েত ভোটে মমতা-সরকারের বিরুদ্ধে হাতিয়ার করছে কংগ্রেস।
কৃষক-দরদী বার্তা দিতে কংগ্রেস মানুষকে বোঝাতে চায়, তৃণমূল-সরকার রাজ্যের জমিনীতি তৈরি না করায় শিল্পপতিরা জমি পাচ্ছেন না। তৈরি হচ্ছে না নতুন কর্মসংস্থান। অন্যদিকে, শিল্পপতিরা চাষির কাছ থেকে জমি কিনতে গেলে মাঝখানে ঢুকে পড়ছে দালালচক্র। যার জেরে জমির ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকেরা। ফলে শিল্পায়ন বা কৃষকস্বার্থ কোনওটাই নতুন সরকার রক্ষা করতে পারছে না বলে কংগ্রেসের অভিযোগ।
ফলে শিল্প-কৃষি দুইয়েরই স্বার্থরক্ষার দাবিতে রাজ্য সরকারকে জমিনীতি তৈরির প্রস্তাব দিতে চান প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। যে কারণে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “জমি নীতি তৈরি করুক সরকার। তার পর বলুক দালালদের কাছ থেকে জমি কিনবেন না। না হলে এখনও তো চাষি আর শিল্পপতির মাঝখানে দালালরাই নিজেদের মুনাফা লুটছে! চাষিরা জমির ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না।” দালাল-চক্রের দাপট কমাতে এবং জমি সংক্রান্ত সমস্যা নিরসনে আলাদা একটি কমিটি গড়ার দাবিও তুলছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
এরই সঙ্গে হলদিয়া, দুবরাজপুরের সাম্প্রতিক ঘটনার উদাহরণ টেনে তৃণমূল-বিরোধিতায় কালীপুজোর পর থেকেই রাজ্য জুড়ে প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস। সঙ্গে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতি, কৃষকরা ধান-পাটের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত ইত্যাদি অভিযোগ তো রয়েছেই। ইতিমধ্যেই কর্মসূচি শুরু করতে জেলা সভাপতিদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রদীপবাবু।
নন্দীগ্রামের সময় যে তৃণমূল কৃষক-মিত্র ছিল, প্রশাসক হয়ে সেই তৃণমূলই কৃষক-শত্রুতে রূপান্তরিত হয়েছে বলেও মানুষের দরবারে তুলে ধরতে চায় কংগ্রেস। সেই সঙ্গে মানুষকে নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুর পর্বের অভিজ্ঞতা টেনে বোঝাতে চায়, বামেদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চাষিদের উপর অত্যাচারই চালাচ্ছে তৃণমূল। কৃষি ও শিল্পদু’ক্ষেত্রেই তৃণমূলের সরকার ব্যর্থ বলে মনে করেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। রাজ্যে উন্নয়নের জন্য শিল্পায়ন যে জরুরি, সেই বার্তা নিয়ে বিজেপি-ও জনতার দরবারে যাচ্ছে। কৃষি উন্নয়নেও যে মমতা-সরকার নির্বিকার বলে প্রচারে নেমেছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ।
পাশাপাশি পঞ্চায়েত স্তরে তৃণমূল-সরকার কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি যথাযথ বাস্তবায়ণ করতে ব্যর্থ, সেই অভিযোগও তুলে ধরবে কংগ্রেস। জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, পঞ্চায়েত প্রধান, জেলা সভাধিপতিদের দফতরে বিক্ষোভ দেখিয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির রূপায়ণের খতিয়ান চাইবে কংগ্রেস। বিধায়ক মানস ভুঁইয়া বলেন, “বাম আমলে পঞ্চায়েত ব্যবস্থার দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত এখন হচ্ছে কি না, তথ্য দিয়ে মানুষকে তা বোঝানো হবে।” প্রশাসন ও থানার থেকে মানুষ কতটা সহযোগিতা পাচ্ছে অথবা বিপিএল তালিকা নিয়ে বাম আমলে যে দুর্নীতি উঠেছিল, নয়া জমানায় সেই কাজে স্বচ্ছতা এসেছে কিনা, সেই প্রশ্নও তুলে ধরবেন তাঁরা। বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থসাহায্যের চিত্র তুলে ধরার সঙ্গেই খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিযোগের (এফডিআই) সুফল নিয়েও প্রচার চালাবে কংগ্রেস। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য কংগ্রেসের এই কর্মসূচিকে কোনও গুরুত্বই দিচ্ছেন না। দলের মহাসচিব ও শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তাহারেই আমাদের জমি নীতি স্পষ্ট করে বলা আছে। গায়ের জোরে কোথাও আমরা জমি নেব না। কিন্তু কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারের জমি নীতি তৈরি আছে তো? ওরা মানুষকে জবাব দিতে পারবে তো?” |