সরু রাস্তা অথবা নদীপথ। গ্রামে ঢোকার জন্য এ ছাড়া অন্য উপায় নেই। তাই আগুন লাগলে গ্রামে পৌঁছতেই পারে না দমকল। বড় অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রে কালনা মহকুমার এমন সব এলাকার চেহারা কতটা অসহায় হতে পারে, সম্প্রতি তা দেখা গিয়েছে কালীনগর গ্রামে। কী ভাবে এই সমস্যা দূর করা যায়, জানা নেই প্রশাসনেরও।
কালনা ১ ব্লকের কালীনগর, নতুনচর, কলডাঙা গ্রামে ঢুকতে হয় ভাগীরথী পেরিয়ে। ঘুঘুডাঙা গ্রামে যেতে পেরোতে হয় গুরজোয়ানি নদী। প্রতি দিন নদী পেরিয়ে দোকানহাট, বাজার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পঞ্চায়েত অফিসে যাতায়াত করেন বাসিন্দারা। এই চারটি গ্রামের বাসিন্দাই পেশা চাষবাস অথবা খেতমজুরি। কাছাকাছি এলাকায় পর্যাপ্ত জল মেলায় অনেক জমিতে পাট চাষও হয়। ভাল দাম পাওয়ার আশায় অনেকেই শুকনো পাট অনেক দিন পর্যন্ত বাড়িতে রেখে দেন। পাটকাঠি ব্যবহার করেন জ্বালানি হিসেবে। আগুন লাগলে তাই সহজে ছড়িয়ে পড়ে আগুন।
সম্প্রতি কালীনগর গ্রামের মল্লিকপাড়ায় একটি বাড়ির রান্নাঘরে আগুন লাগে। মাত্র সাতাশ মিনিটের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা গ্রামে। পুড়ে ছাই হয়ে যায় ৫৫টি বাড়ি। আচমকা ঘর হারিয়ে সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়েন বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, বাড়িতে বাড়িতে পাটকাঠি মজুত থাকায় নিমেষেই আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা পাড়ায়। সেই কারণে পরেও তেমন দুর্ঘটনার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বাসিন্দারা। |
অগ্নিকাণ্ডের সম্ভাবনা থাকলেও এই চারটি গ্রামে দমকল ঢোকা মুশকিল। নান্দাই পঞ্চায়েতের ঘুঘুডাঙা গ্রামের পাশ দিয়ে গিয়েছে ইন্দিরা গাঁধী জাতীয় সড়ক যোজনায় গড়া রাস্তা। এক মাত্র সেই রাস্তা দিয়ে ঘুরপথে গ্রামের মুখ অবধি পৌঁছতে পারবে দমকল। গ্রামের সরু রাস্তা দিয়ে ভিতরে ঢোকার কোনও উপায় নেই। তাই আগুন নেভাতে ভরসা গ্রামবাসীরাই। এই পঞ্চায়েত সূত্রেই জানা গিয়েছে, পাশাপাশি হাতিপোতা, মির্জাপুর-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের সরু রাস্তায় দমকল ঢোকা অসম্ভব। এলাকার এমন পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে নিয়ে পঞ্চায়েত প্রধান ইদের আলি মোল্লা বলেন, “এলাকার বহু গ্রামের রাস্তাই সরু। তাই ভিতরে দমকল পৌঁছনো দুষ্কর। অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রে গ্রামবাসীরা নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে ফের কালীনগরের মতো পরিস্থিতি হতে পারে।”
ঘুঘুডাঙা গ্রামে দমকল কিছুটা এগোতে পারলেও ভাগীরথীর তীরে বাকি তিনটি গ্রামের অবস্থা আরও খারাপ। আগুন লাগলে এই তিনটি গ্রামের বাসিন্দাদের খবর দিতে হয় সাত-আট কিলোমিটার দূরে নদিয়ার শান্তিপুরের দমকল কেন্দ্রে। তবে সরু রাস্তার কারণে এই গ্রামগুলিতে দমকলের গাড়ি ঢোক দুষ্কর। কালীনগরে আগুন নেভাতে চার কিলোমিটার আগেই আটকে পড়ে শান্তিপুর থেকে আসা দমকলের গাড়ি। গ্রামের বাসিন্দা স্বপন আলি, আনসার আলি শেখের বক্তব্য, “নদিয়ার গয়েসপুর পর্যন্ত সংযোগকারী একটি মোরাম দেওয়া চার কিলোমিটার রাস্তা থাকলে ঘটনার দিন হয়তো দমকলবাহিনী এসে ঢুকতে পারত গ্রামে।” তাঁদের দাবি, গ্রামের সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তাগুলি তৈরি না হলে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। পাশাপাশি, ভাগীরথী লাগোয়া তিন গ্রামের বাসিন্দারা জানান, নদিয়া পর্যন্ত রাস্তা চওড়া হলে যাতায়াতের সুবিধার পাশাপাশি কৃষিজ পণ্য নিয়ে বাজারে বিক্রি করতে যেতেও পারবেন তাঁরা।
দমকলের কালনা শাখার ওসি অরিন্দম দেবনাথ বলেন, “নদী পেরিয়ে আমাদের পক্ষে গ্রামগুলিতে যাওয়া সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে গ্রামগুলির ভরসা সংলগ্ন জেলার দমকল কেন্দ্র। তবে রাস্তা সরু থাকায় সেখানেও দমকলের পৌঁছনো দুষ্কর।” তাঁর দাবি, কালীনগরের মতো গ্রামগুলির ঘিঞ্জি দশার জন্য আগুন ছড়ানোর আশঙ্কা আরও বেশি।” এ ব্যাপারে শিবির করে গ্রামগুলিকে সচেতন করা হয় বলেও জানান তিনি। কালনা ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শান্তি চালের আশ্বাস, “গ্রামগুলিকে আগুনের বিপদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য জেলা প্রশাসনের বৈঠকে রাস্তা চওড়া করার আবেদন করব।” |