|
|
|
|
সুরজকুণ্ডে সংবাদ বৈঠক |
গ্যাসে ভর্তুকি নিয়ে ক্ষোভ বর্ষীয়ান নেতাদের
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
অসুবিধা নেই সংস্কারের পথে চলতে। কিন্তু বছরে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার সংখ্যা বছরে পরিবার পিছু মাত্র ছয়ে বেঁধে দেওয়ায় আপত্তি তুলছিলেন কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রীদের একাংশ। আজ দলের ‘সংবাদ বৈঠকে’ও সেই বিষয়টি সামনে চলে আসে। ক্ষোভ বার্তা দেওয়ার যে দলে ছিলেন দিগ্বিজয় সিংহ, কমল নাথের মতো বর্ষীয়ান নেতারা। এবং ছিলেন সনিয়া গাঁধীর ঘনিষ্ঠ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় নম্বর টু এ কে অ্যান্টনিও।
এই নেতা-মন্ত্রীদের দাবি, ভর্তুকির সিলিন্ডারের সংখ্যা বছরে ৬ থেকে বাড়িয়ে ১২ করা হোক। ২০১৩ সালের বাজেট হোক আরো জনমুখী। তাঁদের এই অসন্তোষের মুখে পড়ে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি এ দিন বলেছেন, ভর্তুকি মূল্যে দেওয়া রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়িয়ে মানুষকে কিছুটা সুরাহা দেওয়া যায় কি না, সে ব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন।
বস্তুত, লোকসভা ভোটের আগে দল ও সরকারের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই দিল্লির উপকণ্ঠে সুরজকুণ্ডে আজ দলের ‘সংবাদ বৈঠক’ ডেকেছিলেন সনিয়া। যাতে সরকার দলের বক্তব্য শোনে, এবং দল শোনে সরকারের কথা। সরকার ও দলের মধ্যে সেই সমন্বয়ের পরিবেশ তৈরি করার লক্ষ্যে সনিয়া তাই শুরুতেই বলেন, “বর্তমান আর্থিক সঙ্কটের পরিস্থিতিতে সরকার কিছু সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। যে কারণে সাধারণ মানুষকে খুবই দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। কিন্তু এই অবস্থায় মানুষের সামনে সরকারের সীমাবদ্ধতার কথা স্পষ্ট করে তুলে ধরা ও তাদের বোঝানোই এখন কংগ্রেসের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।” |
বাসে চেপে সুরজকুণ্ডের পথে সনিয়া। সামনে দেহরক্ষী। ছবি: পি টি আই |
তবে একই সঙ্গে সনিয়া এ-ও জানান, “দলের কিছু সতীর্থ সরকারের সিদ্ধান্ত এবং তা ঘোষণা করার সময় নিয়ে খুবই অবাক! সেই সঙ্গে কেন্দ্রের মন্ত্রীরা তাঁদের পরামর্শ ও উদ্বেগের কথায় গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে অসন্তুষ্ট।” লোকসভা ভোটে তৃতীবারের জন্য জিতে আসার স্বার্থে এই সমন্বয়ের অভাব দূর করার ব্যাপারে নির্দেশ দেন কংগ্রেস সভানেত্রী। বলেন, দলের উদ্বেগ আর সরকারের সীমাবদ্ধতা, এই দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করাই সব থেকে বড় কাজ। কংগ্রেস যেমন বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের পাশে দাঁড়াচ্ছে, তেমনই সরকারকেও দলের পাশে দাঁড়াতে হবে। দলের বক্তব্য সরকারের সামনে তুলে ধরার জন্য আজ কংগ্রেসের একটি সমন্বয় কমিটিও গড়ে দেন কংগ্রেস সভানেত্রী। যে কমিটির তিনটি সাব গ্রুপও থাকবে। তবে ২০০৯ সালের ভোটের ইস্তেহারে যে সব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, আগামী ১৮ মাসে সেগুলি পূরণের উপরেও জোর দিয়েছেন তিনি।
বৈঠকের শুরুতে আজ সনিয়ার বক্তৃতার পরেই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ আর্থিক সঙ্কট, আর্থিক ঘাটতির পরিস্থিতি ও বৃদ্ধির পথে অর্থনীতিকে ফেরানোর জন্য সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। কিন্তু তার পর দিগ্বিজয় সিংহ, জগদীশ টাইটলার, শ্রীপ্রকাশ জয়সওয়াল, শাকিল আহমেদ, কমল নাথের মতো নেতা-মন্ত্রীরা গ্যাসের ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে সরব হন। বলেন, খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষ খুব বেশি মাথা ঘামাচ্ছে না। কিন্তু রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি কমানো মানে সরাসরি হেঁসেলে আঘাত করা। শীতকালীন অধিবেশনে সরকারকে কোণঠাসা করতে এটাই হবে বিরোধীদের প্রধান হাতিয়ার। আর এক ধাপ এগিয়ে টাইটলার বলেন, হিমাচল প্রদেশ নির্বাচনের মাত্র ৭২ ঘণ্টা আগে যে ভাবে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল, তা আত্মঘাতী পদক্ষেপ ছাড়া আর কিছু নয়।
আর কমল নাথের কথায়, এ ভাবে চললে লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের পরাজয় অনিবার্য। এই বিক্ষুব্ধ ব্রিগেডের সঙ্গে ছিলেন বর্তমানে মন্ত্রিসভার অলিখিত নম্বর ‘টু’ ব্যক্তি এবং সনিয়ার আস্থাভাজন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি। তিনি বলেন, কংগ্রেস আম-আদমির পার্টি। সুতরাং তাঁদের স্বার্থের কথা সবার আগে ভাবতে হবে।
সনিয়া-মনমোহনের মতো আজ বৈঠকে মত জানান রাহুল গাঁধীও। সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়ায় তিনি সমর্থন জানান ঠিকই। তবে প্রকল্প রূপায়ণে দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেন। তাঁর বক্তব্য, “আমলান্ত্রিক জটিলতায় বহু প্রকল্প রূপায়ণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব হচ্ছে। কিন্তু লোকসভা ভোটের আর বিশেষ বাকি নেই। তাই কাজে গতি আনা জরুরি।”
কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, সামাজিক প্রকল্পে গতি আনার ব্যাপারেই জোর দিতে চেয়েছেন রাহুল। কংগ্রেসও তাই চাইছে। কারণ, গত লোকসভা ভোটে একশো দিনের কাজের মতো সামাজিক প্রকল্প রূপায়ণকে অস্ত্র করেই ভোটে সোনা ফলিয়েছিল কংগ্রেস। খাদ্য সুরক্ষার মতো আইন পাশ ও তার রূপায়ণ করে এ বারও সেই পথে হাঁটা জরুরি।
তবে কংগ্রেসের নেতারাই যে আজ বৈঠকে কেবল ক্ষোভ জানিয়েছেন, তা নয়। সরকারের অসন্তোষও বেরিয়ে এসেছে। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি আজ বৈঠকে বলেন, দলের প্রচারযন্ত্র ঠিক মতো কাজ করছে না। সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তগুলির পক্ষে দাঁড়িয়ে যে ভাবে কংগ্রেসের পাল্টা সওয়াল করা উচিত, তা হচ্ছে না। সেই সঙ্গে কংগ্রেসের আচরণও নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি করছে। তা-ও শুধরোনো প্রয়োজন। সরকারের মধ্যেকার দ্বন্দ্বও বেরিয়ে আসে যখন পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্র না পাওয়ায় প্রকল্প আটকে থাকা নিয়ে যে অভিযোগ করেছিলেন পি চিদম্বরম, তার বিরোধিতা করেন পরিবেশমন্ত্রী জয়ন্তী নটরাজন। |
|
|
|
|
|