টেস্টে ছ’নম্বরের লড়াইয়ে এ বার মনোজও
দুই নয়, লড়াই তিন জনের। যুবরাজ সিংহ, সুরেশ রায়নার সঙ্গে বাংলার মনোজ তিওয়ারি।
জাতীয় নির্বাচকেরা সিসিআই ক্লাব হাউসে বসে দেখছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের সবথেকে বড় যোদ্ধার লড়াই। যুবরাজ সিংহ ছাড়া তিনি আর কে হতে পারেন? চার নম্বরে নামলেন যুবরাজ। একটু পরেই পাঁচে ব্যাট হাতে সুরেশ রায়না। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারত ‘এ’-র প্রথম ইনিংস দেখার মাঝে-মাঝে যাও বা বক্স ছেড়ে বেরোচ্ছিলেন নির্বাচকেরা, এ বার তাও বন্ধ হয়ে গেল। দু’জনের মধ্যে কে ভাল, পরখ করার এর চেয়ে ভাল রাস্তা আর কী আছে? কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ধোনির টেস্ট দলের ব্যাটিং অর্ডারের ছ’নম্বর জায়গার দাবিদার হিসেবে নির্বাচকদের ডায়েরিতে নিজের নামটা লিখে দিলেন অন্য এক জন বাংলা অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি। লাঞ্চের পর মনোজ ছ’নম্বরে ব্যাট করতে নেমে যখন ইংরেজ বোলারদের চোখে সর্ষে ফুল দেখাচ্ছেন, ক্লাব হাউসের একেবারে উপরতলার বক্সে গিয়ে বসলেন জাতীয় নির্বাচকেরা। মনোজ-দর্শনে যাতে কেউ বিরক্ত না করতে পারেন তাঁদের। অ্যান্ডারসন-সোয়ানদের হিমশিম খাইয়ে মঙ্গলবার ব্রেবোর্ন স্টেডিয়ামে ৯৩ রানের যে ইনিংসটা খেললেন মনোজ, তাতেই আগামী সোমবারের নির্বাচনী বৈঠক যে জমে গেল, কোনও সন্দেহ নেই।
তিন ঘন্টা ২১ মিনিট ক্রিজে ছিলেন। খেললেন দেড়শো বল। এর মধ্যে এক ডজন বাউন্ডারি। একটু আগে সাতটা বাউন্ডারি, চারটে ছক্কা মেরে যে মারমুখী মেজাজ দেখিয়ে গিয়েছেন যুবরাজ, তার তুলনায় হয়তো কিছু নয়। কিন্তু যে নিখুঁত টেস্টসুলভ ধৈর্য আর টেকনিক সারা ইনিংসে দেখালেন মনোজ, তাতে তিনি এই মুহূর্তে টেস্ট দলেও বড় দাবিদার। পূর্বাঞ্চল নির্বাচক সাবা করিম অবশ্য এখনই এই নিয়ে কিছু বলতে নারাজ। তবে রায়না-যুবরাজ দুজনেই ১৫ জনের দলে থাকতে পারেন কি না, নাকি মনোজের কপাল খুলবে এই প্রশ্নে রজার বিনি বললেন, “বলা যাচ্ছে না। অনেক কিছুর উপর নির্ভর করছে ব্যাপারটা।” রায়নার পারফরম্যান্স (৩৭ মিনিট উইকেটে থেকে ২০ রান) নির্বাচকদের যে বিশেষ মনে ধরেনি তা নিয়ে সন্দেহ নেই। সাবার ভোট ও সম্ভবত বিনির ভোটও পেতে পারেন মনোজ। উত্তরাঞ্চলের বিক্রম রাঠৌড়ও অল্প কথায় মনোজের প্রশংসাই করলেন। মুম্বইয়ের বাসিন্দা হয়েও চেয়ারম্যান সন্দীপ পাটিলকে অবশ্য এ দিন দেখা যায়নি ব্রেবোর্নে। তবে পাঁচ জন নির্বাচকের তিন জনকে যদি খুশি করতে পারেন মনোজ, তা হলে টেস্ট দলে তাঁর জায়গা হবে না কেন?
প্রাক্তন নির্বাচক প্রধানদের চোখে
যুবরাজ-রায়না দু’জনেই ভাল। কিন্তু মনোজ যা দেখিয়ে দিল তাতে তো নির্বাচকদের কাজটা আরও কঠিন হয়ে গেল।

১৫ জনের দলে না হয় থাকবে। কিন্তু চূড়ান্ত এগারো তো ধোনি বাছবে। তাই নির্বাচকদের চেয়েও অধিনায়ক কাদের বাছবে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।

মুম্বই ক্রিকেটমহলের সবথেকে প্রাচীন পীঠস্থান ব্রেবোর্ন স্টেডিয়ামে গতকাল পা রাখা ইস্তক যে সব গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল সেগুলো এক করলে দাঁড়ায়, ‘কেমন গালফোলা হয়ে গিয়েছে যুবরাজ। ও কী করে পাঁচ দিনের টেস্ট ক্রিকেট খেলবে?’ মঙ্গলবার সেই গুঞ্জনগুলোকে আরবসাগরে ছুড়ে ফেলে দিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা প্রত্যাবর্তনকারী। যুবরাজের ৫৯ রান হয়তো সংখ্যার দিক থেকে তেমন কিছু নয়, কিন্তু যেখানে ব্যাটে রানের চেয়ে প্রত্যয়ই বেশি বিবেচ্য, সেখানে এমন ইনিংসের তুলনা আছে কি? হায়দরাবাদে দলীপ ট্রফির সেমিফাইনালে সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি পাঁচ দিনের ক্রিকেটের জন্য তৈরি। এ দিন বুঝিয়ে দিলেন তাঁর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং দীর্ঘমেয়াদি ক্রিকেটের পক্ষেও রীতিমতো মানানসই। ৫৯ রানের মধ্যে ৫২-ই এল বাউন্ডারির বাইরে বল পাঠিয়ে। ইনিংসটা শুরুই করেছিলেন দুর্দান্ত লেগ-গ্লান্স দিয়ে। ক্যানসারকে হারানো যুবরাজ এখন আত্মবিশ্বাসের আস্ত এক ভাণ্ডার।
যুবরাজ যদি হন ঝড়, মনোজ তা হলে হিমশৈল। যে রকম মাথা ঠান্ডা রেখে খেললেন, তাতে অবাক দিলীপ বেঙ্গসরকর, কিরণ মোরেরাও। দুই প্রাক্তন নির্বাচক প্রধানকে জিজ্ঞাসা করাতে তাঁরাও বেশ ধন্দে পড়ে গেলেন। সিসিআইয়ের ভিআইপি বক্সে বিদেশি বন্ধুদের সামলানোর ফাঁকে দিলীপ বললেন, “যুবরাজ, রায়না, দুজনেই ভাল। কিন্তু মনোজ যা দেখিয়ে দিল, তাতে তো নির্বাচকদের কাজ আরও কঠিন হয়ে গেল।” আসল কথাটা বললেন মোরে, “পনেরো জনের দলে না হয় তিন জনের মধ্যে দু’জনই থাকবে। কিন্তু মাঠে নামবে তো এক জনই। সেখানে তো ধোনির উপরই ছাড়তে হবে দলটা। সুতরাং নির্বাচকরা কী দল বাছল, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল প্রথম এগারো কাদের বাছল অধিনায়ক।” ইঙ্গিতটা স্পষ্ট মনোজকে টেস্ট দলে নেওয়া হলেও হয়তো সেই পর্যটক হয়েই থাকতে হবে। ওয়ান ডে কিংবা টি-টোয়েন্টির মতোই।
ক্রিকেট মহলে কিন্তু একটা গুঞ্জন রয়েছে, ‘প্রিয় রায়না’কে যাতে মাঠে নামানোর সুযোগ না পান ধোনি, সে জন্য তাঁকে ১৫ জনের দলেই না রাখা হতে পারে। এই ভাবনায় মনোজের এ দিনের ইনিংসটা তাঁদের সাহায্য করবে জেনে কয়েক জন নির্বাচক স্বস্তিই পাচ্ছেন। তবে ধোনির ভারতের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে ভারত ‘এ’ দলের কাছেই যে রকম কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন ইংরেজ বোলাররা, সেটাই কী কম অবাক করার মতো? এক দিনে ৩৬৯ রানের বোঝা ঘাড়ে চাপায় কুক-ফ্লাওয়ারের শিবির চিন্তায়। এর মধ্যে আবার নির্ভরযোগ্য পেসার স্টিভন ফিনের আজ ৪ ওভার বল করেই ডান ঊরুর পেশিতে চোট লাগে। সফরের প্রথম দিন থেকেই ইংল্যান্ডের দুর্ভোগ শুরু হয়ে গেল নাকি?

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ভারত ‘এ’
প্রথম ইনিংস ৩৬৯-৯

(মনোজ ৯৩, মুকুন্দ ৭৩, যুবরাজ ৫৯, রায়না ২০, ইরফান ৪৬,
ঋদ্ধিমান ২০, ব্রেসনান ৩-৫৯, সোয়ান ৩-৯০)।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.