সিনেমা সমালোচনা...
রোম্যান্টিকতা ছুঁয়ে থাকার চেষ্টা
প্রতিম ডি গুপ্তাকে অনেকেই চেনেন একজন সফল সিনেমা সমালোচক হিসেবে। কিন্তু এক জন আলোকপ্রাপ্ত শিল্প সমালোচক যে এক জন সার্থক শিল্প স্রষ্টাও হবেন এর কোনও মানে নেই। প্রায়শই অতিরিক্ত পাণ্ডিত্য শিল্প সৃষ্টির পক্ষে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু প্রতিম নিজের প্রথম ছবি ‘পাঁচ অধ্যায়’কে উতরে দিয়েছেন। তাঁর বহু দেখা, বহু চর্চার ভারটা চাপিয়ে দেননি ছবিটার ওপর।
বরং ‘পাঁচ অধ্যায়’ দেখতে দেখতে চিত্রনাট্য, ভাব এবং আঙ্গিকের সরলতা বিস্মিত করে আমাদের। সম্ভবত এই সরলতার কারণে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের মতো একটা বিষয়কে অবলম্বন করে তৈরি হলেও ছবির নিজস্ব চরিত্রটা বজায় থাকে। কোথাও কোনও উগ্রতা নেই। হয়তো তাই ঈশিতার গর্ভ নষ্ট হওয়ার দৃশ্যে ঈশিতাই অনুপস্থিত থাকে পর্দায়।
গল্পে একটা দায়বদ্ধ সম্পর্কের মধ্যে ঢুকে আসে কিছুটা অপরিণতমনস্ক কামনা-বাসনা জর্জরিত অন্য একটা সম্পর্ক। যা অবৈধ এবং তার পর পুরো জায়গাটা অধিকার করে নেয় তার চেয়েও অবৈধ একটা মৃত্যু, যে মৃত্যুর সান্নিধ্যে থাকার পর, মৃত্যুর সঙ্গে রোম্যান্স করার পর, তুচ্ছ হয়ে যায় ছবির নায়কের রক্তমাংসের মানবীর সঙ্গে রোম্যান্স করার সাধ।
পাঁচ অধ্যায়
প্রিয়াংশু, দিয়া, সম্পূর্ণা
‘পাঁচ অধ্যায়’ ছবিটির প্রতিটি ফ্রেমেই রয়েছে এই রোম্যান্টিকতাকে ছুঁয়ে থাকার চেষ্টা। সেটাই চিত্রনাট্যে ঘটনার বাস্তবতা অনেকটাই অপরিপুষ্ট করেছে। সুদৃশ্য কাচের শিশির তরলে যে ভাবে ভেসে ভেসে থাকে জারিত অলিভ, ঠিক সেভাবেই এ ছবির চরিত্রগুলো ভাসমান।
সে কারণেই কখনও কখনও মনে হয় সিনেমা কি ক্রমশ ছবি করিয়েদের (দর্শকদেরও?) এক প্রকারের সৌন্দর্য উচ্চাকাঙ্ক্ষারই ফসল হয়ে উঠছে? যেখানে সবই খুব সুন্দর হবে, সুন্দর পোশাক, সুন্দর সেট, সুন্দর বিচ্ছেদ, সুন্দর অবৈধ সম্পর্ক এবং অপরূপ মৃত্যু? ইদানীং অনেক ছবিই নিঃসঙ্গতা, একাকিত্ব খুব সুন্দর করে দেখায়। চিত্রনাট্যের কাটাছেঁড়া যেন সবাই কেমন এড়িয়ে চলছে। তীব্র সব আবেগ, অনুভব আর যন্ত্রণা সবই নরম আলোর নীচে এনে দাঁড় করানো হচ্ছে। এই ছবিতেও একই বাড়িতে বাস করা স্বামী-স্ত্রীর স্বামীটি টেরই পাচ্ছেন না যে স্ত্রীর ক্যান্সার হয়েছে। আর ছ’ মাস আয়ু বাকি! ক্যান্সারের মতো দানবকে কী করে গোপন প্রেমিকের মতো লুকিয়ে রাখতে পারে কেউ? কোথায় ক্যান্সার, কী ধরনের ক্যান্সার আমরা জানতে পারি না। দিয়া মির্জার চুলের কার্ল থেকে ত্বকের জেল্লায় কোথাও একটা আঁচড়ও ফেলল না এই ভয়াবহ অসুখ। আর সেটা জানার পর তাঁকে বাঁচানোর কোনও চেষ্টা করলেন না তাঁর স্বামী। শুধু শেষের ক’টা দিন ‘কোয়ালিটি টাইম’ কাটিয়ে স্ত্রীর আবহমান প্রেমিক হয়ে উঠলেন। এই রোম্যান্টিকতার উৎপত্তি ঠিক কোথায়?
ছবিটার বাইরে বেরিয়ে এ কথাও মনে হয় যে এখনও নারীর ওপরে মৃত্যুকে, দেশপ্রেমকে, আর্তের সেবাকে স্থান দেওয়ার মেল শভিনিজম চলে আসছে। কখনও নারীকে বাতিল করার মধ্যেই নিজেকে মহান মনে করে পুরুষ। রঞ্জাবতীকে গ্রহণ করে আবার ত্যাগ করার মধ্যে যেন এই মানসিকতাটাই প্রতিফলিত হয়।
কলকাতার অলিগলি নিজেই এখন একটা সিনেমার বিষয়। পরিচালক নিউ ইয়র্কের মতো অ্যাপার্টমেন্ট, মানব-মানবীর একাকীত্ব আর কলকাতার বিশৃঙ্খল জনজীবন দুটোকেই মেলানোর চেষ্টা করেছেন। শান্তনু মৈত্রের সুর বারবার ছুঁয়ে যায় মনকে। তাঁর সুরই এই ছবির উৎকৃষ্ট দৃশ্যাবলিকে ঘনীভূত করে তুলতে সাহায্য করে। যেমন গঙ্গার ধারের দৃশ্যটা, যেখানে দিয়া স্বামীকে জানায়, ‘আই অ্যাম ডাইং’!
প্রিয়াংশু চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় যথাযথ। দিয়ার চরিত্রটি প্রাণ পেয়েছে। সম্পূর্ণা অভিনীত রঞ্জাবতীর মধ্যে রয়েছে তারুণ্যের বেহিসেবি দম্ভ আর আবেগ। তাঁকে চোখের ভাষা ব্যবহারটা শিখতে হবে। ছবিটা বসে দেখা যায় এবং শেষ দৃশ্য আর গান মনকে বিষণ্ণ করে রাখে অনেকক্ষণ!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.