মৃত্যুর ছায়ায় দিন কাটাচ্ছে উত্তর দরিয়াপুর। মালদহের এই গ্রামে ঘরে ঘরে ক্যানসারের রোগী। বাসিন্দারা জানান, এক বছরে ক্যানসারে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৫০ জনের। গোটা এলাকা আর্সেনিকপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত। তার উপরে এলাকায় বিড়ি বাঁধার শ্রমিকের সংখ্যাও বেশি। ধূমপান-সহ তামাকের নানা নেশার চলও যথেষ্ট। আতঙ্কে গ্রামের বাসিন্দারা।
দুই ভাই, সিতারুল শেখ ও সামরু শেখ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। কালিয়াচক ১ নম্বর ব্লকের নওদা যদুপুরের নেজামিঁয়া মাদ্রাসা পাড়ায় ক্যানসার আক্রান্ত জামসু শেখের বাড়ির লোকজনও দিশেহারা। নওদা যদুপুরের উত্তর দরিয়াপুর, নয়াবস্তি, সালেপুর, ইমামনগর, খিদিরবোনা গ্রামের ঘরে ঘরে ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীরা মৃত্যুর দিন গুনছেন।
বাসিন্দাদের দেওয়া মৃত্যুর পরিসংখ্যান অস্বীকার করেননি প্রশাসনের কর্তারাও। জেলা স্বাস্থ্য দফতর কিংবা জেলা প্রশাসন সম্প্রতি ওই সব গ্রামের রোগাক্রান্ত ও মৃতদের পরিসংখ্যান তৈরির কাজে নেমেছে। প্রাথমিক ভাবে স্বাস্থ্য দফতর জানতে পেরেছে, অর্থাভাবে ক্যানসারে আক্রান্ত বহু পরিবার চিকিৎসা করাতে পারছে না। তাই কার্যত বিনা চিকিৎসায় দ্রুত মৃত্যু হচ্ছে উত্তর দরিয়াপুরের ক্যানসার আক্রান্তদের। এলাকার ক্যানসারে আক্রান্ত ও মৃত পরিবারের লোকজনদের আশা, মুখ্যমন্ত্রী সাহায্য করবেন।
উত্তর দরিয়াপুরে বৃদ্ধ সামাউন শেখ বলেন, “২০০৭ সালে মেজভাই হাফিজুদ্দিন যকৃতের ক্যানসারে মারা যায়। এর পরে ২০১১ সালে আর তিন ভাইয়ের মৃত্যু হয় ক্যানসারে। ওই বছরই ভাইপো এসহাগ ক্যানসারে মারা যায়। ৮ বিঘা জমি বিক্রি করে ভাইদের চিকিৎসা করিয়েও বাঁচাতে পারিনি।” |
উত্তর দরিয়াপুরের মাদ্রাসাপাড়ার ৬৫ বছর বয়সী আবদুল খালেদ বলেন, “দু’বছর ধরে ফুসফুসের ক্যানসারে ভুগছি। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে ১৩টি কেমো নিয়ে কোনও মতে বেঁচে আছি। আমি যখন কলকাতায় গিয়ে চিকিৎসা করাতে যেতাম, সেই সময় গ্রামের ২৪-২৫ জন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী আমার কাছে আসতেন। তাঁরা জানতে চাইতেন কী ভাবে ক্যানসারের চিকিৎসা করাচ্ছি। এখন সেই ২৪-২৫ জনের মধ্যে কেউ বেঁচে নেই। সবাই এক বছরের মধ্যেই মারা গিয়েছেন।
সর্দারপাড়ার ক্যানসার রোগী বৃদ্ধা জাহিরন বিবি বলেন, “একবার কেমো নিয়েছি। আর টাকা জোগাড় করতে পারিনি। কেমো নেওয়ার পয়সা নেই, তাই এখন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করাচ্ছি।”
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বিধান মিশ্র বলেন, “এটা ঠিকই ওই এলাকায় যত মানুষ তিন-চার বছরে মারা গিয়েছেন, তাঁদের বেশিরভাগই ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। ওই এলাকায় ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বর্তমানে কত এবং কতজন ক্যানসারে মারা গিয়েছে সেই রিপোর্ট তৈরি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।”
বিধানবাবু বলেন, “কালীপুজোর পর ওই এলাকায় স্বাস্থ্য শিবির করে এলাকার মানুষদের ক্যানসার সম্পর্কে সচেতন করা হবে। সচেতনতা শিবির অবশ্য অনেকদিন আগেই করা উচিত ছিল। তা হলে ছবিটা অন্যরকম হতে পারত।” |