দৃশ্য এক) ম্যাচ শেষে স্ট্যানলির দিকে হনহন করে এগিয়ে যেতে দেখা গেল ওডাফাকে। সতীর্থের থেকে ঠিক মতো বল না পাওয়ার জন্য তাঁকে সটান বকাঝকা দিলেন বাগানের গোলমেশিন। যাঁর মেশিন এ দিন ‘স্টার্ট’ না নেওয়ায় সবুজ-মেরুনের খাতা খোলেনি।
দৃশ্য দুই) দু’পয়েন্ট খুইয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরা সহকারী কোচ মৃদুল বন্দোপাধ্যায়ের দিকে নেহরু স্টেডিয়ামের গ্যালারি থেকে এক মোহন-সমর্থক চেঁচিয়ে উঠলেন, “দয়া করে করিমকে ফোন করে ডেকে আনুন। না হলে দলের হাল এ রকমই হবে।”
দৃশ্য তিন) সাংবাদিক সম্মেলনে এসে ওএনজিসি কোচ সুব্রত (পটলা) ভট্টাচার্য সাফ বললেন, “মোহনবাগান তো দু’জন ফুটবলারের টিম। ওডাফা আর নবিকে আটকে দিলেই মোহনবাগানও আটকে যাবে। আজ সেটাই হল।”
চুম্বকে এটাই আজকের ওডাফাদের ফের হোঁচট খাওয়ার কাহিনি। মাঝমাঠে ডেনসন আর ডিফেন্সে ইচে ও নির্মল ছেত্রী ছাড়া কাউকে নজরে পড়ল না। যার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে গোটা দল-সহ লক্ষ লক্ষ সবুজ-মেরুন সমর্থক, সেই ওডাফা ওকোলি ওএনজিসি-র দুই ডিফেন্ডার সচিন গাওয়াস ও রবিন গুরুংয়ের পাহারায় আটক থাকলেন বেশির ভাগ সময়। দু-চার বার যা বেরোতে পারলেন তাতে কাজের কাজ কিছু হল না। ডেনসনের ক্রস থেকে ওডাফার শট বার ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। এর পর বক্সের বাঁ দিক থেকে নেওয়া ওডাফার ফ্রিকিক গোলকিপারকে পরাস্ত করেও বাইরে যায়। |
দ্বিতীয়ার্ধে পরপর দুটো সুযোগ পেয়েছিলেন ওডাফা। জুয়েলের পাস থেকে নেওয়া জোরালো শট দ্বিতীয় পোস্টের কোল ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। পরের মিনিটে ওডাফার টোকা ওএনজিসি গোললাইন অতিক্রম করেছিল। লাইন্সম্যান গোলের ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। কিন্তু সার্ভিসেসের রেফারি অর্জুনন সেটা বাতিল করেন। যদিও মোহন-ফুটবলাররা সে জন্য প্রতিবাদ-টতিবাদের দিকে যাননি। তার পরেও গোল করার সুযোগ এসেছিল তাঁদের সামনে। কিন্তু স্নেহাশিসের বাড়ানো ক্রসে একা গোলকিপারকে সামনে পেয়েও বাইরে হেড করে বসেন নবি।
খারাপ খেলার মধ্যেও যে ক’টা সুযোগ মোহনবাগান পেয়েছিল, সেগুলোও কাজে লাগাতে পারলে ওডাফাদের এ দিন গোমড়া মুখে মাঠ ছাড়তে হত না। আর বড় টিমের বিরুদ্ধে হাফটাইম পর্যন্ত গোল না খেলে ছোট দলগুলো শেষ পঁয়তাল্লিশ যা করে থাকে, ওএনজিসি-ও সেটাই করল নিজেদের ডিফেন্সে ফুটবলার বাড়িয়ে বুটের জঙ্গলের মধ্যে বিপক্ষের কোটি কোটি টাকার তারকাদের বন্দি করার ট্যাকটিক্স। ম্যাচের পর পটলা তাই বলতেই পারেন, “প্রয়াগকে আগেই আটকেছি। আজ আটকালাম মোহনবাগানকে। পরের ম্যাচে ডেম্পোকেও আটকাতে চাই। কারণ, বড় দলগুলোকে হারানোর দিবাস্বপ্ন আমি দেখি না।”
এ সব কথা বিপক্ষ কোচ যখন বলছেন, তখন শুকনো মুখে মৃদুল আক্ষেপ করছিলেন, “এক-এক দিন এমন হয়ে যায়। তা ছাড়া এতগুলো সুযোগ নষ্ট...।”. আসল কথাটা বলতে গিয়েও যেন বলার সাহস দেখালেন না করিম বেঞ্চারিফার সহকারী।
মোহনবাগান: শিল্টন, নির্মল, আইবর, ইচে, বিশ্বজিৎ, ডেনসন, নবি, জুয়েল, স্ট্যানলি (সাবিথ ৭০), স্নেহাশিস, ওডাফা। |