নজর যেখানে
বড় সাহেবরা হাঁটেন, তাই তৎপর পুলিশ
পুলিশের বড় কর্তারা যেখানে সকালে হাঁটেন, সেখানকার সাধারণ প্রাতর্ভ্রমণকারীরা নিরাপত্তার ব্যাপারে আশ্বস্ত। তাঁরা জানেন, সেখানে পুলিশি নজরদারি থাকবেই। আর যেখানে এমন কোনও বড় কর্তার পায়ের ধুলো পড়ে না, সেই জায়গায় প্রাতর্ভ্রমণকারীরা ততটা নিশ্চিন্ত হতে পারেন না। তাঁরা জানেন, সেখানে পুলিশি নজরদারি না-ও থাকতে পারে। উত্তর কলকাতার দেশবন্ধু পার্ক ও দক্ষিণের গল্ফগ্রিনে প্রাতর্ভ্রমণকারীদের মনোভাবের পার্থক্যটা যে কারণে প্রকট।
শহর জুড়ে প্রাতর্ভ্রমণকারীদের মধ্যে ইদানীং বইতে থাকা চোর-বদমাইশ-ছিনতাইবাজদের হামলার চিনচিনে ভয়টা দেশবন্ধু পার্কে সকালে হাঁটতে বেরোনো অনেকের মধ্যেই এখনও এঁটে বসতে পারেনি। এমন নয় যে, পার্কের চারপাশে ভোর থেকেই নিরাপত্তার জন্য থিকথিকে পুলিশ মোতায়েন হয়। আসলে এই পার্কেই রোজ সকালে রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) সুরজিৎ পুরকায়স্থ, শ্যামপুকুর এবং বড়তলা থানার বড়-ছোট অফিসারেরা প্রাতর্ভ্রমণে যান। সঙ্গে থাকেন কনস্টেবলেরা।
সেই জন্যই দেবোপম বল, রাধিকা শর্মা, ঐন্দ্রিলা প্রধানদের মতো দেশবন্ধু পার্কের নিয়মিত প্রাতভ্রর্মণকারীরা বলেন, “নপরাজিত মুখোপাধ্যায় বা সুরজিৎবাবুরা এখানে রোজ সকালে হাঁটতে আসেন। এখানে কিছু হলে তো পুলিশেরই বিড়ম্বনা। তাই এখানে ওদের নজর বেশি থাকে। আমরাও অনেকটা নিশ্চিন্তে থাকি।” ঐন্দ্রিলাদেবীর কথায়, “বড় সাহেব রোজ আসেন দেখি, সঙ্গে সান্ত্রী। সবাই বেশ তটস্থ হয়ে থাকেন। আমি নিশ্চিত, যে মাঠে এমন বড় সাহেবরা যান না, সেগুলি নিয়ে পুলিশ এতটা তৎপর নয়।”
লালবাজার সূত্রের খবর, পুলিশের বড় কর্তাদের কেউ কেউ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মাঠ, সিটিজেন্স পার্ক ও যাদবপুরের কিশোর ভারতী স্টেডিয়ামে সকালে হাঁটতে যান। বাকি সব জায়গায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢিলেঢালা থাকলেও ওই সব অঞ্চলে পুলিশি নজরদারি ও টহলদারির খামতি হয় না বলে পুলিশ সূত্রেরই খবর।
কিন্তু চার বছরেরও বেশি সময় ধরে কলকাতা পুলিশে যে নিয়ম চালু হয়েছে, তাতে এমনটা হওয়ার কথা নয়। সেই সময় থেকে পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে প্রতিটি থানাকে প্রাতর্ভ্রমণের এলাকায় পুলিশি বন্দোবস্ত করতে হয় এবং রোজ নিয়ম করে ওই কোথায় ক’জন, কী পদমর্যাদার পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল, তাঁদের অস্ত্র কী ছিল, তাঁদের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম কী ছিল, সে ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানাতে হয় পুলিশ কমিশনারকে।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষের বক্তব্য, “আমি নিজেও একটি পার্কে প্রাতর্ভ্রমণ করি। তার মানে এই নয় যে, শুধু ওই পার্কেই পুলিশের নজরদারি থাকে, আর আশপাশের পার্কে নয়। প্রাতর্ভ্রমণের এমন সব জায়গাতেই যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকে।” ডিসি (উত্তর) গৌরব শর্মা বলেন, “টালা পার্ক, হেদুয়া, দেশবন্ধু পার্কের মতো উত্তর কলকাতায় একাধিক মর্নিং ওয়াক জোন-এ ভোর থেকেই সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকে।” কিন্তু উর্দিধারী পুলিশ না দেখলে সাধারণ মানুষের ভীতি কাটতে চায় না। ডিসি (উত্তর) বলেন, “কনস্টেবলকে ইউনিফর্মে দেখলে মানুষের মধ্যে কিছুটা নিরাপত্তা অনুভূত হয়, এটা ভুল নয়। বিষয়টি আমরা বিবেচনা করে দেখব।”
কলকাতায় থাকেন, এমন আইপিএস অফিসারেরা সকালে কেউ টেনিস, কেউ স্কোয়াশ বা কেউ গল্ফ খেলেন এবং তাঁদের কেউ কেউ আবার নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় প্রাতর্ভ্রমণও করেন। প্রাতর্ভ্রমণকারীদের উপরে ছিনতাইকারীদের হামলা এড়াতে প্রাতর্ভ্রমণের জায়গাগুলিতে পুলিশের কোনও না কোনও বড় কর্তার কি নিয়মিত দৌড়ানো বা হাঁটা উচিত? নপরাজিতবাবুর উত্তর, “আমরা গোটা রাজ্যের সব জায়গার নিরাপত্তা নিয়েই সমান ভাবে যত্নবান।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.