|
খেলার খবর |
বরফ জল
(হারানো খেলা পর্ব ২৯)
অর্ঘ্য ঘোষ • লাভপুর |
|
কারও গলায় বরফ তো, পরক্ষণেই কারও গলায় জল। বছর কুড়ি-পঁচিশ আগে গ্রামে-গঞ্জে কচি-কাঁচাদের গলায় শোনা যেত ওই চিৎকার। যে খেলার সুবাদে ওই চিৎকার শোনা যেত সেই খেলাটির নাম বরফ-জল বা বরফ-পানি। চর্চার অভাবে ওই খেলাটিও কার্যত হারিয়ে যেতে বসেছে। হারিয়ে যেতে বসেছে কচিকাঁচাদের গলায় শোনা বরফ-পানি চিৎকারও।
তালাচাবি খেলার সঙ্গে অনেকটাই মিল রয়েছে এই খেলার। ১০-১২টি ছেলেমেয়ে একত্রে বা আলাদাভাবে বরফ জল খেলা চলে। গণনার মাধ্যমে একজনকে মোড় নির্বাচন করা হয়। তারপর মোড়ধারীকে ঘিরে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে অন্যন্য খেলোয়াড়রা। নিরাপদ দূরত্ব থেকে ওই সব খেলোয়াড়রা মোড়ধারীকে নানা অঙ্গ-ভঙ্গি কিংবা কথায় উত্ত্যক্ত করতে থাকে। আর মোড়ধারী মেজাজ হারিয়ে তাদেরকে ছোঁয়ার জন্য তাড়া করে বেড়ায়। |
নিয়ম হল মোড়ধারী তাড়া করে যাকে নাগালের মধ্যে পাবে তাকে সঙ্গে সঙ্গে সেখানেই বসে পড়তে হবে। না হলে মোড়ধারী ছুঁয়ে দিলেই তাকে খেলা ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় বসে পড়া ওই খেলোয়াড়ের মাথায় হাত রেখে রবফ বলে চিৎকার করে ওঠে মোড়ধারী। আর খেলোয়াড়কে তখন জমা বরফের মতন চুপ করে বসে থাকতে হয়। যতক্ষণ না পর্যন্ত অন্য কোনও খেলোয়াড় মোড়ধারীর নাগাল এড়িয়ে তার মাথায় হাত রেখে জল বা পানি বলে চিৎকার করতে না পারে ততক্ষণ পর্যন্ত বরফ অবস্থা যায় না। বরফ দশা কাটলে তবেই ওই খেলোয়াড় খেলায় সামিল হতে পারে। তবে বরফ দশা কাটাতে গিয়ে কোনও খেলোয়াড় যদি মোড়ধারীকে ছুঁয়ে দিতে পারে তাহলে তাকে মোড় খাটতে হয়। অন্যথায় মোড়ধারী যতক্ষণ না পর্যন্ত সকলকে বরফে পরিণত করতে না পারে ততক্ষণ পর্যন্ত তাকেই মোড় খাটতে হয়।
লাভপুরের লাঘোষার রামমোহন প্রামাণিক, সাঁইথিয়ার মাঠপলশার আনারুল হকদের কথায়, “ছোটবেলায় ঘুমের ঘোরেও আমরা বরফ-পানি বলে চিৎকার করে উঠতাম বলে মা, ঠাকুরদার মুখে শুনেছি। আর এখন ওই চিৎকার শোনা তো দূরের কথা বরফ-পানি খেলতেই দেখা যায় না।” |