গ্রামকে কাঁদর বেষ্টন করে রয়েছে। তাই অপভ্রংশে রামপুরহাট থানার এই গ্রামের নাম কান্দুরি। গ্রামের নামের মতো এখানকার কালীমাতা ক্ষ্যাপা কালী নামে পরিচিত। পুজোতেও বিশেষত্ব লক্ষ্যণীয়। বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার নাটোরের রানি ভবানীর নামে এখনও সংকল্প হয়। এখনও পুজো হয় রানি ভবানীর নামে। তাই এই কালী রানি ভবানী নামে পরিচিত। রয়েছে বলিদান প্রথা।
শুধু তাই নয়, কান্দুরি গ্রাম ছাড়িয়ে কিছুটা গেলে পড়বে রানি ভবানীর কুয়োতলা। ওই কুয়োতলায় রাতে প্রতিমা বিসর্জনের আগে ক্ষ্যাপাকালীকে কাঁধে চাপিয়ে সাত পাক ঘোরানোর রীতি আজও প্রচলিত। তবে মুর্শিদাবাদের নিমতিতা এলাকায় রানি ভবানীর জমিদারি মহল থেকে ক্ষ্যাপাকালীর পুজোর জন্য ৫ টাকা করে দান আসত। এখন সেই প্রথা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। রামপুরহাট থানার বনহাট অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত বিভিন্ন মৌজা যেগুলি রানি ভবানীর এলাকা বলে পরিচিত ছিল সেগুলি খাস জায়গায় পরিণত হয়েছে। এর ফলে কান্দুরি গ্রামে রানি ভবানীর রাজ পুরোহিত চূড়ামণি প্রতাপ চক্রবর্তীরও প্রায় ৫০০ বিঘা সম্পত্তি খাস জায়গায় পরিণত হয়। ওই গ্রামের বাসিন্দা প্রৌঢ় রুদ্রনাথ চক্রবর্তীর কথায়, “এক সময় পূর্বপুরুষ চূড়ামণি প্রতাপ চক্রবর্তীকে নাটোরের রানি ভবানী বনহাট গ্রাম সংলগ্ন ব্যাঘ্র চণ্ডীমাতার পুজোর জন্য রাজ পুরোহিত হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। সেবাইত হিসেবে তিনি ক্ষ্যাপাকালীর পুজো প্রচলন করেন এবং পুজোতে রানি ভবানীর সংকল্প করা হয়।” |
এই পুজোর তিন শরিক রয়েছেন। জয়ন্ত চক্রবর্তী, রবীন্দ্রনাথ চৌধুরী, অরূপ চক্রবর্তী, অলিকেন্দু চক্রবর্তীরা বলেন, “বর্তমানে মন্দিরের পাকা দালান হলেও প্রতিমা শিল্পী থেকে পুরোহিত, ঢাকিএখনও সেই বংশানুক্রমে রানি ভবানীর আমলে যাঁরা করে এসেছেন তাঁরাই করছেন। এখনও অমবস্যা তিথি না পড়লে মূর্তিতে রং হয় না। পাশাপাশি ভোগের জন্য নাড়ু, মুড়কি থেকে অন্যান্য উপকরণও তৈরি হয় না। অমাবস্য তিথি পেরোলে ক্ষ্যাপাকালীকে পুজোর পরের রাতে বিসর্জন করা হয়।”
প্রায় সমসাময়িক শ্মশানকালী পুজোতেও মেতে ওঠেন গ্রামবাসী। বর্তমানে গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। অনেক দূর পর্যন্ত আলো দিয়ে গ্রামকে সাজানো হয়। যা দেখতে আশপাশ এলাকা থেকে মানুষজন আসেন কান্দুরি গ্রামে। |