অডিটের মাঝে অফিসার বিদায় |
ক্যাগকে ত্রিফলার নথি দিতে নির্দেশ রাজ্যের |
অনুপ চট্টোপাধ্যায় • কলকাতা |
ত্রিফলা আলোর বরাত সংক্রান্ত সব নথি চেয়ে কলকাতা পুরসভাকে দু’বার চিঠি দিয়েছে কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (ক্যাগ)। তাতে কান দেননি পুর কর্তৃপক্ষ। এ বার মহাকরণের নির্দেশ, সব নথিই তুলে দিতে হবে ক্যাগ-এর হাতে।
পাশাপাশি, এই বরাত সংক্রান্ত ইন্টারন্যাল অডিটের কাজ অসমাপ্ত রেখেই বিদায় নিচ্ছেন চিফ মিউনিসিপ্যাল অডিটর বিপ্লব গুহরায়। ত্রিফলা আলো বিতর্কে এই জোড়া ঘটনা স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তিতে ফেলেছে পুর কর্তৃপক্ষকে।
কলকাতার রাস্তায় ত্রিফলা আলো লাগানোর বরাতে ‘অনিয়ম’ নিয়ে তোলপাড় হয় গোটা রাজ্যে। কলকাতার সৌন্দর্যায়নে প্রায় ২০ হাজার ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ লাগায় পুরসভা। অভিযোগ, দরপত্র না ডেকেই বরাত দেওয়া হয় এই আলোর। নিয়ম ফাঁকি দিতে প্রায় ৩০ কোটি টাকার এই কাজকে পাঁচ লক্ষ টাকার কম ৬০০টি ফাইলে ভাগ করে বরাত দেওয়া হয়। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন পুর কমিশনার খলিল আহমেদ। ঠিকাদারদের বিল আটকে দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। সরিয়ে দেওয়া হয় পুরসভার আলো বিভাগের ডিজিকে। |
বিষয়টি নজরে আসতেই ত্রিফলা সংক্রান্ত ফাইলপত্র চেয়ে পুর প্রশাসনকে চিঠি দেয় ক্যাগ। পরপর দু’বার। কিন্তু পুরসভা কোনও জবাব দেয়নি বলে জানান ক্যাগের রাজ্য শাখার এক পদস্থ অফিসার। এ প্রসঙ্গে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য ছিল, পুরসভা নিজস্ব অডিট করবে।
এর পরই গত ১ নভেম্বর বিপ্লববাবুকে বিশেষ অডিট করার নির্দেশ দেন খলিল আহমেদ। ওই নির্দেশে বলা হয়েছিল ৩০ নভেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। কিন্তু কাজ শেষের আগেই ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে চিফ মিউনিসিপ্যাল অডিটরের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে মহাকরণে আর্জি জানান বিপ্লববাবু। আবেদনপত্রে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর স্ত্রী কান্দি কলেজের শিক্ষিকা। তিনি সেখানেই যেতে চান। মহাকরণ সূত্রের খবর, তাঁর আর্জি মঞ্জুর হয়েছে। মুর্শিদাবাদের কান্দি মহকুমায় ট্রেজারি অফিসার পদে নিযুক্ত হচ্ছেন বিপ্লববাবু।
বিপ্লববাবু ব্যক্তিগত কারণ দেখালেও পুর সচিবালয়ের অফিসারদের একাংশ মনে করছেন, তাঁর অব্যাহতি চাওয়ার পিছনে অন্য কারণ রয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, বিপ্লববাবুর স্ত্রী বেশ কয়েক বছর ধরেই কান্দি কলেজে শিক্ষকতা করছেন। তাই ত্রিফলা আলো সংক্রান্ত অডিট চলার মধ্যেই কান্দি যাওয়ার জন্য আবেদন করাটা মোটেই স্বাভাবিক ঘটনা নয়। ওই অফিসারদের দাবি, সম্ভবত অডিট রিপোর্ট নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষের তরফে বিপ্লববাবুর উপরে চাপ আসছিল। কিন্তু সেই চাপের কাছে নতি স্বীকার করে রিপোর্ট প্রভাবিত করতে রাজি ছিলেন না তিনি। বিপ্লববাবু অবশ্য তাঁর বদলির পিছনে অন্য কোনও কারণ থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তবে বিপ্লববাবু মাঝপথে চলে যাওয়ায় ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বিশেষ অডিটের কাজ শেষ হবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান পুর-কর্তারা। ক্যাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারেরা অবশ্য জানাচ্ছেন, পুরসভার বিশেষ অডিটে কী কী তথ্য থাকছে তার উপরে তাঁদের নজর থাকবে। তাঁরা মনে করছেন, ওই অডিটের বিশেষ বিশেষ কোনও তথ্য তাঁদের কাজে লাগতে পারে। |