দীপাবলির পথে পথে ত্রিফলা আঁধার
ত্রিনয়নে অন্ধকার!
পথচারীর চোখে আলোর ঝলক লাগাতে, পর্যটকদের চোখ টেরিয়ে দিতে কালনার ১০৮ শিবমন্দির ঘিরে বসানো হয়েছিল ত্রিফলা আলো।
কিন্তু শিব-জায়া কালিকার বোধ হয় আঁধারই বেশি পছন্দ। দীপাবলির রাত আসার আগেই তাই একে-একে নিভেছে দেউটি! ত্রিনয়ন কানা!
প্রায় ন’মাস আগে বড় সাধ করে গোটা সাতান্ন ত্রিফলা আলো বসানো হয়েছিল কালনায়। মূলত শিবমন্দিরের আশপাশ জুড়েই। তার জন্য খুলে নেওয়া হয়েছিল আগের আলো। কিন্তু গোটা তল্লাট জুড়ে এখন আলো-ছায়া।
পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের সৌন্দর্য বাড়াতে বাহারি আলোর জন্য দরপত্র চেয়ে ঠিকাদার নিয়োগ করেছিল পুর বাস্তুকারের দফতর। তারাই পুরসভাকে জানায়, ত্রিফলা আলো লাগানোর জন্য ১৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এক ঠিকাদার সংস্থাকে কালনা শহরে ৫৭টি ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ লাগানোর বরাত দেওয়া হয়। ঠিক হয়, পুরো পরিকল্পনা রূপায়িত হওয়ার পরে পুরসভাকে বাতিগুলি দেখভাল করার দায়িত্ব দেওয়া হবে।
কোথায় কোথায় বাতিস্তম্ভ বসবে তা অবশ্য পুরবোর্ডের বৈঠকে ঠিক হয়নি। কালনার তৃণমূল বিধায়ক তথা পুরপ্রধান বিশ্বজিৎ কুণ্ডু ও কয়েক জন কাউন্সিলর নিজেরা কথা বলে তা স্থির করে নিয়েছিলেন। তার মধ্যে ছিল শহরের ঢোকার মুখে রাস্তার একাংশ, ১০৮ শিবমন্দির চত্বর, ফটকদ্বার এলাকা, শ্রীচৈতন্যের স্মৃতি বিজড়িত মহাপ্রভুপাড়া। সেই মতো ঠিকাদার সংস্থাকে জানিয়ে দেওয়া হয়। পরে যখন শিবমন্দিরের পাশে আলো বসে, পুরসভার ৪, ৭, ১২, ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের একাংশ সেই আলোয় সেজে ওঠে। যদিও ওই পাঁচ ওয়ার্ডেই রাস্তার এক পাশে ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ লাগানো হয়েছিল। ফলে যে বাহারের জন্য এই আলো লাগানো, তা তেমন খোলেনি।
—নিজস্ব চিত্র।
পাশাপাশি, কালনা শহরের বাকি ১৩টি ওয়ার্ড বঞ্চিত হল কেন, সেই প্রশ্নও উঠেছে। পুরকর্তাদের যুক্তি, যে ক’টি আলো লাগানো হয়েছে, গোটা শহর সাজাতে তার অন্তত দশ গুণ দরকার। ১০৮ শিবমন্দির দেখতে যে হেতু বহু পর্যটক আসেন, তার জন্য মূলত ওই এলাকা জুড়েই ত্রিফলা আলো লাগানো হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, গোপাল মন্দির, মহিষমর্দিনীতলার মাঠ বা শ’পাঁচেক বছরের পুরনো মসজিদ-ই-মজলিস এলাকা বঞ্চিত হল কেন? পুরপ্রধানের বক্তব্য, “আরও কয়েকটি জায়গায় ত্রিফলা আলো লাগানোর ইচ্ছা ছিল। কিন্তু মাটির তলা দিয়ে বেশি দূরে তার নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। তা ছাড়া, আমরা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ত্রিফলা বাতি পেয়েছিলাম।” পরে পুরসভার তহবিল থেকে অন্য জায়গাগুলিতেও ত্রিফলা আলো লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
সে তো পরের কথা। প্রথম দফায় যে সব রাস্তায় ওই আলো বসেছিল, সেগুলি আপাতত প্রায় অন্ধকার।
পুরসভা সূত্রের খবর, বিদ্যুৎ বিল কমানোর তাগিদে চার বছর আগে পুরসভা বেশির ভাগ রাস্তা থেকে ভেপার ল্যাম্প খুলে নিয়েছিল। তার পরিবর্তে বিভিন্ন ওয়ার্ডে সিএফএল ল্যাম্প লাগানো হয়। তাতে বিদ্যুৎ তুলনায় কম লাগে। এর পরে যে সব রাস্তায় ত্রিফলা আলো বসেছে, সেগুলি থেকে সিএফএল ল্যাম্প খুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু লাগানোর পর থেকেই একের পর এক ত্রিফলা বাতি খারাপ হয়ে যাওয়ায় সেই সব রাস্তা অন্ধকারে ডুবেছে। কোনওটিতে একটি আলো জ্বলে, কোনওটিতে দু’টি। কয়েকটিতে আবার একটি বাতিও জ্বলে না, পুরো অমাবস্যা।
মহাপ্রভুপাড়ার এক স্টেশনারি দোকানের মালিক প্রদীপ সিংহ জানান, প্রথমে দু’এক বার নষ্ট হওয়া আলো ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার পরে ফের যে-কে-সেই। হাঁটাচলা করাই দায়। পুরসভাকে সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। গৃহবধূ কল্পনা মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “১০৮ শিবমন্দির লাগোয়া এলাকায় মোটে কয়েক মাস আগে যে ত্রিফলা আলো লাগানো হয়েছিল, তার এখন করুণ দশা। সৌন্দর্য বাড়ার বদলে পর্যটকদের কাছে মাথা হেঁট হচ্ছে।” আর এক বধূ রমা কোলের মতে, “শহরের শ্রী ফেরাতে ত্রিফলাগুলি লাগানো হলেও সেগুলি কোনও কাজে লাগেনি।”
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে কাজের মান নিয়েই। উপ-পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগের অভিযোগ, “কম দামের স্বল্পায়ু আলো লাগানোতেই এত তাড়াতাড়ি খারাপ হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৮০ শতাংশ আলোই অকেজো।” তাঁর দাবি, এক-একটি বাতিস্তম্ভে আলো লাগাতে বড় জোর পাঁচ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। সেখানে ২০ হাজার টাকারও বেশি দরে বরাত দেওয়া হয়েছে। এই প্রশ্নের অবশ্য সদুত্তর মেলেনি।
রাস্তার আলো দেখভালের দায়িত্ব যে কাউন্সিলরের, সেই আনন্দ দত্তের অভিযোগ, “ত্রিফলা আলোর জন্য মাটির সাড়ে তিন ফুট নীচ দিয়ে তার নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মোটে ফুট দেড়েক তলা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে ভারী যান চলাচল করলেই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া আরও নানা প্রাযুক্তিক ত্রুটি রয়েছে। পুর বাস্তুকারের দফতরে চিঠি পাঠিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা ঠিকাদার সংস্থাকে জানিয়েছে।”
ঠিকাদার সংস্থা যখন সাড়ে তিন ফুটের জায়গায় দেড় ফুট নীচ দিয়ে তার নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, পুরকর্তারা কি ঘুমোচ্ছিলেন? পুরপ্রধানের যুক্তি, তাঁদের এর আগে এই ধরনের কাজ করানোর অভিজ্ঞতা ছিল না। তাই আগাম সতর্ক হওয়া যায়নি।
চেষ্টা করেও ঠিকাদার সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। পুর বাস্তুকারের দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রাযুক্তিক সমস্যার সমাধান হলে তবেই পুরসভার হাতে দেখভালের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে।
পরের দীপাবলিতে হয়তো উজ্জ্বল হবে ত্রিনয়ন!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.