শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের দেড় বছর পর বাড়ি ফিরলেন এক ব্যাক্তি। রবিবার ঘটনাটি ঘটে কোচবিহার শহর লাগোয়া গুড়িয়াহাটি-১পঞ্চায়েতে ছিটখড়িমালা এলাকায়। পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তির নাম নিমাই রাম। বয়স প্রায় চল্লিশ। ৬ বছর আগে স্ত্রী রত্না দেবী ও দুই মেয়েকে ফেলে পাশের গ্রামের এক তরুণীকে বিয়ে করে বাড়ি ছেড়ে পালান পেশায় রিকশা চালক নিমাইবাবু। অসমের বঙ্গাইগাঁও এলাকায় তিনি থাকতে শুরু করেন। নতুন স্ত্রীর সঙ্গে ভাড়া বাড়িতে সংসার বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ভেঙে যায়। তরুণী ফিরে আসেন বাড়িতে। নিমাইবাবুর প্রথম স্ত্রী রত্না দেবীও সন্তানদের নিয়ে ছাগলবেড় এলাকায় বাবার বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে নিমাইবাবু ঘরে ফিরে আসার ঝুঁকি নিতে পারেননি। লোকমারফত বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। বছর দুই ওই যোগাযোগও বন্ধ হয়ে যায়। তার মধ্যেই দ্বিতীয় স্ত্রীর আত্মীয়ের মাধ্যমে নিমাইবাবুর বাড়ির লোকেরা খবর পান অসুস্থ হয়ে অসমেই মারা গিয়েছে নিমাই। ছবিতে মালা ঝুলিয়ে, ধূপকাঠি জ্বেলে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে আত্মীয়রা তাঁকে শ্রদ্ধাও জানান। সেই ‘মৃত’ ছেলে এদিন দুপুরে হাজির হন বাড়িতে। যাকে দেখে প্রথমে পাড়ার লোকেরা তো বটেই, চিনতে পারেননি মা যামিনীদেবীও। ‘মৃত’ নিমাই বাড়ি ফিরেছে চাউর হতেই মুহূর্তে ভিড় জমে যায় রাম পরিবারের ছোট্ট ঘরের দাওয়ায়। |
নিমাইবাবুর মা যামিনীদেবী এই দিন বলেন, “দেড় বছর আগে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করার পর অনেক কেঁদেছিলাম। সেই ছেলে এ ভাবে ফিরে আসবে ভাবতে পারছি না। আজ ওঁকে প্রথমে দেখে ঠিকঠাক চিনতে পারছিলাম না। পরে মা বলে ডাকতেই সংশয় ভুলে নিশ্চিত হই, এ যে আমার নিমাই।” নিমাইবাবুর বৌদি শিখা রাম বলেন, “দারুণ আনন্দ হচ্ছে। নিমাই আবার নতুন করে জীবন শুরু করুক।” আর যাকে নিয়ে এই এলাকায় এত কাণ্ড, সেই নিমাইবাবু আপাতত অনুশোচনায় ডুবে। নিমাইবাবুর কথায়, “এক জনের জন্য সাজানো সংসার ছেড়ে আর এক জনকে নিয়ে পালালাম। পরে সেও চলে যাওয়ায় ভেবেছিলাম আর বাড়ি ফিরব না। ফেরিওয়ালার কাজ করে বঙ্গাইগাঁওয়ে ছিলাম। বছর খানেক ধরে অসুস্থ হয়ে পড়ি। নিরুপায় হয়ে এলাকার লোকদের জানালে তাঁরাই কোচবিহারের ট্রেনে তুলে দেন। আমি ভুল শুধরে নতুন করে শুরু করতে চাই।” ইতিমধ্যে খবর পাঠানো হয়েছে প্রথম স্ত্রীর বাবার বাড়িতে। যদিও রাত পর্যন্ত কেউ খোঁজ নিতে আসেননি। এলাকার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ঘটনার কথা শুনেছেন। তিনি বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। মায়ের কোলে ছেলে ফিরেছে এর থেকে ভাল খবর কী হতে পারে।” |