এন আর এস
রবিবার ছুটি চাই, আউটডোর বন্ধ হচ্ছে ক্যানসারের
পুজোয় টানা ছুটি পেলে মন ভাল থাকে, রবিবার কাজ করতে হলে আপত্তির ঝড় ওঠে। সরকারি হাসপাতালে এমন কর্মসংস্কৃতির জন্যই রবিবারের ক্যানসার আউটডোর বন্ধ হয়ে গেল নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। রাজ্য তথা সারা দেশে নজির গড়ে বছর দেড়েক আগে এই আউটডোর চালু হয়। কিন্তু চিকিৎসক, নার্স, চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের মিলিত আপত্তিতে নভেম্বর থেকে সেখানে তালা পড়ছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে অন্য বিভাগের আউটডোরও রবিবার খোলা হতে পারে, এই আশঙ্কায় আপত্তি তুলেছেন অন্য বিভাগের চিকিৎসক-নার্সরাও। এমন সিদ্ধান্তে আতান্তরে পড়তে চলেছেন সপ্তাহের অন্যান্য দিনে কাজ কামাই করে আসতে না পারা বহু ক্যানসার রোগী ও তাঁদের পরিবার।
তড়িঘড়ি এমন একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হল কেন? এনআরএসের অধ্যক্ষ প্রদীপ ঘোষ বলেন, “যা বলার সুপার বলবেন।” সুপার স্বপন সাঁতরা বলেন, “একটা আউটডোর চালাতে চিকিৎসক, নার্স, জিডিএ মিলিয়ে ন্যূনতম ১৫-২০ জন কর্মীর প্রয়োজন। রবিবার কাজ করাতে হলে সপ্তাহের অন্য দিন তাঁদের ছুটি দিতে হয়। অথচ রবিবার যথেষ্ট রোগী হয় না। আলো-পাখা জ্বলছে। তার চেয়ে বন্ধ করে দিয়ে ভালই করছি।”
রবিবার আউটডোরে রোগীর সংখ্যা বাড়াতে তাঁরা কতটা উদ্যোগী? ওই দিন আউটডোর খোলা থাকার কথা প্রচারের জন্য কী ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে? সুপারের কাছে জবাব মেলেনি।
ক্যানসার বিভাগের প্রধান চিকিৎসক অমিতাভ রায় বলেন, “রবিবারের আউটডোরের ব্যাপারে কাউকেই রাজি করানো যাচ্ছে না। অন্য বিভাগের আউটডোরগুলিও যদি খোলা থাকত, তা-ও না হয় চেষ্টা করতাম।”
এই সিদ্ধান্তকে দুর্ভাগ্যজনক বলেছেন স্বাস্থ্যকর্তাদের একটা বড় অংশ। তাঁদের বক্তব্য, বর্তমান সরকারের নীতি মেনেই রবিবার আউটডোর খোলা হয়েছিল। তা এ ভাবে বন্ধ করা খুব খারাপ দৃষ্টান্ত তৈরি করছে। এনআরএসের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান, খোদ শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু এই উদ্যোগকে গোড়া থেকেই সমর্থন করেন। বন্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত তাঁর জানাই ছিল না। শুনে তিনি বলেন, “এটা কোনও ভাবেই মানা যায় না। আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। শুধু ওই বিভাগ নয়, এর সঙ্গে সাযুজ্য রেখে রক্ত পরীক্ষা এবং এক্স-রেও চালু রাখতে হবে।”
২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে চালু হয়েছিল এনআরএসের রেডিওথেরাপি বিভাগের রবিবারের আউটডোর। রোগী দেখার সঙ্গে সেখানে রেডিয়েশন দেওয়ারও ব্যবস্থা হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা থেকেই তাঁরা ছুটির দিনে আউটডোর খোলার প্রয়োজনীয়তা টের পেয়েছেন। কারণ? প্রথমত, দিন আনা-দিন খাওয়া মানুষের পক্ষে কাজ কামাই করে হাসপাতালে আসা সম্ভব হয় না। চিকিৎসায় অযথা দেরি হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, ছুটির দিনে বাস-ট্রেনে ভিড় কম থাকে, যন্ত্রণাকাতর ক্যানসার রোগীদের যাতায়াতে সুবিধা হয়। বহু ক্ষেত্রেই অন্তিম পর্যায়ের রোগীদের ব্যথা উপশমে সপ্তাহে এক দিন রেডিয়েশন দিতে হয়। অন্যান্য দিন ভিড় থাকে বলে রবিবারকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল। রবিবারের আউটডোর বন্ধ হলে ওই রোগীরাও সমস্যায় পড়বেন।
মূলত যাঁর উদ্যোগে ওই আউটডোর চালু হয়, সেই চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় সম্প্রতি আরজিকরে বদলি হয়েছেন। তিনি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের সিদ্ধান্ত বলে এড়িয়ে যান।
কেন দায়িত্ব বাড়লে এমন প্রতিরোধ তৈরি হয়? স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্ব নেওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন একাধিক বার দরিদ্র রোগীর স্বার্থ দেখার ব্যাপারে চিকিৎসকদের গুরুত্ব দিতে বলেছেন, সেখানে কেন এমন অনীহা? সিপিএম সমর্থিত চিকিৎসক সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর তরফে সত্যজিৎ চক্রবর্তী বলেন, “কী আর বলব? ধীরে ধীরে অন্য বিভাগগুলিতেও এমন নজির চালু হতে পারত। দেশকে দিশা দেখাতে পারত এ রাজ্য। তা হল না, এটা দুর্ভাগ্যজনক।”
তৃণমূল কংগ্রেস-সমর্থিত চিকিৎসক সংগঠন ‘প্রোগ্রেসিভ সার্ভিস ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সহ-সভাপতি শ্রীকৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, “একটা ভাল উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যাওয়া একেবারেই সমর্থনযোগ্য নয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব সময়ে গরিবের সুবিধা করতে চান। আমরা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.