স্বপ্নে দেখা দিয়ে ভক্তের কাছে পুজো চেয়েছিলেন দেবী। ভক্ত ঠিক করলেন, পাথর দিয়ে মূর্তি হবে। ফের স্বপ্নে এসে দেবী বললেন, ‘আমায় পাথর করে দিবি!’ লজ্জিত ভক্ত এ বার ঠিক করলেন, কাঠ দিয়ে মূর্তি হবে। ফের আপত্তি দেবীর, ‘শরীরে তো পোকা বাসা বাঁধবে।’ শেষে উপায় বাতলে দিলেন দেবীই, ‘পুজো হোক মাটির প্রতিমায়।’ জনশ্রুতি, ১২১ বছর আগে কালনা শহরের যোগীপাড়ায় নিজের বাড়িতে এ ভাবেই কালীপুজো শুরু করেছিলে সত্যচারণ নাথ। পারিবারিক এই পুজোয় এখন ভিড় জমান নানা প্রান্তের মানুষজন।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কাপড়ের ব্যবসা থাকলেও সাধন-ভজনে ব্রত ছিল সত্যচারণের। শহরের পুরনো বাসস্ট্যান্ড থেকে খানিকটা এগিয়ে একটি গলির সামনেই রয়েছে কালীমন্দির। যা সত্যনাথ কালীবাড়ি হিসেবে পরিচিত। |
বাসিন্দাদের দাবি, বর্তমানে কংক্রিটের মন্দির হলেও পুজোর শুরুতে তা ছিল না। খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘরে দেবীর আরাধনা শুরু করেন সত্যচারণ। মন্দির পাকা হওয়ার পিছনেও রয়েছে জনশ্রুতি। এক বার পুজো চলাকালীন প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়। প্রতিমায় জল চুঁইয়ে পড়তে থাকে। সেই সময়ে কালনার একটি ইটভাটায় ছিল প্রচুর কাঁচা ইট। সেগুলি গলে যেতে শুরু করে। চিন্তায় পড়েন ইটভাটার মালিক। তখন লাল পাড় সাদা শাড়ি পরা একটি মেয়ে ইটভাটা মালিককে জানিয়ে দেয়, সত্যাচারণের মন্দির গড়ে দিলেই ইট রক্ষা পাবে। এ কথা বলে অদৃশ্য হয়ে যায় মেয়েটি। থেমে যায় বৃষ্টি। পরে সেই ইটভাটা মালিকই মন্দির পাকা করে দিয়েছিলেন।
মন্দিরে রয়েছে রাধা-কৃষ্ণের মূর্তি। বাড়ির সদস্যেরা জানান, কালীপুজো হয় বৈষ্ণব মতে। পুরনো রেওয়াজ অনুযায়ী লক্ষ্মীপুজোর পরে দেবীকে বেদী থেকে নামানো হয়। তার পরে শুরু হয় অঙ্গরাগ। দিগম্বরী চতুর্দশীতে বেদীতে তুলে দেবীর পুজো হয়। পর দিন প্রতিমায় গয়না ও বস্ত্র দেওয়া হয়। বাড়ির লোকজন জানান, পুরনো রীতি মেনে কালীপুজোর সময়ে ভোগ দেওয়া হয় খিচুড়ি, পায়েস, চাটনি-সহ ৯ রকমের ভাজাভুজি।
সময়ের সঙ্গে অবশ্য কিছুটা জৌলুস হারিয়েছে এই কালীবাড়ির পুজো। তিন দশক আগেও পুজো উপলক্ষে মণ্ডপের পাশে বসত যাত্রাপালার আসর। এখন আর সেই রেওয়াজ নেই। এখন পুজোর দেখভালের দায়িত্বে থাকা দেবনারায়ণ নাথের কথায়, “আর্থিক কারণে বছর দশেক নহবতও বন্ধ রয়েছে।” |