মেশিন ভ্যানই ভরসা গ্রামীণ পরিবহণে
স্থানীয় কারিগরের হাতে তৈরি মেশিন ভ্যানই এখন ভরসা গ্রামবাংলার রাস্তায়। গ্রাম সড়ক যোজনায় তৈরি পাকা সড়ক, পঞ্চায়েতের তৈরি গ্রামীণ মোরাম রাস্তা, এমনকী রাজ্য ও জাতীয় সড়কে অবাধে মালপত্র, যাত্রীবহন করে চলছে মোটর ইঞ্জিন চালিত এই ভ্যান রিকশা। যন্ত্রচালিত হলেও এই গাড়িগুলি সরকারি ভাবে মোটর ভেহিক্যালের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। তাই এই সব গাড়িকে লাইসেন্স দেওয়ার নিয়ম নেই। আবার মোটর ভেহিক্যাল আইনের মধ্যে না পড়ায় এই গাড়িগুলি বাজেয়াপ্ত করা যাচ্ছে না। এই ভাবেই আইনের ফাঁক গলে দিব্যি চলছে মেশিন ভ্যান। কাউকে টোল দেওয়ার ঝামেলা নেই। ‘কাটাতেলে’ চলে বলে খরচও তুলনায় কম। অন্য দিকে, খোলা হাওয়ায় দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছনো যায় বলে কম দূরত্বের রাস্তায় যাত্রীদের অন্যতম পছন্দের বাহন এই ভ্যান রিকশা। অনেক সময় অন্য যানবাহন না-থাকায় একমাত্র ভরসাস্থলও বটে।
পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগর থেকে কোলাঘাট, হলদিয়া থেকে পাঁশকুড়াসর্বত্রই গ্রামীণ পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম এই মেশিনভ্যান। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় প্রায় ৩০ হাজার মতো মেশিনভ্যান রয়েছে বলে দাবি করেছেন সারা বাংলা মোটরভ্যান চালক ইউনিয়নের জেলা সম্পাদক জগদীশ শাসমল। যন্ত্রচালিত এই ভ্যান রিকশা তৈরির জন্য শুধু পূর্ব মেদিনীপুরেই প্রায় ৪০০টি ছোট-বড় কারখানা রয়েছে। সেখানে কয়েক হাজার কারিগর রয়েছেন। সব মিলিয়ে জেলায় কয়েক হাজার পরিবার এই ভ্যান রিকশা চালানো ও তৈরির উপরে নির্ভরশীল। পাঁশকুড়ার জিঞাদার ভ্যান চালক শেখ মালেক, শেখ রবিউল বলেন, “আগে লরির খালাসির কাজ করতাম। বিভিন্ন জায়গায় যেতে হত। গত এক বছর হল নিজে এই মেশিনভ্যান কিনে চালাচ্ছি। আগের থেকে অনেক বেশি আয় হচ্ছে।” ভ্যান চালকেরা জানান, ৬০-৮০ হাজার টাকা খরচ হয় এই গাড়ি কিনতে। সরকার বা পঞ্চায়েত থেকে এখনও কোনও ট্যাক্স না নেওয়ায় বাড়তি খরচ কম।
এ দিকে, পণ্যবাহী মোটর ভ্যানের দাপটে গ্রামবাংলার রাস্তাঘাটের চৌপাট দশা। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি গান্ধী হাজরা বলেন, ‘‘প্রচুর মালবোঝাই করে গ্রামীন মোরাম বা পাকা রাস্তায় চলছে এই মোটর চালিত ভ্যান রিকশাগুলি। ফলে রাস্তার প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে। আবার গ্রামীণ মানুষের কাছে এই গাড়ির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই বাধা দেওয়াও যাচ্ছে না।” সভাধিপতি জানান, গ্রামীন রাস্তায় এই ভ্যান রিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে সম্প্রতি জেলা পরিষদের এক বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। গ্রামীন রাস্তায় যাতে মালবোঝাই করে এই গাড়ি চলাচল না করে তা দেখভালের জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েতকে বলা হয়েছে। ভ্যান রিকশা থেকে টোল আদায় করার উপায় নেই বলে আফশোস করেন জেলা সভাধিপতি।
একই বক্তব্য জেলা পরিবহণ দফতরের। দফতরের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, “মোটর চালিত ভ্যানের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। কিন্তু যাত্রী পরিবহণের ক্ষেত্রে ন্যূনতম নিরাপত্তা না থাকায় সরকারি ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে টোল আদায় করা যাচ্ছে না। লোকসান হচ্ছে রাজ্য সরকারেরই।” কিন্তু বেআইনি ভাবে চলা এই ভ্যান রিকশা বন্ধ করতে তো কোনও পদক্ষেপও করছে না প্রশাসন। পরিবহণ দফতরের দাবি, জনগণের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। যদিও মোটর ভ্যান চালকদের কথায়, ‘লাইসেন্স নেই’ অজুহাতে মাঝেমধ্যেই জুলুম চালায় পুলিশ। জগদীশবাবুর দাবি, “সরকারি ভাবে পরিবহণ দফতর এই গাড়িকে স্বীকৃতি না দিলেও হাইকোর্টের নির্দেশ রয়েছে এই গাড়িতে পণ্য পরিবহণ করা যাবে। জেলায় প্রায় ৭ হাজার মোটর ভ্যান নথিভুক্ত রয়েছে।” জগদীশবাবুর মতে, গ্রামীণ পরিবহণে এই মোটর ভ্যান অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.