কোথাও পুরনো মন্দির, কোথাও বা সুসজ্জিত মণ্ডপের আকর্ষণ। দুই মিলিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দশনার্থীদের ঢল নামল শিল্পাঞ্চলে। সর্বজনীন মণ্ডপের পাশাপাশি প্রাচীন ও পারিবারিক নানা পুজোতেও ভিড় ছিল ভালই।
প্রায় বারোশো বছরের পুরনো কুলটির কল্যাণেশ্বরী মন্দিরের শ্যামাকালী পুজোয় ভিড় জমান দূর-দূরান্তের বাসিন্দরা। ভোর থেকেই ভক্ত-সমাগম শুরু হয়ে যায়। বেলা যত গড়িয়েছে, ভিড়ও বেড়েছে ততই। কল্যাণেশ্বরী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত দিলীপ দেওঘড়িয়া বলেন, “জনৈক ইছাই ঘোষ কাশীপুর রাজবাড়িতে যাওয়ার পথে দিক ভুলে এখানে চলে আসেন। তিনিই এখানে শ্যামারূপার মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এই মন্দির ঘিরে বহু পৌরাণিক ও অলৌকিক কাহিনী প্রচলিত আছে।” তাঁর দাবি, “কালের বিবর্তনে কল্যাণেশ্বরী মন্দির দেশের একটি উল্লেখযোগ্য ধর্মস্থানে পরিণত হয়েছে।” |
দীপাবলির সন্ধ্যায় আলোর উৎসবে মেতেছে শিল্পাঞ্চলের অন্য এলাকাগুলিও। কোথাও থিম পুজো, কোথাও আবার সনাতনী ভাবধারায় শক্তির আরাধনা। আসানসোলের আপকার গার্ডেন সর্বজনীন মণ্ডপে আলোকসজ্জা ছিল আকর্ষণীয়। আপার চেলিডাঙা নির্ভীক ক্লাব সর্বজনীন ও হাটন রোডের নেতাজি সুভাষ সর্বজনীনের কালীপুজো এ বার ধুমধামের সঙ্গেই করা হয়। ৩২ ফুট উঁচু কালীমূর্তি দেখতে এ বারও মানুষ ভিড় জমিয়েছেন আসানসোল গ্রামের রামসায়ের ময়দানে। বেলুড় মঠের আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছে আসানসোলের ওয়েস্টার্ন স্পোর্টিংয়ের সর্বজনীনের মণ্ডপ। রূপনারায়ণপুরের আমডাঙা এলাকায় অগ্রতী সঙ্ঘ ও চিত্তরঞ্জনের বন্ধুমহল সর্বজনীনের পুজো দেখতেও ভিড় জমান অনেকে। বরাকরের বেগুনিয়া ব্যবসায়ী সমিতির পুজোও উল্লেখযোগ্য।
দুর্গাপুর শহর জুড়ে বিশাল বিশাল মন্ডপ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে গত কয়েক দিনে। ইস্পাত কলোনি হোক বা বীরভানপুর, বেনাচিতি বা মামরা বাজার সুভাষপল্লি। সব জায়গাতেই মণ্ডপ ঘিরে উন্মাদনা তুঙ্গে। বেশ কিছু পুজোর উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে সোমবারেই। বাকিগুলি হল মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাস্তায় ঢল নামে মানুষের। কালীপুজো উপলক্ষে বিভিন্ন ক্লাব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করে। স্থানীয় শিল্পীরা ছাড়াও যোগ দেন কলকাতার শিল্পীরা।
বিধাননগর পাম্পহাউস মোড়ের এসবি সরণির পুজোর এ বার প্রথম বর্ষ। শিল্পপতি সুদীপ দত্ত থাকতেন মুম্বইয়ের কান্ডিভেলিতে। সেখানেই ২০০০ সাল থেকে পুজো শুরু করেন। গত বছরও পুজো হয়েছে কান্ডিভেলির বাড়িতেই। ইদানিং তিনি মুম্বই ছেড়ে চলে গিয়েছেন সিঙ্গাপুরে। এ বার তাই পুজোর আয়োজন হয়েছে তাঁর দুর্গাপুরের পৈতৃক বাড়িতেই। একেবারেই বাড়ির পুজো। প্রতিমা এসেছে কুমারটুলি থেকে। পুজোর সন্ধ্যায় বসেছিল আড্ডা। শহর ও শহরের বাইরে থেকে সাংস্কৃতিক জগতের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই সেই আড্ডায় যোগ দিয়েছিলেন। ছিল সঙ্গীতের আসরও।
শহরের প্রাচীন মন্দিরগুলির মধ্যে ভিড়িঙ্গি শ্মশান কালী মন্দির, পিয়ালা কালী মন্দির, সিটি সেন্টারের নন-কম্পানি কালী মন্দিরে সকাল থেকেই হাজির হয়েছিলেন ভক্তের দল। পুজো শুরু হতেই বাড়তে থাকে ভিড়ও। |