দেশজুড়ে যখন অসুরদলনী দেবী দুর্গার আরাধনা হল, সেই সময় কাশীপুরের ভালাগোড়া গ্রাম দেখল অন্য পুজো। দেবী দুর্গা নয়, নবমীর দিন এখানে বীর যোদ্ধার সম্মানে হুদুড় দুর্গার (মহিষাসুর) বন্দনা করা হল। অসুরকে তাঁদের বীর পূর্বপুরুষ হিসেবে স্মরণ করলেন খেরোয়াল সম্প্রদায়ের আদিবাসীরা।
পরনে খাটো ধুতি। মাথায় বাঁধা কাপড়। হাতে তির-ধনুক। আদিবাসী যুবকের পেটানো চেহারা। হুদুড় দুর্গার এমনই মূর্তি গড়ে প্রণাম জানালেন তাঁরা। |
এই জেলা তো বটেই, এক দিনের এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দূর দূর থেকেও অনেকে এসেছিলেন। উদ্যোক্তা শিকার দিশম খেরওয়াল বীর লাকচার কমিটির সম্পাদক অজিতপ্রসাদ হেমব্রম বলেন, “হুদুড় শব্দের বাংলা অর্থ বীর। আমাদের অর্থাৎ আদিবাসীদের বিশ্বাস, সেই সময় মহিষাসুর অনার্যদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বীর ছিলেন। দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে অন্যায় ভাবে নবমীর দিন পরাজিত করেছিলেন। তাই এই দিনটিকেই আমরা শহিদ দিবস পালনের জন্য বেছে নিয়েছি।”
অজিতবাবুরা জানান, ওই যুদ্ধে পরাজয়ের পর আর্যরা খেরোয়ালদের হত্যা করছিল। তাঁদের হাত থেকে বাঁচতে খেরোয়ালরা নারীর ছদ্মবেশে জঙ্গলে পালিয়ে যায়। দাশাঁই নাচেও সেই ঘটনার প্রভাব রয়েছে। জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকায় দুর্গাপুজোর সময় আদিবাসী পুরুষরা নারীর ছদ্মবেশে দাশাঁই নাচেন। নাচের সময় হায়রে হায়রে ধ্বনি দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা সুবোধ মুর্মু বলেন, “আমরা মহিষাসুরের যুদ্ধংদেহি মূর্তি তৈরি করে স্মরণসভার আয়োজন করেছিলাম। যাঁরা এখনও নিজেদের নামের সঙ্গে ‘অসুর’ পদবি উল্লেখ করেন, তাঁদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়।” |