রাস্তায়, বারান্দায়, রান্নাঘরে এক হাঁটু জল। তাও প্রায় তিন মাস।
এই এক ভাবে জল জমে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর ২-এর দমকল-পিরখালি গ্রামের দু’টি স্কুল এবং একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে। জমা জলে শ্যাওলা, নোংরা জমে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ফলে মাস খানেক ধরে পঠনপাঠন বন্ধ ওই দু’টি স্কুলে। এলাকার অন্য একটি বাড়িতে চলছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি। সাপখোপ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অসুস্থ হয়ে পড়ার ভয়ে অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠান না। নিয়মিত স্কুলে যান শিক্ষকেরা। অভিযোগ, এই অচলাবস্থার কথা প্রশাসনে দীর্ঘদিন ধরে জানানো হচ্ছে। কিন্তু সুরাহা হচ্ছে না।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মথুরাপুর-২ ব্লকের দমকল পঞ্চায়েতের দমকল-পিরখালি গ্রামের প্রাথমিক স্কুলটি ১৯৫৩ সালে চালু হয়েছিল। তারপরে ওই জমিতেই তৈরি হয় জুনিয়র হাইস্কুল এবং অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি। দোতলা ভবনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ১৩৭। জুনিয়র হাইস্কুলের পড়ুয়া রয়েছে ৬০ জন। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পরিষেবা পান শিশু, প্রসূতি মিলিয়ে ৬৮ জন।
বর্ষার সময় স্কুলের সামনের রাস্তায়। জল দাঁড়িয়ে যায় দু’টি স্কুল এবং অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের বারান্দায় ও রান্নাঘরে। কয়েক মাস ধরে বৃষ্টির জল দাঁড়িয়ে থাকা জল থেকে দূষণ ও দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এ দিকে, বিদ্যালয়ে নেই কোনও নলকূপ। এই পরিবেশে পড়াশোনা করতে চরম সমস্যায় পড়েছে ছাত্রছাত্রীরা। গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে জল নিকাশি ব্যবস্থা-সহ আরও কয়েক দফা দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তারপরেও স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা না নিতে পারায় গ্রামবাসীরা গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দেন। |
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তৈরির সময় স্কুলের পাশে জল নিকাশের ব্যবস্থা ছিল। বছর কয়েক আগে স্কুলের পাশে একটি বাড়ি তৈরি হওয়ায় এবং যাতায়াতের রাস্তা অনেকটা উচু হওয়ায় বর্ষার জল জমছে স্কুলের সামনের রাস্তায়। এমনকি দু’টি স্কুলের বারান্দায় ও মিড-ডে মিলের রান্নাঘরে জল ঢুকে যায়। গত কয়েক বছর ধরে পঞ্চায়েত এবং গ্রামবাসীরা মিলে পাম্প বসিয়ে জমা জল বের করে রাস্তা ঠিক রাখতেন। কিন্তু সেই ঝক্কি পোহাতে রাজি নন কেউ।
প্রাথমিক স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সঞ্জীব হালদার বলেন, “এই নোংরা জায়গায় ক্লাস নিতে অসুবিধা হচ্ছে। রান্নাঘরে জল জমে থাকায় মিড ডে মিল বন্ধ। এই অবস্থায় অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে রাজি নন। আমি নিয়মিত স্কুলে এসে ফিরে যাচ্ছি। বিষয়টি প্রশাসনে জানানো হয়েছে। কাজ হয়নি।” একই দাবি গ্রামশিক্ষা কমিটির সভাপতি প্রশান্ত হালদারের। স্থানীয় বাসিন্দা রত্নেশ্বর ভাণ্ডারী, প্রদীপ হালদার বলেন, “এই পরিবেশে ছেলেমেয়েদের পাঠাতে ভয় পাচ্ছি। হাটু সমান জল ঠেলে স্কুলে যাচ্ছে। জমা জলে পা পিছলে পড়ে ব্যাথা পাচ্ছে, জামা-বই ভিজিয়ে ফিরছে।”
জমা জল, দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ ছাত্রছাত্রীরাও। জুনিয়র হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিরাপদ দেবনাথ বলেন, “স্কুল বন্ধ রাখিনি। তবে এই পরিবেশে পড়ানো সম্ভব নয়। অধিকাংশ পড়ুয়া আসতে চায় না।” অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা অরুণা হাজরা বলেন, “রান্নাঘর জলে ডুবে। ঘরের মধ্যেও জল জমে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।” মথুরাপুর পূর্ব চক্রের বিদ্যালয় পরিদর্শক পলাশ রায় বলেন, “স্কুলে যাওয়ার রাস্তায় জল জমে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ওই জল সরাতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” বিডিও নিরঞ্জন কর বলেন, “সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।” |