আরও একটা নিষ্প্রদীপ দীপাবলি কাটাল ডানলপ
রও একটা দীপাবলি নিষ্প্রদীপ কাটল ডানলপের শ্রমিকদের।
গত কয়েক দিনের ঘটনা পরম্পরা বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের ভরসা জুগিয়েছিল, দীপাবলির আগেই খুলবে কারখানা। মিলবে বকেয়া টাকা। শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে দিন কয়েক আগে আলোচনায় বসেছিলেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। বলা হয়েছিল, কালীপুজোর আগেই কারখানা খুলতে চান তাঁরা। কিন্তু বললেই তো হল না। শ্রমিকেরা জানান, কারখানা খুলুক তাঁরাও সেই আশায় বসে আছেন হাপিত্যেশে। কিন্তু অগোছালো ভাবে খুলে ফের মাঝপথে বন্ধ হোক কারখানা, এমনটা তাঁরা চান না। কত সাল থেকে বন্ধ কারখানা চত্বরের ভিতরের পরিস্থিতি কী, তা যেন বিশেষজ্ঞদের দিয়ে খতিয়ে দেখে তারপর শুরু করা হয় উৎপাদন প্রক্রিয়া। গত কয়েক বছরে বন্ধ কারখানার ২৪ জন মৃত শ্রমিকের পরিবারকে যেন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হয়, রুইয়া কর্তৃপক্ষের কাছে এই আর্জিও জানান শ্রমিকেরা।
কিন্তু কোথায় কী!
শ্রমিক নেতারা বলেন, “বস্তুত গত এক বছরে কারখানার ভিতরের পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। কারখানার যন্ত্রপাতি অনেক কিছুই চুরি গিয়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা কার্যত নতুন করে তৈরি করতে হবে। পুরো বিষয়টি এখন অনেকটাই সময়সাপেক্ষ বলে মনে হচ্ছে।” তাই এ বারও দীপাবলিতে মুখ শুকনো বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের।
আর মৃত শ্রমিকদের পরিবারের অবস্থা আরও করুণ।
উৎসবের আবহে যেমন নেহাতই বেমানান বলে নিজেকে মনে করেন সমর্পিতা। মাস খানেক আগে মারা গিয়েছেন ক্যানসারে আক্রান্ত বাবা অসীম চট্টোপাধ্যায়। তিনি কাজ করতেন ডানলপে।
সেই ধাক্কায় স্নাতক স্তরের পরীক্ষা দেওয়া শুরু করেও শেষ করতে পারেননি সমর্পিতা।
অসীমবাবুর অসুস্থতার দিনগুলিতে খড়কুটোর মতো তাঁর কর্মস্থল ডানলপকেই আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিলেন সমর্পিতা। কর্তৃপক্ষকে দরখাস্ত লিখেছিলেন অসীমবাবুর স্ত্রী সন্ধ্যাদেবী। তাতে সাড়া না পেয়ে শ্রমিক সংগঠনের কর্তৃপক্ষ মারফত বহু আবেদন-নিবেদন করেছিল চট্টোপাধ্যায় পরিবার। সন্ধ্যাদেবীর কথায়, “সব মিলিয়ে অন্তত সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা পাওনা। আর কিছু দিন পরেই উনি অবসর নিতেন। বারে বারেই বলতেন, টাকাটা পেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি সুস্থ হয়ে উঠব। ছোট মেয়ের বিয়ের জন্যও টাকা রাখতে পারব।”
সমর্পিতার বাঁ চোখের পাতা ছাপিয়ে জল টলমল করছিল। বললেন, ‘‘বিশ্বাস করুন, এতটুকু বাড়িয়ে বলছি না। টাকার জন্যই বাবার চিকিৎসা করাতে পারলাম না।”
অসীমবাবুর বকেয়া প্রসঙ্গে অবশ্য কারখানার এক কর্তা বলেন, “ওঁর মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখের। কিন্তু আমি নিরুপায়। আমার কাছে কোনও আবেদনই পৌঁছয়নি। বাড়ির লোক হয় তো কোনও নেতা ধরেছিলেন। ওঁরা আমার কাজটাকে আরও কঠিন করে দিয়েছেন।”
এই প্রসঙ্গে ডানলপের শ্রমিক সংগঠনের নেতা বিদ্যুৎ রাউত বলেন, “বন্ধু, সহকর্মীর মৃত্যু নিয়ে রাজনীতির কথা বলতে ভাল লাগে না। বকেয়া দূরে থাক, ডানলপ কর্তৃপক্ষ অসীমের মৃত্যুর ঘাট খরচের ১৫০০ টাকাও দেননি। যদিও, ওঁদের নিয়মেই এই টাকা মৃতের দাহ খরচের জন্য দেওয়ার কথা।” বিদ্যুৎবাবুর সংযোজন, “পিনাকী রায় নামে আরও এক শ্রমিক ক্যানসারে মারা গিয়েছেন। তাঁর পরিবারও একটা টাকাও পায়নি।” আদতে এই তালিকা আরও দীর্ঘ। প্রভাত স্বর্ণকার, তরুণ বসু, রামকৃপাল সিংহ কারুর পরিবার-ই কোনও বকেয়া টাকা পাননি কর্তৃপক্ষের থেকে।
শেষের সে দিনটা কেমন হবে, জানেন না কেউই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.