মালালা দিবস’-এ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি একটি ঘোষণা করিলেন সে দেশে যে ত্রিশ লক্ষ শিশু দারিদ্রসীমার নীচে বাস করে, তাহাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠাইলেই পরিবারকে কিছু নগদ অর্থসাহায্য করা হইবে। সাহায্যের পরিমাণ অতি সামান্য, মাসে দুই ডলার। কিন্তু যে পরিবারগুলির জন্য এই সাহায্য, তাহাদের নিকট এই সামান্য অর্থও মহার্ঘ। অনুমান করা যায়, বহু পরিবারই শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠাইতে উৎসাহ পাইবে। মালালা ইউসুফজাই নামক অসমসাহসী মেয়েটির সম্মানে এই ঘোষণাকে এক প্রকার ক্ষতিপূরণ হিসাবেও দেখা যাইতে পারে তালিবান-অধ্যুষিত সোয়াট উপত্যকায় মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধেই মালালা লড়াই আরম্ভ করিয়াছিল। ইহা এক প্রকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমাপ্রার্থনাও বটে। সবার উপরে, ইহা একটি উদাহরণ অর্থসাহায্য যদি করিতেই হয়, তাহা কোন খাতে করা উচিত। পাকিস্তানে নির্বাচন আসিতেছে। ভারতে রাজনীতিকদের জনমোহনের বাসনা এবং প্রয়োজন যতখানি, পাকিস্তানে তাহার তুলনায় কম হইবার কারণ নাই। এই অর্থসাহায্যও সেই জনমোহনের কাজেই সাহায্য করিবে। কিন্তু তাহাতে এই সাহায্যের গুরুত্ব বা উপযোগিতা কোনও ভাবে হ্রাস পায় না। মানুষের মন ভুলাইবার বিকল্প যখন রাজনীতিতে নাই, তখন তাহা এমন ভাবে করা উচিত যাহাতে প্রকৃতই কিছু লাভ হয়। এই উদাহরণটি সেই কারণেই শিক্ষণীয়।
সীমান্তের এই পারে অর্থসাহায্য কিছু কম হয় না। পশ্চিমবঙ্গেই যেমন মুখ্যমন্ত্রী সব ইমামকে মাসোহারা দিবার ব্যবস্থা করিয়াছেন। তাহাতে রাজ্যের শূন্য রাজকোষ হইতে বৎসরে প্রায় একশত কোটি টাকা ব্যয় হইবে। কিন্তু তাহাতে কী? ইমামদের মাসোহারা উদাহরণমাত্র, কিন্তু একটি জরুরি উদাহরণ। ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠাইলে পরিবারকে অর্থসাহায্য করিবার সিদ্ধান্তটি অর্থনীতির যুক্তিতে যতখানি কুশলী, ইমামদের মাসোহারা দেওয়া ঠিক ততখানিই অকুশলী। এই সাহায্যে সামাজিক উন্নয়নের সম্ভাবনামাত্র নাই। শ্রীবন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সিদ্ধান্তটি অকুশলতার চরম উদাহরণ বটে, তবে ভারতে অকুশলী ভর্তুকির অভাব নাই। যেমন ডিজেলে ভর্তুকি, সারে ভর্তুকি। এই ভর্তুকিতে রাজকোষের অর্থের অপচয় হয় মাত্র, সামাজিক উন্নয়নের প্রশ্নটি অবহেলিতই থাকিয়া যায়। অথচ, পাকিস্তান আজ যে মডেল তৈরি করিয়াছে, ভারতেও তাহার ক্ষেত্র প্রস্তুত ছিল। এই দেশে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হইয়াছে, আইন বাঁধিয়া শিক্ষাকে সর্বজনীন এবং বাধ্যতামূলক করা হইয়াছে। অথচ যে কারণে দরিদ্র পরিবারগুলি সন্তানকে বিদ্যালয়ে না পাঠাইয়া কাজে জুতিয়া দেয়, সেই কারণটি অপনয়ন করিবার চেষ্টা হয় নাই। বিভিন্ন মহল হইতে প্রস্তাব আসিয়াছে, সন্তানকে স্কুলে পাঠাইলে পরিবারকে অর্থসাহায্য দেওয়া হউক। প্রশাসন শুনে নাই। মিড ডে মিল-এর ব্যবস্থা হইয়াছে বটে, কিন্তু সদিচ্ছার অভাবে প্রকল্পটি এত দিনেও তাহার প্রত্যাশিত মাত্রায় পৌঁছাইতে পারে নাই। কী ভাবে অর্থসাহায্য করা উচিত, পাকিস্তান হইতেই না-হয় ভারত তাহা শিখুক। |