প্রতিরোধ উড়িয়ে স্যান্ডির হানা, সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত নিউ ইয়র্ক
শঙ্কা ছিলই। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও করা হয়েছিল প্রশাসনের তরফে। কিন্তু মঙ্গলবার ভোরে যখন উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকূলে স্যান্ডি আছড়ে পড়ল তখন সব প্রতিরোধ ব্যবস্থাই খড়কুটোর মতো উড়ে গেল।
প্রায় প্রতি বছরই হারিকেনের কবলে পড়ে আমেরিকা। কিন্তু এদের মধ্যে স্যান্ডিই সব থেকে শক্তিশালী হবে বলে আগে থেকেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন আবহবিদেরা। তাঁদের আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করে ঘণ্টায় প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়ল স্যান্ডি। তার ধাক্কায় সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত নিউ ইয়র্ক আর নিউ জার্সি।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, নিউ জার্সি, নিউ ইয়র্ক, মেরিল্যান্ড, নর্থ ক্যারোলাইনা, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া, পেনসিলভ্যানিয়া, কনেক্টিকাট-সহ নানা জায়গা থেকে ৩৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। তাদের মধ্যে ৮ বছরের এক বালকও রয়েছে। বাড়ির উপর গাছ পড়ায় মৃত্যু হয়েছে নিউ ইয়র্কবাসী ৩০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
প্রশাসন সূত্রে খবর, বন্যার আশঙ্কায় উপকূল সংলগ্ন নিচু এলাকা থেকে প্রায় ১০ লক্ষ লোককে নিরাপদ জায়গায় সরার নির্দেশ দেওয়া হয়।
নতুন ধরনের কোনও জলযান নয়। স্যান্ডির দাপটে জলের তলায় নিউ জার্সির একটি ট্যাক্সিস্ট্যান্ড।
ভোরের আলো ফুটতেই ছবির মতো সাজানো শহর দু’টিকে চেনাই যাচ্ছিল না। যে দিকেই তাকানো যায়, দেখে মনে হল প্রচণ্ড আক্রোশে কোনও দৈত্য যেন রাস্তার দু’পাশে থাকা সব কিছুকে তুলে আছড়ে ভেঙে ফেলেছে। সাজানো গোছানো কাঠের বাড়িগুলো মাটিতে মিশে গিয়েছে। গাড়ি, বাড়ির উপরে গাছ ভেঙে পড়েছে। আহত শতাধিক। ঝড়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে প্রবল বৃষ্টি। শেষ পাওয়া খবর পর্যন্ত এখনও বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধারকাজ। নিউ ইয়র্কের নির্মীয়মাণ ৯০ তলা বাড়ি থেকে প্রচণ্ড ঝোড়ো হাওয়ার দাপটে ছিঁড়ে নীচে পড়ে যায় একটি ক্রেন।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ঝড় আসার মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যেই নিউ ইয়র্ক ও নিউ জার্সি শহরের বিভিন্ন জায়গায় ৪-৫ ফুট জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। নিউ ইয়র্কের একটা বহুতলের বাসিন্দা উইলিয়াম ওয়েক বললেন, “ঝড়ের দাপট কিছুটা কমলে বাইরে গিয়ে মনে হল আমাদের অ্যাপার্টমেন্টটা যেন একটা দ্বীপ। হারিকেন ক্যাটরিনাকেও এতটা ভয়ঙ্কর লাগেনি আমার।”
নিউ ইয়র্ক শহরের সাবওয়ে প্রায় ১০৮ বছর পুরনো। শহরের মেট্রোপলিটান ট্রান্সপোর্টেশন কর্তৃপক্ষের দাবি, এত বছরে এমন ভয়াবহ অবস্থার মুখে কখনও পড়েনি নিউ ইয়র্ক সাবওয়ে। জল বের করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে ১৪ দিন সময় লাগতে পারে।
১৯৬০ সালে হারিকেন ডোনার ১০ ফুট জলোচ্ছ্বাসের রেকর্ড ভেঙে আজ সকালে প্রায় ১৪ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসকে সঙ্গী করে স্যান্ডি ঢুকে পড়ে ম্যানহাটনের নিচু এলাকায়। স্যান্ডির হানাকে ইতিমধ্যেই প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ‘বিশাল বিপর্যয়’ বলে ঘোষণা করেছেন।
স্যান্ডির তাণ্ডবে কাগজের মতো দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে জাতীয় সড়ক।
নর্থ ক্যারোলাইনায় মিরলো সমুদ্রসৈকতের কাছে।
এ দিন স্যান্ডির দাপটে প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি অন্ধকারেও ডুবে গিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৩টি রাজ্য। নিউ ইয়র্ক হাসপাতালের জেনারেটরও কাজ করছে না, হাসপাতাল চত্বর ১০ ফুট জলের তলায়। প্রায় ২০০ রোগী এবং কর্মীদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জল বাড়ার কারণে দেশের সব থেকে পুরনো নিউ জার্সির অয়েস্টার ক্রিক-সহ দু’টো পরমাণু কেন্দ্রও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
স্যান্ডির ঘন মেঘ আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র থেকেও দেখতে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস।
আবহবিদদের মতে, স্যান্ডি তার চরিত্র বদল করে ফেলেছে। হারিকেন সাধারণত সমুদ্র থেকে শক্তি সংগ্রহ করে, কিন্তু উপকূলে এলেই সে তার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কিন্তু স্যান্ডির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সে শুধু সমুদ্র থেকেই নয়, আশপাশের বায়ুমণ্ডল থেকেও শক্তি সংগ্রহ করে পরিণত হয়েছে সুপার-সাইক্লোনে। আর সে কারণেই উপকূলে এসেও তার তীব্রতা কমেনি এতটুকু।
তবে স্থলে এসে কিছুটা হলেও দাপট কমেছে স্যান্ডির। প্রাথমিক দাপটের পর সে এখন অনেকটাই নিস্তেজ। কিন্তু দেশের পূর্ব ভাগের আবহাওয়া আগের মতো হতে এখনও অনেকটাই সময় লাগবে।
স্যান্ডির আতঙ্কে সোমবার এবং মঙ্গলবারে যাবতীয় অফিস-কাছারি, স্কুল বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেছিল নিউ ইয়র্ক থেকে শুরু করে ওয়াশিংটন প্রশাসন পর্যন্ত। এই দু’দিন বন্ধ ছিল ওয়াল স্ট্রিটও।

ছবি: এপি



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.